|
|
|
|
জলবিভাজিকা প্রকল্প নিয়ে উদ্যোগী জেলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোনও বছর অনাবৃষ্টি-খরা। কোনও বছর আবার অতিবৃষ্টি-বন্যা। কোনও পরিস্থিতিই অনুকূল নয়। বিশেষত পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো প্রকৃতি-নির্ভর এক বার চাষের জেলায়। যেখানে সেচ-সেবিত জমির পরিমাণ খুবই কম। তেমন শিল্পও নেই। সব মিলিয়েই ‘পিছিয়ে পড়া’র তকমা। আর এই অনুন্নয়নই অশান্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করে প্রশাসনও।
এই অবস্থা বদলাতে এবং জেলার, বিশেষত মাওবাদী-প্রভাবিত জঙ্গলমহলের, সার্বিক উন্নয়নে ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’ (সুসংহত জল-বিভাজিকা প্রকল্প)-এর উপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ সম্প্রতি জেলা সফরে এসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেন। তখনই এই প্রকল্পে জোর দিতে প্রশাসনিক কর্তাদের পরামর্শ দেন। প্রকল্পে অর্থের জোগান নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়ে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন পাঁচটি ‘ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর পরিকল্পনা-রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়েছে রাজ্যের কাছে। জেলা ভূমি-সংরক্ষণ ও কৃষি-বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রশাসন) সুকুমার কিস্কু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি জায়গা চিহ্নিত করে পরিকল্পনা রিপোর্ট রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। তা মঞ্জুর হলেই কাজ শুরু হবে।”
মাওবাদী প্রভাবিত সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, বিনপুর-২, শালবনি ও গড়বেতা— এই পাঁচটি এলাকাই প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এক-একটি ওয়াটারশেডের মধ্যে একাধিক ছোট-ছোট (মাইক্রো) ওয়াটারশেডও থাকবে। প্রশাসন জানিয়েছে, একটি এলাকায় সাধারণত তিন শ্রেণির মানুষের বাস। এক শ্রেণি রয়েছেন যাঁরা চাকরিজীবী বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার বাইরে রয়েছেন কৃষি-নির্ভর মানুষ। আর থাকেন খেটেখাওয়া দিনমজুর। দেখা যায়, যাঁরা বড় চাষি, চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী— তাঁদের অবস্থার উন্নতি হলেও দিনমজুর বা চাষিদের অবস্থা বদলায় খুবই ধীরে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় গরিব আরও গরিব হচ্ছেন।
তাই এলাকায় এমন একটি প্রকল্প তৈরি করতে হবে যেখানে সব মানুষেরই অর্থনৈতিক একটা পরিবর্তন হয়। তা করতে হলে অনেকগুলি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। প্রশাসন জানিয়েছে, একটি এলাকায় কত পরিমাণ জমি রয়েছে, তার মধ্যে কতটা সেচসেবিত, কত পরিমাণ জমিতে কোনও ভাবেই চাষ সম্ভব নয়, সেখানে হয়তো বনসৃজন বা ফলের চাষ করা যেতে পারেসেটা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন মতো সেচের ব্যবস্থা করা হবে। এলাকায় কত মানুষের বসবাস, তাঁদের হাতে কী পরিমাণ জমি রয়েছে— তা দেখে কম জমিতে বেশি ফলনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবস্থা এবং উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা হবে। সেচবাঁধে মাছ চাষ, বাঁধের উপর গাছ লাগানো, তার পর তা স্থানীয় মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিকে প্রযুক্তি, সহায়তা ও পরামর্শ দেবে প্রশাসন।
সাঁকরাইলে এ রকম একটি প্রধান ওয়াটারশেডের মধ্যে ১০টি ছোট ওয়াটারশেড থাকবে। ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৩টি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। ওই এলাকায় ৬৬১৩ হেক্টর জমি থাকলেও প্রাথমিক ভাবে ৫ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমি কাজে লাগানো হবে। যার জন্য সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বিনপুর-২ ব্লকেও একটি প্রধান ওয়াটারশেডের মধ্যে ১০টি ছোট ওয়াটারশেড থাকবে। ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪২টি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। ৭৮৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৭৫০ হেক্টর জমি ব্যবহার করা হবে। শালবনির একটি প্রধান ওয়াটারশেডের মধ্যে দু’টি ছোট ওয়াটারশেড থাকবে। যেখানে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৩টি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। ৫২৩৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমি কাজে লাগানো হবে। |
|
|
|
|
|