কটকে জেতা ম্যাচটা প্রায় হারতে বসেছিল সহবাগের টিম। আর বিশাখাপত্তনমে তো ব্যাট করতে নেমে বেশ চাপে ছিল। সহবাগ আউট হওয়ার পরে আর একটা উইকেট গাড্ডায় ফেলে দিতে পারত। এখানে ব্যাপারটা সামলে দিল বিরাট আর রোহিত। রোহিত খুব ভাল ফর্মে আছে, এই সিরিজটা ওর ফিরে আসার সিরিজ। ওকে ভীষণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধও দেখাচ্ছে। ম্যাচটা জিতিয়েই ফিরল, আগের ম্যাচে যেটা পারেনি। তবে দু’জনের মধ্যে এখনও এগিয়ে রাখব বিরাটকে। ও নিজের খেলাটা খেলতে পারলে অধিনায়কের অনেক দুশ্চিন্তাই ভ্যানিশ করে যায়। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ঠিক করে গেল, ম্যাচের সেরা ও ওয়ান ডে-তে আট নম্বর সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্টটায় ছয় নম্বরে ও-ই যাবে। ফেলz করলে তখন রোহিতের কথা ভাবা যেতে পারে।
কিন্তু ভয়ের কথা, ওপেনিং জুটিকে মোটেই আগের মতো ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে না। সহবাগকে একেবারেই সহবাগের মতো লাগছে না। ব্যাট আর প্যাডের মধ্যে ফাঁক আগেও থাকত, কিন্তু ব্যাট স্পিড আর হাত-চোখের যোগাযোগ দিয়ে সেই ঘাটতি ভরাট হয়ে যেত। এই সিরিজে এখনও পর্যন্ত সেই ছন্দটা পাওয়া যাচ্ছে না। আর এক ওপেনার পার্থিব পটেল কেন দিনের পর দিন খেলে যাচ্ছে জানি না। এত সুযোগ ইদানীংকালে কেউ পেয়েছে বলে দেখিনি। সহবাগ-গম্ভীর ওপেন করুক, পার্থিবের জায়গায় আসুক ঋদ্ধিমান। কিপিং তো অনেক ভালই, ব্যাটেও পার্থিবের চেয়ে ভাল করবে। |
সামনে অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন সফর, তার আগে গৌতম গম্ভীরকে দেখেও ভাল লাগছে না। এত বেশি বল থার্ডম্যানে খেলছে কেন. শর্ট পিচ বলেও দেখছি আগের মতো স্বচ্ছন্দ নয়। এই সিরিজটা ভারতের না জেতার কারণ নেই। কিন্তু আসল পরীক্ষা তো অস্ট্রেলিয়ায়। আমাদের বিখ্যাত মিডল অর্ডার তখনই ভাল খেলবে, যদি অস্ট্রেলিয়ায় শুরুটা ভাল হয়। আর সেটা সহবাগ-গম্ভীরকেই করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাটসম্যানরা আগে যাচ্ছে। এর চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত কিছু হয় না। আশা করা যাক, সহবাগ বা গম্ভীর নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেবে।
ম্যাচটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছে, যেখানে বড়জোর ২০০ তাড়া করার কথা, সেখানে ২৭০ তাড়া করতে হল কেন? ৩৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ১৭০-৯, ভেবেছিলাম খুব বেশি হলে ১৯০ বা ২০০ হবে। সেখান থেকে ক্যারিবিয়ান টিমটা করল ২৬৯! বোলিং যে একেবারে ভেঙে পড়েছিল, তা কিন্তু নয়। আসলে অবিশ্বাস্য একটা ইনিংস খেলে দিল রবি রামপল (৬৬ বলে ৮৬ নট আউট, ছ’টা চার, ছ’টা ছক্কা)। ক্রিকেট মাঠে এক-এক দিন কারও কারও এমন যায়। সে দিন আপনি যা করতে চান, যে ভাবে করতে চান, সব একেবারে সে ভাবেই ঘটে থাকে। ঠিক যেটা বিশাখাপত্তনমে হল রামপলের ক্ষেত্রে। যা মারছে, সব ছক্কা। অশ্বিন খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে। ওকেও দেখলাম ওই মারের মুখে খেই হারিয়ে ফেলল।
বিপক্ষের শেষ উইকেটে ১৪ ওভারে ৯৯ রান যোগ হওয়া মোটেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে বলে না। একটা টিমকে চেপে ধরেও তো আপনি শেষ করতে পারেননি। অহেতুক অনেক বেশি রান তাড়া করার ঝক্কি নিতে হয়েছে। অনভিজ্ঞতার জন্য এই ম্যাচে ভুগতে হল ভারতকে। অশ্বিন আর বরুণ অ্যারন মার খেয়ে গেল। বাকি বোলাররা কিন্তু নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করেছে। বিনয় কুমার বুদ্ধি করে বোলিংটা করে। বোলিংয়ে একটা শৃঙ্খলা আছে। উমেশ যাদব খুব দ্রুত উন্নতি করছে। এ বারের অস্ট্রেলিয়া সফরে ও কিন্তু টিমের নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠতে পারে।
|
বিশাখাপত্তনমের স্কোর |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
সিমন্স রান আউট ৭৮
বারাথ ক পার্থিব বো উমেশ ০
স্যামুয়েলস ক রায়না বো উমেশ ৪
ব্র্যাভো ক অশ্বিন বো বিনয় ১৩
হায়াত ক পার্থিব বো বিনয় ০
রামদিন ক জাডেজা বো উমেশ ২
পোলার্ড ক পার্থিব বো অশ্বিন ৩৫
স্যামি এলবিডব্লিউ জাডেজা ২
রাসেল বো জাডেজা ১১
রামপল ন.আ. ৮৬
রোচ ন.আ. ২৪
অতিরিক্ত ১৪
মোট ২৬৯-৯ (৫০ ওভারে)। পতন: ৩, ২৫, ৫৫, ৫৫, ৬৩, ১১৯, ১৩১, ১৪৯, ১৭০।
বোলিং: বিনয় ১০-২-৪৩-২, উমেশ ১০-০-৩৮-৩, অ্যারন ১০-০-৬৬-০,
জাডেজা ৯-২-৩৯-২, অশ্বিন ১০-০-৭৪-১, রায়না ১-০-৩-০। |
ভারত
|
পার্থিব ক স্যামি বো রোচ ২
সহবাগ ক রাসেল বো স্যামুয়েলস ২৬
গম্ভীর ক বারাথ বো রামপল ১২
বিরাট ক রামদিন বো রামপল ১১৭
রোহিত ন:আ: ৯০
রায়না ক রামদিন বো রোচ ০
জাডেজা ন:আ: ৯
অতিরিক্ত ১৪
মোট ২৭০-৫ (৪৮.১ ওভারে)।
পতন: ৩, ২৯, ৮৪, ২৪৭, ২৪৮।
বোলিং: রামপল ১০-১-৬২-২, রোচ ১০-০-৪০-২, রাসেল ৮.১-০-৬০-০,
স্যামি ৪-০-৩০-০,
স্যামুয়েলস ১০-১-৪০-১, পোলার্ড ৩-০-২২-০, সিমন্স ৩-০-১২-০। |
|
|