ভর-দুপুরে বাজারের মধ্যে বোমাবাজিতে আতঙ্ক ছড়াল বনগাঁয়। এর প্রতিবাদে এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা ঘণ্টা দুয়েক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরের চাঁপাবেড়িয়া বাজারে। বনগাঁ থানার আইসি বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও অবরোধ তুলতে পারেননি। পরে ঘটনাস্থলে যান বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের আশ্বাস পেয়ে শেষ পর্যন্ত অবরোধ তুলে নেয় জনতা। জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “চাঁপাবেড়িয়ায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁপাবেড়িয়া বাজারে মুদিখানার দোকান রয়েছে দীপক দাস নামে এক ব্যবসায়ীর। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী তাঁর কাছে বাকিতে মালপত্র চেয়েছিল। সেইসঙ্গে বেশ কিছু নদগ টাকাও দাবি করে। কিন্তু দীপকবাবু তা দিতে অস্বীকার করেন। এ দিন দুপুরে দীপকবাবু দোকান বন্ধ করে পাশেই বাড়িতে খেতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ছোট্ট মুদির দোকান। বাকিতে মালপত্র দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ওদের না বলে দিয়েছিলাম। এদিন দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার সময় বোমা ফাটার আওয়াজ পাই। পরে বাজারে গিয়ে দেখি আমার দোকানেই বোমা মারা হয়েছে। বোমার আঘাতে দোকানের শাটারের ক্ষতি হয়েছে।” ওই ঘটনার পরে এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিকেল ৪টে থেকে বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী সকলেই নেমে পড়েন রাস্তা অবরোধে। কাঠের গুঁড়ি ফেলে আটকে দেওয়া হয় যান চলাচল। যানজটে আটকে পড়ে বহু গাড়ি। পরে পুলিশ এবং বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়কের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়।
এদিকে এই ঘটনার পরে ফের শহরের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই চাঁপাবেড়িয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলছে। অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ। মাঝেমধ্যেই এলাকায় বোমাবাজি, গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। রাত ৯টার পরে মানুষ বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। শুধু এলাকর নয়, বাইরে থেকেও দুষ্কৃতীদের আনাগোনা চলে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুলিশি নিষ্ক্রিতায় কিছু ব্যবসায়ীকে বাধ্য হয়েই ‘তোলা’ দিতে হচ্ছে। দোকানদারদের অভিযোগ, বাকিতে মালপত্র দিলেও পয়সা পান না তাঁরা। কিছুদিন আগে দুষ্কৃতীদের গুলিতে পথচারী এক যুবক গুরুতর জখম হন।
এ দিন বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “ডিজি এবং জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা ২৪ গণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন।”
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় দু’টি দুষ্কৃতী দল রয়েছে। তবে এ দিনের ঘটনার পিছনে তৃতীয় কোনও দুষ্কৃতী দলের হাত রয়েছে বলে তাদের অনুমান। |