লক্ষ্মণে অনাস্থা দলীয় সম্মেলনে
কেমিক্যাল হাবের জন্য নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়েই রাজনৈতিক জমি হারিয়েছে সিপিএম। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ভরাডুবির শুরু। একে একে লোকসভা, পুরসভা এবং সর্বশেষ বিধানসভা ভোটেও বিপর্যয়ই সঙ্গী হয়েছে বামেদের। মে মাসের নির্বাচনে জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনেই হার মানতে হয়েছে তাদের। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সিপিএম তথা বামেদের একমাত্র ‘শক্তিকেন্দ্র’ হয়ে টিকেছিল হলদিয়া। সেই হলদিয়ার ভোটেও হার হয়েছে। রাজ্যেও বদলে গিয়েছে ক্ষমতার সমীকরণ। সিপিএম তথা বামেরা মহকারণ থেকেই বিতাড়িত। তার পরেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সেই ‘শক্তিকেন্দ্র’ও নড়বড়ে। অবস্থা এমনই যে হলদিয়ায় দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগা শুরু হয়েছে সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্মেলনেও। যা এক কথায় অকল্পনীয়ই।
দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের আস্থা হারানো, জন-বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ আনা হয়েছে এমনকী সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। শিল্পাঞ্চল লাগোয়া মহিষাদল-২ লোকাল কমিটির সদ্য শেষ হওয়া সম্মেলনে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব কার্যত তোপ দেগেছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ, শিল্পাঞ্চলে দলের একদা ‘শেষ-কথা’ সেই লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধেই। নন্দীগ্রাম-পর্বের ‘খলনায়ক’ হিসাবে যাঁকে আগেই চিহ্নিত করেছিল বিরোধীরা। মহিষাদল-২ লোকাল কমিটির সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডাশেঠের বিরুদ্ধেও তোপ দাগা হয়েছে। তমালিকাদেবী কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছিলেন মহিষাদলের বিধায়ক, এখনও তিনি হলদিয়ার পুরপ্রধান। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘(মহিষাদল থেকে) বিধানসভায় দলের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও এলাকায় যোগাযোগ ছিল না। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়েরও তা অন্যতম কারণ’।
নন্দীগ্রাম-পর্বের পরে সমালোচনার ঝড় উঠলেও লক্ষ্মণবাবু মূলত হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তাঁর ‘দাপট’ কিছুটা বজায় রাখতে পেরেছিলেন। শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি অটুটএটা দলের মধ্যে প্রমাণ করাটা তাঁর নিজের কাছেও ছিল চ্যালেঞ্জ। এখনও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিটু-র তিনি সম্পাদক। কিন্তু বিধানসভা ভোটে হলদিয়ায় দলের ভরাডুবির পরে সেখানে তাঁর নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মহিষাদল-২ লোকাল কমিটির প্রতিবেদনের ৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আমরা পরাস্ত হয়েছি। (তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন লক্ষ্মণবাবুই, রেকর্ড ভোটে হারেন তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে)। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনেও আশানুরূপ ফল হয়নি (মহিষাদল কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকাদেবী)। সব মিলিয়ে এই সময়ে আমাদের পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ কর্মীদের এবং সামগ্রিক ভাবে জনগণের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’। লক্ষ্মণবাবুকে আক্রমণের নমুনা: ‘হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মধ্যে পার্টি-নেতৃত্ব সম্পর্কে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভই কাজে লাগিয়েছে তৃণমূল। নেতৃত্বের আচার-আচরণ দলের কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল’।
কী কারণে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক শ্রেণি পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, নেতারা আস্থা হারালেনতাঁর কারণ বিশ্লেষণ এবং সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। যা কার্যত লক্ষ্মণবাবু সম্পর্কে অনাস্থারই নামান্তর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.