|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
চাপানউতোর |
বিবর্ণ জোড়া দিঘি |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
শহর জুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের জলাশয়গুলিতে যখন সংস্কার, সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের চলছে কাজ, তখন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দু’টি পুরনো জলাশয়ের বেহাল দশা। জঙ্গলের আড়ালে ঢাকা পড়ে ভরে উঠেছে আবর্জনায়। এ ছবি মনোহর দাস তড়াগ ও জেনারেল ট্যাঙ্কের।
অথচ, এক সময় জলাশয় দু’টির সংস্কার করা হয়েছিল। বাঁধানো হয়েছিল চারপাশের পাড়ও। তৈরি হয়েছিল চলার রাস্তা। ঘেরা হয়েছিল লোহার ফেন্সিং দিয়েও। কিন্তু তারপর আর জলাশয় দু’টির রক্ষণাবেক্ষণ বা দেখভাল হয়নি। ফলে দু’টি জলাশয়ই হারিয়ে ফেলেছে তার সাজানো চেহারা। উল্টে দেখা দিয়েছে অন্য এক সমস্যা। প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে কে করবে এই দু’টি জলাশয়ের সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ? জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে ধর্মতলার মনোহর দাস তড়াগ এবং পার্ক স্ট্রিটের জেনারেল ট্যাঙ্কের সংস্কার নিয়ে তাই শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
দু’টি জলাশয়ই ময়দান এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় দু’টিরই মালিকানা প্রতিরক্ষা দফতরের। তবে প্রতিরক্ষা দফতরের এলাকা হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখভাল সাধারণত রাজ্য পূর্ত বিভাগ এবং কলকাতা পুরসভা করে বলে জানান প্রতিরক্ষা দফতরের জনসংযোগ আধিকারিক তরুণ কুমার সিংহ। যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার স্পষ্টই বলেছেন, “পুরসভার কাছে এ বিষয়ে কোনও রেকর্ড নেই। কোনও দিনই এই দু’টি জলাশয়ের রক্ষণাবেক্ষণের ভার পুরসভার হাতে ছিল না।”
|
|
পূর্ত দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) এই দু’টি জলাশয়ের দায়িত্ব নেয় সৌন্দর্যয়ান এবং জলাশয় ঘিরে লোহার ফেন্সিং দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তারা যে দায়িত্ব নেয় তার কোনও লিখিত চিঠিপত্র বা তথ্য পূর্ত দফতরের হাতে নেই। এমনকী, সৌন্দর্যায়নের পরে ফের জলাশয় দু’টির দায়িত্ব তারা পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে, এমন নথিও পূর্ত দফতরের হাতে নেই।
অন্য দিকে, কেএমডিএ সূত্রে খবর, তারা ১৯৯৯-এর মে মাসে ‘বনবীথি’ প্রকল্প হাতে নেয় ময়দান সৌন্দর্যায়নের জন্য। যার মধ্যে মনোহর দাস তড়াগ, জেনারেল ট্যাঙ্কের জল সংস্কার, চারপাশের পাড় বাঁধানো, লোহার ফেন্সিং থেকে শুরু করে কুইন্সওয়ে-জওহরলাল নেহরু রোড ক্রসিংয়ের চারপাশের এলাকার সৌন্দর্যায়ন করা হয়। সৌন্দর্যায়নের এই প্রকল্পে কেএমডিএ ছাড়াও প্রতিরক্ষা দফতর, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ, পরিবহণ দফতর, পরিবেশ দফতর, মেট্রো রেলওয়ে এবং হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স যুক্ত ছিল। প্রকল্পের কাজ ২০০০-এর নভেম্বরে সম্পূর্ণ হয়।
কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই সময় আমরা দু’টি জলাশয় সমেত ময়দান এলাকার বেশ কিছু জায়গার সৌন্দর্যায়ন করি। বেশ কয়েক বছর আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও দীর্ঘকালীন মেয়াদের জন্য সরকারি ভাবে আমাদের হাতে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” |
|
এ দিকে দু’টি জলাশয়েই জল কমে গিয়েছে। বেশির ভাগ অংশই ভরে গিয়েছে জলজ লতায়। পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, পলিব্যাগ ও আবর্জনা। সিমেন্টের বাঁধানো পাড় ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছে। চারপাশে যে বাঁধানো রাস্তা তা নেই। উল্টে মনোহর দাস তড়াগের ফলক এবং চারপাশের ঘেরা লোহার ফেন্সিংয়ে লতানে গাছ উঠে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বাইরে থেকে বোঝা দায়, লোহার ফেন্সিং বলে কিছু আছে। জলাশয়ের চার কোণে অবস্থিত চারটি তোরণ বা গম্বুজ, যেগুলি সংস্কার করে রং করা হয়েছিল, সেগুলিও গাছপালার আড়ালে চলে গিয়েছে। জলে নিয়মিত আবর্জনা জমতে জমতে ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে। যেটুকু জল আছে তাতেই চলছে স্নান ও জামাকাপড় কাচা। জলাশয় ঘিরে যে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা আর নেই। সন্ধের পর থেকে পুরো জায়গাটাই অন্ধকার থাকে। জলাশয়ের বাইরে জওহরলাল নেহরু রোডের ফুটপাথ পথচলতি মানুষের প্রাকৃতিক কাজের জন্য দুর্গন্ধে ভরে উঠেছে।
একই অবস্থা পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন জেনারেল ট্যাঙ্কের। এখানে লোহার ফেন্সিং না থাকলেও চার দিকের বাঁধানো পাড় ভেঙে চৌচির। প্রধান রাস্তা লাগোয়া জায়গায়, যেখানে নানা গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছিল তার কোনও অস্তিত্ব নেই।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের ভার আদপে কে নেবে তা নিয়ে চাপানউতোরের মাঝে দিনে দিনে বিবর্ণ চেহারা নিচ্ছে জলাশয় দু’টি।
|
ছবি তুলেছেন পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|