জি ডি বিড়লা সভাঘরে দু’দিনের অনুষ্ঠানে ৬০টি একক গানের শিল্পী ছিলেন রাহুল মিত্র। আয়োজক-‘উৎসাহ-উদ্ভাস’। পূজা ও প্রেম পর্যায় থেকে যে গানগুলি তিনি নির্বাচন করেছিলেন, তা থেকে প্রকৃত সার্থক হয় অনুষ্ঠানের শীর্ষনাম ‘মর্মছায়া’। তিনি দু’দিনের অনুষ্ঠানকে বিভাজন করেছিলেন যথাক্রমে ‘ছায়ার গান’ ও ‘আলোছায়ার গান’ শিরোনামে। ভিন্ন ভিন্ন গান অথচ তারা একই অর্থ বহন করে। এই বিষয়টির প্রতি বহু রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ইতিপূর্বেই আলোকপাত করেছেন। রাহুলের অনুপ্রেরণা হয়তো তাঁরাই। কিন্তু মঞ্চে এই বিষয়-ভাবনার বাস্তব রূপায়ণ প্রথম বলেই পরিকল্পনার দিক থেকে অবশ্যই তা অভিনব। সংকলন ও বিন্যাসে শিল্পীর নিজস্ব ভাবনাই প্রাধান্য পেয়েছে।
৬০টি গানের পরিবেশন একই রকম রাখা সম্ভব নয়। প্রথম দিনে অধিকাংশ গানেই তালবাদ্য রূপে খোলের ব্যবহার ছিল। ‘হেরি অহরহ তোমারি বিরহ’ গানটি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। তেমনই দ্বিতীয় দিনে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে’ গানটিতে পাখোয়াজকে তালবাদ্যে সঙ্গী করে গানটিকে চেনা ছকের বাইরে নিয়ে যান। এই প্রসঙ্গেই বলা যায়, সঙ্গীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে তিনি যেমন সাবধানী পথিক তেমনই প্রথাগত যন্ত্র ব্যবহারের অনুশাসনের মধ্যেই থাকতে ভালবাসেন। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রগানের রূপ আর স্বভাবের দিক থেকে যন্ত্রানুষঙ্গ নিয়ে যদি সার্থক ভাবে বর্তমান প্রজন্মরা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেন তবে আর অচলায়তনের প্রাচীর ভাঙবে কী করে? ইতিপূর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীতে অন্যান্য যন্ত্রের সার্থক প্রয়োগ আমাদের জানা আছে।
প্রথম দিন ভাব, সুর, তাল সব কিছু এক হয়ে যে গানগুলিকে গভীরে নিয়ে যায় সেগুলি হল ‘পথ চেয়ে যে’, ‘আমি জ্বালব না’, ‘জ্বলেনি আলো’, ‘চোখের জলের লাগল জোয়ার’, ‘মম দুঃখের সাধন’, ‘দিন যায় রে’ ও ‘কী রাগিণী বাজালে’। দ্বিতীয় দিনে তিনি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। সব গানের মেজাজ হয়তো এক রকম হয়নি, কিন্তু সুরের মেজাজ ছিল অটুট। এই দিনে বিশেষ দু’টি গান শুনিয়েছেন ‘কী ধ্বনি বাজে’ ও ‘দিন ফুরালো হে’। এ ছাড়াও মুগ্ধ করেছেন যে গান শুনিয়ে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘জাগে নাথ জ্যোৎস্না রাতে’, ‘এখন আমার সময় হল’, ‘আমার নয়ন’, ‘ও আমার ধ্যানেরই ধন’, ‘তুমি এপার ওপার করো’, ‘তুমি ছেড়েছিলে’ প্রভৃতি।
|
সুরেলা পরিবেশনা
আশিস চট্টোপাধ্যায় |
ভারতীয় ভাষা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে অনুভব আনন্দমের নিরীক্ষামূলক সার্ধশতবার্ষিকী রবিপ্রণামে ভাষ্য, গান, সেতারবাদন ও নৃত্যের সমন্বয়ে নিবেদিত হল একটি অনবদ্য প্রযোজনা ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’। ভাবনা, গবেষণা, ভাষ্য রচনা, পরিচালনা ও সেতারবাদনে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী। সমবেত কণ্ঠে ও একক গায়নে শোনা গেল ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’, ‘আজি বিজন ঘরে’, ‘শাওন গানে’ ইত্যাদি দশটি রাগাশ্রিত রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রতি গানের আগে দেবাশিস বসু ও পারমিতা সমাদ্দারের সুললিত তথ্যবহুল সংযমী ভাষ্যপাঠে নির্দেশিত হল নির্দিষ্ট রাগসমূহ এবং সেই সব রাগে আধারিত গানগুলি। তবলায় পরিমল চক্রবর্তীর শ্রুতিসুখকর সঙ্গতে কাফি, ইমন কল্যাণ, বেহাগ, ছায়ানট প্রভৃতি রাগের পরিবেশনায় ছিল ধ্রুবজ্যোতির সেতারের সুরেলা বিচরণ। গানে মঞ্জুষা চক্রবর্তী, তানিয়া পাল, জয়দীপ রায় ও বিশ্বরূপ গোস্বামী উল্লেখযোগ্য। অনুষ্ঠান মঞ্চের সীমিত প্রস্থের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রতিটি গানের সঙ্গে উপাসনা ব্যালে ট্রুপের নৃত্য উপস্থাপনা অনবদ্য। শব্দ সংযোজনায় বিশ্বজিৎ প্রসাদ এবং আলো ও মঞ্চ বিন্যাসে অসীম গুপ্ত যথাযথ। |