অশোক দিন্দার ‘পুনর্জন্ম’ হল। শেষ দিনে বাংলা অবিশ্বাস্য ভাবে লড়াইয়েও ফিরল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে এল সেই ১ পয়েন্টই।
যদিও তাতে দিন্দাদের কৃতিত্ব কমে না এতটুকু। সৌরভের নেতৃত্ব অবশ্য রোহতাকে এ দিন সকাল থেকেই অসম্ভব তাতিয়ে দেয় তাঁর সতীর্থদের। মাঠে নামার আগে সবাইকে জড়ো করে ছোট বৈঠক করেন সৌরভ। আর মাঠে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে দেন দিন্দা।
এক নয়, দুই নয়, একে-একে সাত উইকেট। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে জীবনের সেরা বোলিং হিসেব, ২০-৬-৪৪-৭। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর আগুনে পেসের জবাব ছিল না হরিয়ানা ব্যাটসম্যানদের কাছে। কখনও স্রেফ গতিতে উড়িয়ে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানের স্টাম্প। কখনও আবার তাঁর বাউন্সার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে গিয়েছে উইকেটকিপারের হাতে। উল্টো দিক থেকে আবার সুইংয়ে বিভ্রান্ত করে ব্যাটসম্যানদের বিপদের মুখে ঠেলে দেন রণদেব বসু (১-২৫)। গত বছরটা ভাল কাটেনি দিন্দার। উইকেট তেমন আসেনি। বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু এ দিন জীবনের সেরা বোলিংটা করে গেলেন। যা দেখে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, “প্রবীণ কুমার যখন চোটের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে পারছে না, তখন ওর জায়গায় দিন্দা বা অভিমন্যু মিঠুনের মতো কাউকে নেওয়া দরকার।” দিন্দার আগুনে বোলিংয়েই পরের পর উইকেট খুইয়ে হরিয়ানা শেষ হয়ে যায় মাত্র ১৬৯ রানে। সরাসরি ম্যাচ জিতে ১-এর জায়গায় ৫ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগও আচমকা চলে আসে বাংলার সামনে। হাতে ৩৭ ওভার, চাই ১৮৯ রান। |
শেষ পর্যন্ত রূপকথার জয় অবশ্য আসেনি। মন্দ আলোর জন্য যখন খেলা বন্ধ হয়, তখন বাংলা ১২৮-৫। ন’ওভার ছিল পড়ে। দরকার ছিল ৬১ রান। হতেও পারত, না-ও পারত। ক্রিজে ছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল (৬ ন:আ:) ও ঋদ্ধিমান সাহা (২৬ ন:আ:)। ম্যাচ শেষে দিন্দা বলেন, “এর আগে ম্যাচে দশ উইকেট পাইনি কখনও। এখানে বারোটা উইকেট পেলাম। আরও ভাল লাগছে যে, আমার দশ নম্বর উইকেটের ক্যাচটা দাদি ধরেছে। কিন্তু টিমই জিতল না যখন, তখন আর আমার পারফরম্যান্সের লাভ কী হল?”
দিন্দার মন খারাপ। সিএবি কর্তারা অবনমনের আশঙ্কায়। দিল্লি এ দিন বরোদাকে বোনাস পয়েন্ট-সহ হারিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে। ৪ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট। মধ্যপ্রদেশ আবার গুজরাতকে সরাসরি হারিয়ে উঠে এল তিন নম্বরে। ৩ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট। তামিলনাড়ুরও তাই। বাংলার থেকে তিন পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে হরিয়ানা দাঁড়াল ৪ ম্যাচে ৮। গুজরাতের ৩ ম্যাচে ৭। আর বাংলা? ৩ ম্যাচে মাত্র ৫ পয়েন্ট। লিগ টেবিলে সবার নীচে। সেমিফাইনালের আশা দূর অস্ত্, সিএবি কর্তারাই এখন হিসাব দিচ্ছেন, শেষ তিন ম্যাচ থেকে অন্তত ৭ পয়েন্ট তুলতে না পারলে রঞ্জির এলিট থেকে অবনমন বাঁচানো কঠিন হবে। যা তামিলনাড়ু-দিল্লি-বরোদার মতো হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে পাওয়া প্রচণ্ড কঠিন। সৌরভ বলেছেন, “খুব মুশকিল অবনমন বাঁচানো। তার জন্য আমাদের পরের দু’টো ম্যাচ জিততেই হবে। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা আরও ভাল না খেললে জেতা মুশকিল।”
তামিলনাড়ু ম্যাচে বাংলার জন্য আরও খারাপ খবর। একে মনোজ তিওয়ারি নেই, তার উপর ঋদ্ধিমান সাহাও অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য শহর ছাড়ছেন ৮ ডিসেম্বর। দলে আসতে পারেন শ্যামবাজারের উঠতি পেসার বীরপ্রতাপ সিংহ।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: হরিয়ানা ৩৫৯ ও ১৬৯ (সাইনি ৪৪, দিন্দা ৭-৪৪) বাংলা ৩৩৯ ও ১২৮-৫ (রোহন ৪৩, সৌরভ ২১)। |