|
|
|
|
কর্মীদের মামলার স্রোত |
কর্তাদের বেতন আটকে পেনশন সিটিসিতেও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার পরে কলকাতা ট্রাম কোম্পানি। অবসর নেওয়া কর্মীদের পেনশন এবং অন্যান্য প্রাপ্য মেটানোর জন্য এক সপ্তাহে দু’টি সরকারি পরিবহণ সংস্থাতেই কর্তাদের বেতন ও ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবং দু’টি ক্ষেত্রেই বিচারপতি এক জন, দেবাশিস করগুপ্ত। তাঁর এই নির্দেশের পরে প্রাপ্য চেয়ে বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগমের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দায়ের করা মামলার সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
অন্যান্য পরিবহণ সংস্থার মতো কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রাপ্য পাচ্ছেন না বলে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। সেই মামলার সূত্রেই শুক্রবার আদালত নির্দেশ দেয়, কলকাতা ট্রাম কোম্পানির চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন-সহ পরিচালন মণ্ডলীর সদস্য এবং অন্য পদস্থ কর্তাদের বেতন বন্ধ করে দিতে হবে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট একই রায় দিয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের অবসরকালীন প্রাপ্য আদায়ের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত সিএসটিসি-র চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের সদস্য এবং অন্য পদস্থ কর্তাদের বেতন আটকে দিতে বলেন। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেন, কর্তাদের মাইনের টাকা থেকেই অবসরপ্রাপ্ত আবেদনকারীদের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যের পরিবহণ সচিবকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই রায় রূপায়ণের নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের সেই নির্দেশ জানার পরে বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ ট্রাম কোম্পানির কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শুক্রবার হাইকোর্টে মামলা করেন। আবেদনকারীদের অভিযোগ, তাঁরা অবসরকালীন প্রাপ্য পাচ্ছেন না। সিটিসি-র পক্ষে সরকারি আইনজীবী জানান, ট্রাম কোম্পানির সদর দফতরের সামনে আন্দোলন চলছে। তাই তিনি কোম্পানির সিদ্ধান্ত জানতে পারছেন না। বিচারপতি ট্রাম কোম্পানির আইনজীবীকে জানিয়ে দেন, তিনি সিএসটিসি-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মামলায় যে-রায় দিয়েছিলেন, এই মামলাতেও তা-ই দেবেন। তাই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্যের বিষয়ে তারা কী করতে চায়, সেই ব্যাপারে ট্রাম কোম্পানিকে এ দিনই তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। বিচারপতি মনে করিয়ে দেন, চেয়ারম্যান, পরিচালন কমিটির সদস্যদের বেতন ও ভাতা নেওয়া হয়ে গেলে এই রায় নিষ্ফল হয়ে যাবে। সিএসটিসি-র ক্ষেত্রে রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি বলেছিলেন, এক জন কর্মী দীর্ঘ ৬০ বছর কাজ করার পরে অবসর নিয়ে খেতে পাবেন না, এটা হতে পারে না। তিনি খেতে পাচ্ছেন না, এটা জেনে আদালতও চুপ করে থাকতে পারে না। আবার মামলার ফয়সালা করে আদালত চূড়ান্ত রায় না-দেওয়া পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রাপ্য না-পেয়ে অভুক্ত থাকবেন, সেটাও হতে পারে না। এ দিন বিচারপতির নির্দেশের পরে সিটিসি-র তরফে জোর তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। বেলা ৩টেয় পুনরায় মামলাটির শুনানি শুরু হয়। কিন্তু ট্রাম কোম্পানি কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। বিচারপতি করগুপ্ত তখন জানিয়ে দেন, কলকাতা ট্রাম কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালন সমিতির সদস্য এবং অন্য পদস্থ কর্তাদের বেতন, ভাতা বা সাম্মানিক আপাতত দেওয়া যাবে না। তাঁদের মাইনের টাকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে। |
|
|
|
|
|