|
|
|
|
একশো দিনের কাজ |
সরকারি দফতরগুলির আগ্রহের অভাবে সমস্যা প্রকল্প রূপায়ণে |
নুরুল আবসার • হাওড়া |
হাওড়া জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জব কার্ডধারীরা চলতি আর্থিক বছরে এ পর্যন্ত কাজ পেয়েছেন মাত্র ১২ দিন। প্রকল্পের এই শোচনীয় হার দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন দফতরকে এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা বিশেষ গা করেনি বলে অভিযোগ। যা করা হলে এই জেলায় একশো দিনের প্রকল্প যথেষ্ট গতি পেতে পারত বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি। তবে আশার কথা হল, সম্প্রতি কয়েকটি দফতর একশো দিনের প্রকল্পে কাজের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
হাওড়ায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল। প্রথম বছর কেটে যায় জব কার্ডধারীদের নামের তালিকা তৈরি করতে। কিন্তু তার পরেও পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে এই প্রকল্পে অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের কর্তারা সরকারের অন্যান্য দফতরের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ করানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেচ, পূর্ত (সড়ক), কৃষি, উদ্যানবিষয়ক, বন এবং মৎস্য দফতর একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যোগ দিতে পারে। নিয়ম হল, তারা যে কাজটি করতে চায়, সে বিষয়ে প্রকল্প তৈরি করবে। কত টাকা লাগবে সেটাও প্রকল্পে জানিয়ে দিতে হবে। প্রকল্পটি জমা দিতে হবে জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য যে দফতর দায়িত্ব রয়েছে সেখানে। প্রকল্প খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে টাকা তুলে দেবে তারা।
টাকা পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট দফতর যে এলাকায় কাজটি করবে, সেখানকার জবকার্ডধারীদের নিয়োগ করবে। শ্রমিকদের মজুরিও দেবে তারাই। প্রয়োজনে তারা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের সাহায্য নিতে পারে। জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সেচ, পূর্ত (সড়ক), বন, উদ্যানবিষয়ক, কৃষি এবং মৎস্য প্রভৃতি দফতরের কাছে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা আগ্রহ দেখায়নি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, হাওড়ায় সেচ দফতর একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকটা কাজ করতে পারে। উদয়নারায়ণপুর, আমতা, জয়পুর, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকায় নদী বাঁধ মেরামতির কাজগুলি একশো দিনের প্রকল্পে করা সম্ভব। কিন্তু এই দফতরের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেচ দফতরের কাজ বেশির ভাগই ঠিকাদার নির্ভর। অন্য দিকে, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করাতে হবে জবকার্ডধারীদের দিয়ে। তাঁদের নিয়োগ করা, কাজের হিসাব রাখা, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মজুরি দেওয়া এই সব কিছু করার জন্য পরিকাঠামো তাদের নেই। এই সব কথা বলেই সেচ দফতর একশো দিনের কাজের প্রকল্পটি এড়িয়ে গিয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান। সম্প্রতি অবশ্য সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা হাওড়ায় এসে একশো দিনের প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন সেচ দফতরের বাস্তুকারদের। তার পরিপ্রেক্ষিতে সেচ দফতর প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেচ দফতরের হাওড়ার নির্বাহী বাস্তুকার রবিন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এ জন্য আমরা পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খুলেছি।” সেচ দফতরের বাস্তুকারদের এখন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের দায়ত্বিপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা।
পূর্ত (সড়ক) দফতরেরও অনেক সুযোগ রয়েছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার। রাস্তার দু’ধারে মাটি ফেলা যায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু এই দফতরও প্রকল্পটিতে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান। উদ্যানবিষয়ক দফতর শ্যামপুরের গড়চুমুকে উদ্যান তৈরির জন্য একটি প্রকল্পে প্রায় চার লক্ষ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু কাজটি শেষ পর্যন্ত না-করে তারা টাকা ফেরত দেয়। সম্প্রতি তারা জেলা জুড়ে কলা, পেঁপে এবং সজনে গাছের চারা লাগানোর জন্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বর্ষাকালেই এই সব গাছ লাগানোর কথা। কিন্তু প্রকল্পটি হাতে এসেছে বর্ষা কেটে যাওয়ার পরে। ফলে তাদের হাতে টাকা দেওয়া হয়নি। সুযোগ থাকলেও বন দফতর এবং মৎস্য দফতর একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করার আগ্রহ দেখায়নি বলে জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ সূত্রের খবর। চলতি আর্থিক বছরে একশো দিনের প্রকল্পে খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা হার তাতে অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ করাই যাবে না। আগের আর্থিক বছরেও যেখানে খরচের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ কোটি টাকা। সেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। সরকারের অন্য দফতরগুলি যদি এগিয়ে আসত তা-হলে টাকা খরচের এই শোচনীয় হার অনেকটাই অতিক্রম করা যেত বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা। |
|
|
|
|
|