মাছ-মড়কে দায়ী ৭ রকমের কীটনাশক
শুধু এন্ডোসালফানই নয়, করলা নদীতে মাছের মড়কের জন্য দায়ী সাত রকমের কীটনাশক। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কলকাতার পরীক্ষাগারে করলা নদীর জলের নমুনা পরীক্ষা করে মোট পাঁচ রকমের কীটনাশকের সন্ধান মিলেছে। এগুলি হল এন্ডোসালফান-১, এন্ডোডোসালফান-২, মিথাইল প্যারাথিয়ন, মেলাথিয়ন, ক্লোরোপেরিফস, ডাইএলড্রিন এবং ২, ৪ ডিডিটি। এর মধ্যে প্রথম চারটি অতিমাত্রায় বিষাক্ত বলে পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে।
এন্ডোসালফান একটি নিষিদ্ধ কীটনাশক। অন্যদিকে মিথাইল প্যারাথিয়নের ব্যবহার নিয়েও ভারতে নানারকম বিধিনিষেধ রয়েছে। সাধারণত চা বাগান বা অন্য সব্জি চাষেও এই ধরনের কীটনাশক অল্পবিস্তর ব্যবহার হয়। যে ভাবে করলা নদীতে অন্তত দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তিন দিন ধরে মাছের মড়ক চলেছে, তাতে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে নদীর জলে কীটনাশক না মেশালে এই ঘটনা সম্ভব নয় বলে পর্ষদ জানিয়েছে। সারা বছরই করলা নদীর জলের নমুনা পর্ষদ সংগ্রহ করে। গত ৮ নভেম্বরও নদীর জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। সে সময় জলে কোনও কীটনাশক পাওয়া যায়নি। পর্ষদের জানানো এই তথ্যের ফলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে স্বাভাবিক দূষণের কারনে নয়, নদীর জলে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে এই ধরনের কীটনাশক মিশিয়ে দেওয়াতেই গত ২৮ নভেম্বর সকাল থেকে করলা নদীতে মাছের মড়ক শুরু হয়। এদিন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত কলকাতা থেকে টেলিফোনে বলেন, “করলা নদীর জলের নমুনা পরীক্ষা করে আমরা সাত ধরনের কীটনাশকের উপস্থিতি পেয়েছি। যার মধ্যে পাঁচটি কীটনাশক অত্যন্ত বেশি পরিমাণে রয়েছে। এই কীটনাশকগুলি অত্যন্ত বিযাক্ত। এগুলি নদীর জলে মিশে যাওয়ার কারণেই মাছের মড়ক শুরু হয়েছিল। আমাদের রিপোর্ট রাজ্য সরকার-সহ জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
করলা বাঁচাতে জলপাইগুড়িতে পথে নামল স্কুল পড়ুয়ারা। ছবি: সন্দীপ পাল।
এদিন বিকেলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে ফ্যাক্সের মাধ্যমে করলার জলের নমুনার রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলে জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “পর্ষদের রিপোর্ট পেয়েছি। পাঁচ ধরনের কীটনাশক বেশি পরিমাণে জলে মিশে গিয়েছে বলে মাছের মড়ক হয়েছে বলে ওঁরা রিপোর্টে জানিয়েছেন। আপাতত জলকে পরিষ্কার রাখতে চুন ও ফিটকারি ছেটানোর কাজ চলছে। সেই সঙ্গে তিস্তা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে করলায় ফেলার কাজও এদিন সকাল থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু কীভাবে কীটনাশক জলে মিশে গেল সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি। তদন্ত চলছে।” শুক্রবার সকাল থেকেই দমকল এবং এগ্রি মেকানিকাল দফতর পৃথক ভাবে তিস্তা থেকে জল তুলে করলায় ফেলার কাজ শুরু করে। সেচ দফতর এবং জলপাইগুড়ি পুরসভা এই কাজের তদারকি করছে। পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে প্রথম দিনই ঘটনাটিকে নাশকতা বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে সেই কথাই উঠে এসেছে। এবার তদন্ত করে দোষীকে খুঁজে বের করা এবং করলা নদী সংস্কারের কাজকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করতে হবে।” অন্যদিকে, করলা নদীকে ‘রক্ষা’ করতে জলপাইগুড়িতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রছাত্রীরা। এদিন সকালে সেন্ট পলস নামে একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শহরে মৌন মিছিল করে। মিছিল নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভায় হাজির হয় স্কুল পড়ুয়ারা। জেলাশাসকের দফতর এবং পুরসভায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি আইনজীবী মিহির বন্দোপাধ্যায় বলেন, “করলা নদীতে বিষ প্রয়োগ করে হাজার হাজার মাছ মেরে ফেলার ঘটনা ছাত্রছাত্রীদের মনে রেখাপাত করে। মূলত পড়ুয়াদের উদ্যোগেই মিছিলের আয়োজন করা হয়। পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা প্রসারে স্কুলের তরফে লাগাতর কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.