কোচবিহারের সাগরদিঘি কী ভাবে দূষিত হচ্ছে? কতজন সেখানে রোজ কাপড় কাচেন, স্নান করেন? বালুরঘাটের আলতাদিঘির হাল কেমন? গঙ্গারামপুরের কালদিঘিতে মাছ চাষের লিজে লাভ-লোকসানের অঙ্কটা কী! দার্জিলিঙের সিঞ্চল ও মিরিক লেক, জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির দিঘি, জল্পেশ দিঘি, ফাটাপুকুরের জলাশয় কিংবা সুকনা লেকের আয়তন দিন দিন কমছে কি? কী ভাবে সমস্যা কাটিয়ে জলাশয়কে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যাবে?
এমন নানাবিধি প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় সব জলাশয়কে একই পরিকল্পনার আওতায় এনে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। উদ্দেশ্য, ‘ওয়াটার-বডি’ কিংবা ‘পন্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি করা। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল ধরো-জল ভরো’ কর্মসূচির প্রেক্ষাপটেই ওই ওয়াটার-বডি কিংবা পন্ড ব্যাঙ্ক গড়ার কাজে জোর দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। ইতিমধ্যেই ছয় জেলার জেলাশাসকেরা গৌতমবাবুর নির্দেশ পেয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েছেন। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পরে ছয় জেলায় একাধিকবার গিয়ে নানা শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে ছোট-বড় জলাশয় নিয়ে অনেক সমস্যার কথা শুনেছি। তাই জলাশয়গুলিকে এক সূত্রে বেঁধে কিছু করার কথা ভাবা হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরেই সমীক্ষা সম্পূর্ণ হবে।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের এক একটি জেলায় গড়ে ১০০টি করে ধরলে অন্তত ১২০০ ছোট-বড় সরকারি জলাশয় রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি জলাশয় মজে গিয়েছে। আবর্জনা ফেলে তা দখলের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও শিলিগুড়িতে কয়েকটি সরকারি জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের সুষ্ঠু কোনও বন্দোবস্ত নেই। অথচ প্রাথমিক সমীক্ষায় সরকারি অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, ওই জলাশয়গুলি দৈনন্দিন দেখভাল হলে সেখানে মাছ চাষ ও পর্যটনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। যে ভাবে কোচবিহারে রসিকবিলকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়া হয়েছে। পাশাপাশি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে জলাশয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়ে মাছ চাষ করানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মসংস্থান, দুই-ই হতে পারে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শতাধিক মজে যাওয়া জলাশয়ের সংস্কারের ব্যাপারে গৌতমবাবুর কাছে আর্জি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তার মধ্যে বালুরঘাটের পাশে থাকা তপনদিঘি প্রায় মজে গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের মালিয়ান দিঘি, আলতাদিঘি, মাতাসের ঝিলের হাল ফেরানোর জন্যও গৌতমবাবুকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। কিন্তু, দিঘি সংস্কার, মাছ চাষ কিংবা পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন? তা মিলবে কোথা থেকে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “ওই প্রকল্পে একাধিক দফতরকে সামিল করা হচ্ছে। মৎস্য, পর্যটন, বন, পূর্ত, পরিবেশ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ চাওয়া হবে। কোনও প্রকল্পে মৎস্য দফতর টাকা দেবে। আবার কোনও প্রকল্পে অন্য দফতর দেবে।
যেখানে সমস্যা হবে, সেখানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ থেকে টাকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে কয়েকটি বড় মাপের জলাশয় ঘিরে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) যাওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে।” জেলা প্রশাসনের তরফেও ওই প্রকল্প দ্রুত তৈরি ও রূপায়ণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার প্রশাসনের একাধিক কর্তা জানান, তাঁরা দ্রুত ওয়াটার-বডি ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য মহকুমা ও ব্লক স্তরের অফিসারদের কাজে নামিয়েছেন। |