ইকড়া শিল্পতালুক
দূষণ ছড়াচ্ছে স্পঞ্জ আয়রন পর্ষদকেও দুষছেন গ্রামবাসী
কারখানা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক দূষণের জন্য নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও দায়ী। এমনই অভিযোগ জামুড়িয়ার ইকড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। দূষণ সৃষ্টি করা কারখানাগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অথবা পুরো গ্রামের অন্যত্র পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন। শুক্রবার এ নিয়ে এলাকায় মিছিলও করেন তাঁরা।
ইকড়া গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪টি স্পঞ্জ আয়রন ও কিছু সিমেন্ট কারখানা আছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, দূষণের জেরে বাড়ির মেঝে কালো হয়ে যায়। গাছের পাতা থেকে গবাদি পশুর খাবারেও গুঁড়ো পদার্থের আস্তরণ পড়ে যায়। জলে দূষিত পদার্থ মেশায় পুকুরে মাছচাষও আশানুরূপ হচ্ছে না। মাঠের ঘাস মুখে দিতে চাইছে না গরু, ছাগল। গ্রামে গরুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাষবাসেও অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল চট্টোপাধ্যায় জানান, এলাকার শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদীর জল এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে তা ব্যবহার করতে পারেন না শবযাত্রীরা। অথচ আগে ওই জলে চাষবাস পর্যন্ত হত। কারখানা থেকে ট্যাঙ্ক এবং গ্রামের পুকুরের জলেই দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হয়। নদীর পাশে গ্রামের সীমানায় চড়ুইভাতিও বন্ধ বলে জানান সুশীলবাবু। বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরকে আবেদন জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
নিজস্ব চিত্র।
৩০ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই এলাকায় ঠুঁটো জগন্নাথ। মাঝে মধ্যে লোকদেখানো অভিযান হয়। কিন্তু তার আগেই টেলিফোনে তা কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে তাঁদের সন্দেহ। গ্রামবাসীর আরও অভিযোগ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা কখনও এলাকার ভুক্তভোগী মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেননি, কথা বলেননি। বিধানসভা ভোটের আগে দূষণ খানিকটা কমলেও সেপ্টেম্বর থেকে ফের তা ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে তাঁদের দাবি।
গত ১ নভেম্বর বিধানসভার পরিবেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধি দল এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও আসানসোলের মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন ওই দলের সদস্যেরা। কিন্তু তার পরেও কোনও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ ইকড়ার বাসিন্দাদের। লৌহ ইস্পাত কারখানা খোলার নাম করে এসে এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা গড়া হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দূষণ রোধ ও রাস্তায় নিয়মিত জল ছেটানোর দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান এলাকার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে তাঁরা আবেদন করেছেন, এই সমস্ত কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিকদের স্বার্থ বজায় রেখে এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন শিল্প বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, বাসিন্দাদের দূষণমুক্ত জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং এলাকায় দূষণের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে লাগাতার অভিযান প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। সিপিএমের জামুড়িয়া জোনাল কমিটির সদস্য মনোজ দত্ত বলেন, “আমাদের সরকারের আমলে বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানির পরে দু’টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল। জামুড়িয়া পুরসভার তরফে গাছ লাগানোর উদ্যোগও হয়েছিল।” তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় বলেন, “এর আগে এ নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। গ্রামবাসীর দাবি নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিহিতের আবেদন জানাব।”
তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোলের আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “পুরোটাই তো একতরফা অভিযোগ। যা বলার কর্তৃপক্ষের কাছে বলব।” তবে জামুড়িয়া স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন মাউন্ডিয়া বলেন, “আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তদন্ত হলেই তা প্রমাণ হবে।”
মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “স্ট্যান্ডিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। গাছ লাগানোর ব্যাপারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। এলাকায় ছোট গাছ লাগানো ও ইসিএলের জায়গায় বনসৃজনের জন্য কারখানাগুলি যাতে সাহায্য করে, আমাদের তরফে সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” দূষণ রোধে অভিযান আরও বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.