মুখোমুখি ২...
লোকে আমায় দেখে ভিড় করুক, চাই না

পত্রিকা: অবশেষে বিগ লিগে ঢুকে পড়লেন...

রূপঙ্কর: বিগ লিগ কাকে বলে বলুন তো! যদি এটা ‘২২শে শ্রাবণ’কে কেন্দ্র করে বলা হয়, তা হলে বলব, এমন বড় ব্যানারের ছবি; ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আছে, প্রসেনজিৎ আছেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায় আছেন, অনুপম রায় আছেনএই নামগুলোই তো বিগ! এঁরা যে লিগে থাকেন, সেটাই যদি বিগ লিগ হয়, তা হলে আমি এঁদের সঙ্গে কাজ করেছি। অতএব বিগ লিগ-এ এলাম। আর যদি বলেন যে, আমি যবে থেকে গান বাজনা শুরু করেছি, তবে থেকে ‘রুবি রায়’, ‘ভোকাট্টা’, ‘বৌদিমণি’, ‘প্রিয়তমা’র মতো গানগুলো খুব বিগ হিটতা হলে তো বিগ লিগে আগেই এসে গেছি। আর সেই গানগুলো যদি বিগ না হয়ে থাকে, তা হলে ‘২২শে শ্রাবণ’-এর সৌজন্যেই বিগ লিগে এলাম। আসলে আপনার প্রশ্নটা খুব প্যাঁচালো।

পত্রিকা: বলতে চাইছি, এত দিন তো অ্যালবাম, এফএম চ্যানেল, মঞ্চে আপনার গান শোনা যেত। এ বার আপনি কলার টিউন, রিং টোনে। কলকাতায় কাউকে ফোন করলেই ‘গভীরে যাও’। এটাই তো সাফল্যের বিগ লিগ। তাই না?
রূপঙ্কর: ও-ও হ্যাঁ! তা হলে তো সত্যি আমি এত দিনে বিগ লিগে এলাম। ‘গভীরে যাও’ একটা বড় ব্রেক আমার কাছে। আর তা ছাড়া যে সিনেমায় প্রসেনজিৎ আছেন, সেটায় গান করা এবং ‘২২শে শ্রাবণ’-এ ও রকম একটা সিচুয়েশনে গানটা ব্যবহার হওয়াএটা বিশাল ‘বিগ’ ব্যাপার। এর জন্য সৃজিত আর অনুপমকে ধন্যবাদ। ওরা যে গানটা আমাকে দিয়ে গাইয়েছে সেটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া।
তবে বিগ লিগে এলেই তো হল না। বিগ লিগে থাকা দীর্ঘস্থায়ী করাটাই আসল। সেটা কতটা করতে পারি দেখি।


পত্রিকা: ‘গভীরে যাও’-এর পর মহিলা ফ্যানের সংখ্যা বাড়ছে নিশ্চয়ই?
রূপঙ্কর: মহিলা ফ্যানের সংখ্যা আপনাদের সকলের কৃপায় আমার চিরকালই অনেক। তবে এটাও মেনে নিতে হবে যে, মহিলা ফ্যানের সংখ্যা ‘গভীরে যাও’-এর পরে বেড়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি, উদ্যোক্তারা বলেন, “আপনার হেব্বি ক্রেজ মশাই। আমার বৌ আপনার বিশাল ভক্ত। বাড়ির বৌদিরা, ওর বৌ, এর বৌ, ওর মেয়ে, আপনাকে খুব পছন্দ করে।” আমি বুঝি, এই সব পুরুষমানুষদের খুব একটা পছন্দ নয় আমাকে, কিন্তু মহিলা মহলের চাপে এবং চাহিদাতেই আমাকে ডাকতে বাধ্য হয়েছেন। তাই মহিলা ফ্যান যত বাড়বে, ততই ভাল।
ছবি: কৌশিক সরকার
পত্রিকা: মহিলা ফ্যানেরা প্রেম নিবেদন করেন?
রূপঙ্কর: আরে ধুর! ওই ব্যাপারটা এসএমএস আর ফোনাফুনিতেই আটকে রাখি। ওঁদের আমি বলেই দিই, “আমার সঙ্গে এ ভাবে যোগাযোগ রাখাই ভাল। সামনে এসে কথা বললে, পাঁচ মিনিটে মোহভঙ্গ হবে। হয়েওছে আগে। তার কারণ, আমি নিজে একদম ইন্টারেস্টিং নই। অত্যন্ত সাধারণ। আমার গানকে ভালবাসুন। কিন্তু মানুষ আমি-র সঙ্গে এই দূরত্বই ভাল।

