|
|
|
|
বৈঠক ভূমিরাজস্ব দফতরের |
অবৈধ খাদানে টানা তল্লাশির সিদ্ধান্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ক্ষেত্রে নিজের হাতে থাকা ভূমি-রাজস্ব দফতরের আমলাদের বিশেষ ভাবে সচেষ্ট হওয়ার জন্য বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে চলতি বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভূমি-দফতর ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য স্থির করেছে। লক্ষ্য-পূরণে কী করা যায়, তা নির্ধারণে শুক্রবার জেলা ভূমি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে সার্কিটহাউসে বৈঠক করলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস। বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজস্ব আদায়ে প্রতিটি আধিকারিককে সচেষ্ট হতে হবে। যদি কেউ সক্রিয় ভাবে কাজ না করতে পারেন, কেন পারছেন না তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। কোন পথে রাজস্ব আদায় করা হবে তার একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে নিজ-গৃহ নিজ-ভূমি প্রকল্প, পাট্টা দেওয়ার কাজেও গতি বাড়াতে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “এটা ঠিক যে দফতরের কর্মী ও অফিসারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তা সত্ত্বেও বলা যায়, সবাই সক্রিয় হলে অনেক কাজই করা যাবে। কারণ, এ বার সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে আমরা একগুচ্ছ পরিকল্পনাও নিয়েছি।” কী রয়েছে সেই পরিকল্পনার মধ্যে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ‘লিজ’ আপাতত স্থগিত রাখা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবর্তে এক বছরের জন্য জমি নিলাম করা হবে। তার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশিকা শীঘ্রই জেলায় পৌঁছবে। সেই নির্দেশিকা না পৌঁছনো পর্যন্তও দীর্ঘমেয়াদি লিজ বন্ধ রাখা হবে। নিয়মিত পাথর ও বালি খাদানে তল্লাশি চালানো হবে। যার দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট মহকুমার মহকুমাশাসক নিজে। বেআইনি খাদান দেখলেই তা বন্ধ করে দিয়ে অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যে সংস্থাকে খাদান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের সিও (ক্যারিং অর্ডার) দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মনীতি কঠোর ভাবে মানতে হবে। এত দিন ‘সিও’ ছাপাতেন সংস্থার মালিকেরই। অফিস থেকে সই ও স্ট্যাম্প দিয়ে ‘সিও’ নিজেদের কাছে রাখতেন। ফলে একটি ‘সিও’-তেই একাধিক গাড়ি বালি-পাথর নিয়ে চলে যেত। এ বার ‘সিও’ ছাপানোর অর্থ সংস্থাকে দিতে হবে, কিন্তু ছাপাবে প্রশাসনই। নির্দিষ্ট দিনে ‘সিও’ নিয়ে যেতে হবে। যে ‘সিও’-তে তারিখ ও সময়ও উল্লেখ থাকবে। তা হলেই অবৈধ কারবার বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে জেলার কোথায় বালি ও পাথর খাদান রয়েছে, তারও একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। যাতে খাদানগুলি বিজ্ঞাপন দিয়ে লিজ দেওয়া যায়।
ইটভাটা থেকে রাজস্ব বাড়াতে মাটি কাটার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। আগে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর এলাকায় এক-একটি ইটভাটা ১ লক্ষ ৮০ হাজার সিএফটি মাটি কেটে তা দিয়ে ইট তৈরি করত। ওই পরিমাণ মাটিরই রাজস্ব পেত সরকার। অভিযোগ, এক-একটি ভাটা ওই পরিমাণ মাটি কাটছে দেখালেও তার থেকে অনেক বেশি মাটি কেটে কাজ করে। ফাঁকি যায় রাজস্ব। যা ধরার তেমন পরিকাঠামোও নেই প্রশাসনের। তাই এ বার মাটি কাটার পরিমাণ বাড়িয়ে ২ লক্ষ ১০ সিএফটি করা হয়েছে। দাঁতনে একটি ভাটা মাত্র ৯০ সিএফটি মাটিতে ইট তৈরি করত বলে এত দিন দেখিয়ে এসেছে। যা প্রায় অবান্তর। সেখানে মাটির পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার সিএফটি করা হয়েছে। ঘাটাল ও ঝাড়গ্রামেও ১ লক্ষ ৬৫ হাজার সিএফটি-র পরিবর্তে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার সিএফটি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এক সিএফটিতে সরকার রাজস্ব পাওয়া যায় ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা।
অন্য দিকে, দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষ রায়তি জমির খাজনা দিচ্ছেন না। গত বছরের পরিসংখ্যান বলছে জেলায় মাত্র ২১ শতাংশ মানষ খাজনা দিয়েছেন। ফলে রাজস্ব এসেছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা। যাতে সবাই খাজনা দেন, তার জন্য প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ন্যূনতম ৫ জন বড় রায়তি জমির মালিককে নোটিস করতে বলা হয়েছে। তার পরেও খাজনা না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিসেম্বর মাস থেকেই শিবির করে খাজনা আদায়ের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। কোথায় কত খাসজমি পড়ে রয়েছে, তাও জানতে বলা হয়েছে। যাতে নিজ-গৃহ নিজ-ভূমি প্রকল্পে মানুষকে জমি ও ভূমিহীনদের পাট্টা দেওয়া যায়। ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যেই এ রকম জমির পরিমাণ কত তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকেই যাতে নিজ-গৃহ নিজ-ভূমি প্রকল্প চালু ও পাট্টা দেওয়ার কাজ শুরু করা যায় সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ভিডিও সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ভূমি দফতরের রাজস্ব আদায় ও অন্য প্রকল্পের উপর জোর দিয়েছিলেন। তার পরই জেলা প্রশাসন শুক্রবার টানা ৪ ঘণ্টা বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। |
|
|
|
|
|