পূর্ব কলকাতা
দুর্ভোগ
এ তো খেলা নয়
যেন কারও পৌষমাস, কারও সর্বনাশ!
যুবভারতীতে খেলা হোক কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠান। বাইরে থেকে স্টেডিয়ামের দর্শকদের আওয়াজে ক্রীড়ামোদী মানুষ উৎসাহ পেলেও ঠিক উল্টো অবস্থা স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিধাননগরের বিভিন্ন ব্লক কিংবা আবাসনের বাসিন্দাদের। খেলা দেখতে আসা দর্শকদের অসংখ্য গাড়ি ব্লকের বিভিন্ন গলিতে দাঁড় করিয়ে রাখা থাকে। এখানেই শেষ নয়, রাস্তা জুড়ে খাবারের প্যাকেট ছড়িয়ে থাকা কিংবা স্টেডিয়ামে আগত দর্শক ও গাড়িচালকদের হইচই থেকে যত্রতত্র প্রস্রাবের জেরে রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়। এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অভিযোগ সমর্থন করে বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাজ্য ক্রীড়া দফতরকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, এ ব্যাপারে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ফুটবল খেলা ঘিরে লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম ঘটে। আসে অসংখ্য গাড়ি। খেলোয়াড় ও আধিকারিকদের গাড়ি ছাড়া স্টেডিয়ামের ভিতরে অন্য কোনও গাড়ি ঢোকার অনুমতি নেই। আবার স্টেডিয়ামের কয়েকটি গেট ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দিকে। ফলে সেখানে পার্কিং করার অনুমতি থাকে না। ফলে এক দিকে কেবি-কেসি থেকে ব্রডওয়ে ছাড়াও জেসি, আইবি, এএইচ ব্লকের গলিতেও গাড়ি রাখা হয়।
পূর্ত দফতরের আলিপুর ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌমিত্র সেন বলেন, “পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা যৌথ সমীক্ষা চালিয়েই কালভার্ট তৈরির জন্য কামালগাজি মোড়টিকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, এখান থেকে কালভার্টটি হবে সোজা, কোনও বাঁক নিতে হবে না।”
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা সূত্রে খবর, এই নতুন নর্দমার সঙ্গে একটি ভূগর্ভস্থ নর্দমাও তৈরি করবে পুরসভা। কামালগাজি মোড় থেকে এই নর্দমা গিয়ে মিশবে আদিগঙ্গায়। এই সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনাও পুরসভা সেরে ফেলেছে বলে জানা গিয়েছে।
পুরসভার চেয়ারম্যান ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “খুব দ্রুত এই কাজ শুরু হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এলাকার বাসিন্দারাই বুঝতে পারবেন, তাঁদের কত বছরের যন্ত্রণার অবসান হল।” স্থানীয় বাসিন্দা রানা দত্তের কথায়: ‘‘কামালগাজি মোড়ে এই কালভার্টের প্রয়োজন ছিল অনেক আগেই। দেরিতে হলেও সেই কাজ এ বার বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আমাদের দীর্ঘ দিনের একটা সমস্যা মিটবে।”
এই অভিজ্ঞতা শুধু আইএ ব্লকেরই নয়, স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের কাছে পূর্বাচল আবাসনের বাসিন্দাদেরও অভিজ্ঞতা এক। আবার ৩ ও ৪ নম্বর গেটের উল্টো দিকের কেবি-কেসি এবং জেসি ব্লকের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেও সমস্যাটাও এক। উপরন্তু খেলা থাকলেই অটোর সংখ্যা রাতারাতি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের আর অটোয় ওঠার উপায় থাকে না।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন খেলার আয়োজন করছে। অথচ, পার্কিংয়ের কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থাই নেই। এর খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁদের। একই অভিযোগ খোদ বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষেরও। পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “এটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এর আগের সরকার কোনও দিনই এই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেনি। এর আগে একটি আন্তর্জাতিক খেলার সময়ে পুরকর্মীদের কাজে লাগিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার আবর্জনা সাফ করতে হয়েছে। তার জন্য পুরসভার কোষাগারে কোনও অর্থ জমা পড়েনি। আমরা ক্রীড়া দফতরকে এই বিষয়ে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি।”
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রও এই অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “শুধু বাসিন্দাদের সমস্যাই নয়, পরিবেশ দূষণও হচ্ছে। পার্কিংয়ের বিষয়টি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। অনেক গাড়িকে একত্রে রাখা যাবে এমন অত্যাধুনিক পার্কোম্যাট কিংবা ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে সরকারের মাত্র ছ’মাস বয়স। তাই খানিকটা সময় লাগবে। বাসিন্দাদের কাছে তাই সহযোগিতার আবেদন করছি।”

ছবি তুলেছেন অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.