পত্রিকা: এটা তো বিনয় হয়ে গেল। লোকে বলছে, ক্রমবর্ধমান মহিলা ফ্যানেদের ইমপ্রেস করতে লুক পাল্টেছেন, রোগা হয়েছেন। চুলে জেল দিচ্ছেন...
রূপঙ্কর: (প্রচণ্ড হাসি) হ্যাঁ, বেশ রোগা হয়েছি বটে। তবে কাউকে ইমপ্রেস করতে না। এর পেছনে একটা গল্প আছে। বছর খানেক আগে টিভি-তে একটা শো হচ্ছিল। আমি বসেছিলাম। ক্যামেরা সাইড থেকে আমাকে দেখাচ্ছিল। দেখলাম, আমাকে খুব খারাপ দেখাচ্ছে, ভুঁড়ি হয়েছে। জামাকাপড়গুলো ক্যারি করতে পারছি না। ব্যস! তার পরেই বাড়িতে একটা ট্রেডমিল কিনে শুরু করে দিলাম। কারণ, আমি চাই নিজেকে আয়নায় দেখতে আমার ভাল লাগুক। তাতে যদি মহিলাদের আমাকে বেশি ভাল লাগে, আপত্তি নেই।

পত্রিকা: তার মানে আপনি যাতে হাত দিচ্ছেন, তা-ই সোনা?
রূপঙ্কর: শুনি কেন?

পত্রিকা: কেন না, অলরেডি বাজারে খবর, শান্তনু মৈত্রের সুরে ‘অপরাজিতা তুমি’তে একটা গান এত ভাল গেয়েছেন যে, সেটাও বাম্পার হিট হতে চলেছে।
রূপঙ্কর: বাবা, তাই নাকি! তা হলে তো ভালই। (লাজুক হাসি) সত্যিই এটা জানতাম না। তবে এখানেও কৃতিত্বটা অন্যদের। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী আর শান্তনুদাকে ধন্যবাদ জানাব। শান্তনুদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাই অন্য রকম। মানুষটা জিনিয়াস। যে গানটার কথা বলছেন, সে গানটা সত্যি খুব ভাল।

পত্রিকা: কী মনে হচ্ছে, জীবনটা সত্যি পাল্টে গেল তা হলে?
রূপঙ্কর: অবাক লাগে এখন ভাবতে, জানেন? বৌভাতের দিন শ্যামনগরে প্রোগ্রাম পেয়েছিলাম। সব বাদ দিয়ে সেটা থেকে হাজার ছ’য়েক টাকা পাব দেখলাম। আমাদের হনিমুন করার পয়সা ছিল না। মনে হল, ওই টাকায় ফাটিয়ে হনিমুন করব। আমার স্ত্রী চৈতালিও এই বৌভাতের পোশাকেই শ্যামনগরে গেল আমার সঙ্গে। সেই টাকায় চাঁদিপুরে হনিমুন। এই ছিল আমাদের জীবন।

পত্রিকা: আর এখন শ্যামবাজারের দু’-কামরার ভাড়া বাড়ি থেকে টালা পার্কের আলিশান অ্যাপার্টমেন্ট...
রূপঙ্কর: তার আগে সিঁথিতে একটা ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল চৈতালির জোরাজুরিতে। তখন শিফ্ট করি শ্যামবাজার থেকে। আমি খুব ভিতু। যেমন আছি, তেমন সাদামাঠা ভাবে থাকতেই ভালবাসি। কিন্তু চৈতালি বলল, না। নিজেদের মাথা গোঁজার জায়গা দরকার। তার পরে একদিন আবার ও-ই বলল যে এ বার একটু বড় ফ্ল্যাটে থাকা যেতে পারে। তখন টালা পার্কের এই অ্যাপার্টমেন্ট।

পত্রিকা: শুধু ফ্ল্যাট কেন? গাড়িও তো...
রূপঙ্কর: প্রথম গাড়িটা টাটা সুমো, ২০০১ সালে। মারাত্মক আনন্দ হয়েছিল। আবার ভয়ও। কী দরকার নিজের গাড়ির? ভাড়ার গাড়িই তো ভাল। চৈতালি বলল, না কিনতে হবে। বড় গাড়ির ঝামেলা বলে পরে ওয়াগন-আর। আর এখন মারুতি সুইফ্ট। ছোটবেলায় ভাবতাম, স্বপ্ন দেখতে দেখতেই দিন কেটে যাবে। আর আজ সেই সব কিছুই বাস্তব।

পত্রিকা: এত সাফল্যের পরেও নাকি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না বেশি?
রূপঙ্কর: তা ঠিক। আমি মানুষটা অদ্ভুত। আমেরিকায় বাল্টিমোরে বঙ্গ সম্মেলনে দু’দিন শো ছিল। তার বাইরে আমি হোটেলের ঘর থেকেই বেরোইনি। কাছের মানুষ, পরিবারকে নিয়ে থাকতে ভালবাসি। তারা সঙ্গে ছিল না। তাই কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনি। আমি পাড়ার মোড়ে ফুচকা খেয়ে, রিকশা করে ঘুরে, মেয়ে-বৌয়ের সঙ্গে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে, আশুবাবুর বাজারে চুটিয়ে বাজার করে দিব্যি বেঁচে আছি। লোকজন আমাকে দেখে রাস্তায় ভিড় করুক, এ আমি চাই না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.