|
|
|
|
পুরসভায় বাড়ির নকশা জমা নেওয়া বন্ধ, ভুগছে হাওড়া |
দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ • কলকাতা |
এক দিকে নতুন বাস্তু আইন, অন্য দিকে এই আইন মেনে বিল্ডিং সার্ভেয়ার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা এই দু’টি কারণে গত চার মাস ধরে বিল্ডিং প্ল্যান জমা নেওয়া বন্ধ হাওড়া পুরসভায়। ফলে বাড়ির নকশা জমা দিতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর জেরে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করে যে অর্থ আয় হত, সেই পথ আপাতত বন্ধ বলে মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। কাজেই বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পুরসভা।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশিকা জারি করে ‘হাওড়া পৌর নিগমের বাস্তু আইন-১৯৮০’ বাতিল করে দেয় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। পরিবর্তে ‘কলকাতা পুরসভার নতুন বাস্তু আইন-২০০৯’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে সরকার বদলের পরে বামশাসিত হাওড়া পুরবোর্ড ওই আইন চালু করতে গিয়ে প্রথমে কিছু প্রশাসনিক সমস্যায় পড়লেও পরে তা চালু করে। সেই অনুযায়ী গত ২১ জুন মেয়র পারিষদ সভায় সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। ঠিক হয়, ১৬ অগস্ট থেকে নতুন গৃহ নির্মাণ বিধি কার্যকর হবে।
কিন্তু আইন চালু করে সমস্যা দেখা দেয় পুর-লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিল্ডিং সার্ভেয়ার বা এলবিএসদের নিয়ে। কারণ নতুন আইনে বিল্ডিং সার্ভেয়ার নিয়োগ করতে গিয়ে দেখা যায় কলকাতা পুরসভার বাস্তু আইন-২০০৯ অনুযায়ী বিল্ডিং সার্ভেয়ারদের ন্যূনতম যোগ্যতা যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাধারী হওয়ার কথা, হাওড়া পুরসভার অধিকাংশ এলবিএসের তা নেই। পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই ধরনের এলবিএসের সংখ্যা প্রায় ৩০০। মেয়র পারিষদের সভায় তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুর-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, যে সব এলবিএসের শিক্ষাগত যোগ্যতা নতুন বাস্তু আইনানুগ নয়, তাঁদের নাম বিল্ডিং সার্ভেয়ার হিসেবে নথিভুক্ত হবে না বা তাঁদের লাইসেন্সও চালু রাখা যাবে না।
এই সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়ে ওই এলবিএস-দের। পুরসভার মধ্যেই তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেন। দাবি তোলেন, আইন সংশোধন করে গত ৩০ বছর ধরে যাঁরা পুরসভার লাইসেন্স পেয়ে এসেছেন তাঁদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে হবে। এর পরেই বাড়ির নকশা জমা নেওয়া এবং মিউটেশন দেওয়া বন্ধ করে পুরসভা।
হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বিল্ডিং সার্ভেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সূর্যনারায়ণ দত্ত বলেন, “যে সব এলবিএস এত বছর ধরে আইটিআই বা সিটিআইয়ের মতো সংস্থা থেকে পাশ করে বিল্ডিং সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন, নতুন আইন চালু করে তাঁদের কর্মচ্যুত করা হল। ওই আইন সংশোধন করে সব লাইসেন্সপ্রাপ্ত এলবিএসের নাম নথিভুক্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” সংগঠনের আরও অভিযোগ, যে সব লাইসেন্স পুরসভা জমা নিয়েছে, সেগুলিও পুনর্নবীকরণ করে দিচ্ছে না।
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের অবশ্য বক্তব্য, “এখানে এলবিএসদের কেউ অষ্টম, কেউ নবম শ্রেণি পাশ। নতুন বাস্তু আইন আনুযায়ী ওই যোগ্যতায় লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা যাবে না। ওঁদের বলেছি, ওঁদের আবেদন পুরমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। উনি অনুমতি দিলে তবেই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা যাবে।”
গত তিন মাস ধরে বাড়ির নকশা জমা নিতে না পারায় পুরসভার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন মেয়রও। তিনি বলেন, “এলবিএসরাই সমস্যা তৈরি করছেন। ওঁদের বাধায় নকশা জমা পড়ছে না। অধিকাংশ সাধারণ মানুষই জানেন না, এলবিএস ছাড়াও পুরসভায় নকশা জমা দেওয়া যায়। তাতেও যদি ওঁরা বাধা দেন, তখন আমাদের অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
|
|
|