জমি নিয়ে জালিয়াতি, সেও সেই নন্দীগ্রামে
রেলের প্রকল্পে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তিতে ‘খাস’ হয়ে গিয়েছিল জমি। ‘ভূমিহারা’ হিসাবে ভুয়ো দাবি প্রতিষ্ঠা করে রেলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ এবং মূলত চাকরি হাসিলের চেষ্টায় অবৈধ ভাবে সেই খাসজমিই কেনাবেচা হয়েছে। জমি নিয়ে এ হেন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে জমি-রক্ষা আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রামে। ‘অবৈধ’ এই জমি কেনা-বেচায় ভূমি-দফতরের ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। জালিয়াতিতে জড়িয়েছে শাসক তৃণমূলের একাংশের নাম। যদিও ‘অনিয়ম’ নিয়ে সরবও হয়েছে তৃণমূলেরই অন্য অংশ।
২০০৯-এ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তমলুক-দিঘা রেলপথের দেশপ্রাণ স্টেশন (বাজকুল) থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির ঘোষণা করেন। ২০১০-এর ৩০ জানুয়ারি মমতা স্বয়ং নন্দীগ্রামে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। ১২১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে ১৮০ একর জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেল। ওই বছরই ডিসেম্বরে ফের এক দফা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জমির প্লট নম্বর, পরিমাণ, মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে তা ‘খাস’ ঘোষণা করা হয়। রেল-প্রকল্পে জমি দিলে ক্ষতিপূরণ হিসাবে বাড়তি দাম ছাড়াও ভূমিহারা পরিবার-পিছু এক জনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন রেলমন্ত্রী। মূলত এই চাকরির আশ্বাসই নন্দীগ্রামে রেল-প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ মসৃণ করেছে। আবার এই ‘প্যাকেজ’ই জমি-জালিয়াতিরও কারণ হয়েছে বলে মনে করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক।
রেল-প্রকল্পের জন্য ‘খাস’ ঘোষণার পরেও গত ৫ অগস্ট নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ঘোলপুকুরিয়া মৌজার (জেএল নং ১৩৪) ৪১০৬ নম্বর দাগের জলাজমির ১ ডেসিমেল করে অংশ কেনেন ১৪ জন। যাঁদের কেউ কেউ এমনকী চণ্ডীপুর, কাঁথিরও বাসিন্দা। একই দিনে নামমাত্র পরিমাণ জমি ১৪ জন কেনার সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সনাক্তকারী ছিলেন মাত্র এক জনই! তার পরেও ব্লক ভূমি-দফতর ওই ১৪ জনের নামে জমি রেকর্ড করে। যার সুযোগ নিয়ে ওই ১৪ জন নিজেদের ‘ভূমিহারা’ দাবি করে রেলের কাছে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দরখাস্তও করেন। একই মৌজায় ৪২১৯ দাগে ২ জন, ৪২১২ দাগে এক জন ১ ডেসিমেল করে জমির ক্রেতা হিসাবে গত ১৯ অগস্ট ফের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। ৪২০৭ দাগেও ৭ জন এ ভাবে রেজিস্ট্রেশন করান। অধিগ্রহণ বিজ্ঞপ্তির আগে যাঁরা জমির স্বত্বভোগী ছিলেন, ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জনের চাকরির আশ্বাসেই তাঁরা রেলকে জমি দিতে সম্মত হন। তার পরে জমি ‘খাস’ হয়। সেই ‘খাসজমি’রই অংশ ফের ‘রায়তি’ দেখিয়ে যাঁরা বিক্রি করেছেন, তাঁরাও জড়িয়ে জালিয়াতিতে।
ভূমি-দফতরের ‘বাস্তঘুঘু’দের যোগসাজশ ছাড়া যে অবৈধ এই কেনাবেচা করা সম্ভব নয়, তা একান্তে মানছেন দফতরেরই একাধিক আধিকারিক। নন্দীগ্রামের অ্যাডিশনাল সাব-রেজিস্ট্রার সুমন বসুর বক্তব্য, “আইন অনুযায়ী অধিগৃহীত খাসজমি কেনাবেচা যায় না। এমনটা হলে তা অবৈধ। যদি প্রমাণ হয় ওই জমি আগেই অধিগৃহীত হয়েছে, তা হলে নতুন রেজিস্ট্রেশন বৈধ হবে না।” পাশাপাশি তাঁর সংশয়, “রেল-প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত খাসজমির তালিকা (নিজের আইনে রেল সরাসরিই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে) ভূমি-দফতরের হাতে না এলে অবশ্য স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে কেউ রেজিস্ট্রেশন করাতেও পারেন।” রেল সূত্রের অবশ্য দাবি, জমির দাগ নম্বর, মালিকানা, পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য ভূমি-দফতরই দিয়েছে। তাই জমি ‘খাস’ হওয়ার বিষয়টি কোনও ভাবেই ওই দফতরের অজ্ঞাত নয়।
এ ব্যাপারে ভূমি-দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তা, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ভূমি-রাজস্ব আধিকারিক অমিতাভ বিশ্বাস মুখ খুলতেই চাননি। ‘অনিয়ম’ নিয়ে অবশ্য সরব হয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ব্লক নেতা মহাদেব বাগ। তাঁর বক্তব্য, “রেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে অবৈধ জমি কেনা-বেচায় একটি চক্র জড়িত। আমাদের দলেরও কেউ কেউ যুক্ত। প্রশাসনের একাংশের ভূমিকাও সন্দেহজনক। দল ও সরকারের উচ্চ-মহলে বিষয়টি জানিয়েছি।”
মহাদেববাবু যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছেন, তাঁদের অন্যতম তৃণমূলেরই সদ্য-প্রাক্তন ব্লক যুব-সভাপতি পরিতোষ জানা। তিনি নিজে খাস হওয়া জমির ১ ডেসিমেল কিনেছেন। অন্য কয়েক জনকেও কিনতে ‘উৎসাহিত’ করেছেন। তাঁর স্বীকারোক্তি, “গরিব মানুষ। ভেবেছিলাম রেলের চাকরি পেলে সংসারটা বাঁচবে। ভূমি দফতরও তো রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। তবে নিয়মে আটকালে মাথা পেতেই নেব।” পরিতোষবাবুর ইঙ্গিত, আরও কয়েক জনের ‘পরামর্শ’ রয়েছে এই কাজে। সেই ‘পরামর্শদাতা’ এবং ভূমি দফতরের ‘বাস্তুঘুঘু’দের চিহ্নিত করার দায় প্রশাসনেরই। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না জানিয়ে জেলাশাসক রাজীব কুমারের বক্তব্য, “নিশ্চয়ই খোঁজ নেব। অধিগৃহীত খাসজমি কেনাবেচা যায় না। এমনটা হয়ে থাকলে তা অবশ্যই অবৈধ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.