|
|
|
|
নীল পাহাড়ের নীচে |
বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি মিশে গেল হর্নবিলের রঙিন উৎসবে |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • কোহিমা |
সাত দশকের ব্যবধানে বার্লিন-টোকিও আঁতাতের অতীত-বর্তমান এখন মুখোমুখি। সৌজন্যে একাদশ হর্নবিল উৎসব। নাগাল্যান্ডের ৪৯ তম ‘পূর্ণ রাজ্য দিবস’ উপলক্ষে গত কাল সাড়ম্বরে কিসামা গ্রামে শুরু হয়েছে হর্নবিল উৎসব। নাগাল্যান্ডের সব থেকে বড় বার্ষিক এই উৎসব উপলক্ষে কোহিমা, জাখমায় এখন হাজির নানা দেশের মানুষ। কেউ এসেছেন রক সঙ্গীতের টানে, কেউ রঙিন নাচ-গানের তালে মাততে, কেউ বা কুকুর-মেকুর-শুওর-উচ্চিংড়ের বিচিত্র পদ চাখার লোভে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে জাখামা গ্রাম জাপানি বাহিনী প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছিল, সেই ইতিহাসের শরিক হতে একদল জার্মান ঘাঁটি গেড়েছেন সেখানে। থাকার জায়গা মেলেনি। তাতে কী! খোলা মাঠেই শিবির গড়ে বিশ্বযুদ্ধের স্মারক আর সবুজ পাহাড়ের অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভরাচ্ছেন তাঁরা। |
|
সাবেকি পোশাকে নাগাদের ‘যুদ্ধের নাচ’। কোহিমার কাছে কিসামা গ্রামে। ছবি: পি টি আই |
গুগল মানচিত্রে বিশ্বযুদ্ধ আর মিত্রবাহিনীর হদিস খুঁজতে খুঁজতে জাখামা গ্রামের হদিস পেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্ট, বার্লিনের ১৩ জন জার্মান পর্যটক। ৭ জন পুরুষ, ৬ জন মহিলা। সকলেই লেখক, ইতিহাসবিদ্ বা চিত্রগ্রাহক। কিসামা খুঁজে পেয়ে বিহ্বল সকলে। ভাল খাবার-আস্তানা কিচ্ছু চাননি। কেবল সবুজ পাহাড়-জঙ্গলে ইতিহাস
খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভাষাটা একটা সমস্যা। কিন্তু আন্তরিকতা সে বাধা কাটিয়ে দিয়েছে। গ্রামবাসীদের কাছে তাঁরা
কিছুই চাননি। কিন্তু স্থানীয় গ্রামসভা ও ছাত্র সংগঠন জার্মান ও অন্য বিদেশি পর্যটকদের আপ্যায়নে খুঁত রাখতে
চান না। গ্রামবাসীদের কথায়, “আমাদের দেওয়ার মতো কিছুই তো নেই। কিন্তু আমরা চাই এখানকার সুন্দর কিছু স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরুন এই বিদেশিরা।
সেটাই হবে পরম পাওয়া।”
কোহিমা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামেই নেতাজির হয়ে জাপ-বাহিনীর হাজারখানেক সৈন্য জান কবুল করে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন মিত্রশক্তিকে। তাঁদের স্মৃতিসৌধ আর নেতাজির শেষ ভারতীয় আস্তানা নাগাদের কাছে আজও অত্যন্ত পবিত্র বীরস্থান। জার্মানরা নেতাজির সেই গ্রামে গিয়েছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। আর সেখানেই জাপানি পর্যটকদের সঙ্গে তাঁদের মোলাকাত। ব্যাস, নস্টালজিয়া আর ইতিহাস মাখামাখি হয়ে উদ্দেশ্য ষোলো আনা সিদ্ধ। জাপান, জার্মানি ছাড়াও উৎসবের গ্রামে ব্রিটিশ পর্যটকের আনাগোনাও কিন্তু কম নয়। আর শত্রু-মিত্র এক হয়ে মেতে ওঠার আদর্শই তো হর্নবিলের থিম। |
|
‘আগুনখেকো’। নাগাদের উৎসবের আর এক চিত্র। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
উত্তর-পূর্বের প্রায় সব উপজাতির নাচ-গান হর্নবিলের অঙ্গ। এক সপ্তাহ জুড়ে ‘আসিয়ান’-ভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধিরা এ সবের স্বাদ তারিয়ে উপভোগ করবেন। এ বারের উৎসবের থিম সাংস্কৃতিক ঐক্য। উদ্বোধনে, নাগাল্যান্ডের ১৬টি উপজাতি, তাদের নাচে-গানে আসর জমিয়ে দেন। পর্যটকদের স্রোত এখনও আসছে। কিন্তু হোটেল দূর অস্ত্, গৃহস্থবাড়িতেও ঠাঁই নাই দশা।
তবে, জায়গাটা যেহেতু নাগাল্যান্ড তাই, উৎসবের মধ্যেও রাজনীতি ও জঙ্গি সংগঠনের উল্লেখ আসবেই। গত কাল, উৎসবের সূচনা করে রাজ্যপাল নিখিল কুমার এবং মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও বলেন, “সব নাগা সংগঠন ও উপজাতি গুলিকে হাতে হাত মিলিয়ে এক হতে হবে। তবেই রাজ্য হিসাবে সার্থক হয়ে উঠবে নাগাল্যান্ড।” মুখ্যমন্ত্রীও, এনএসসিএন-এর সঙ্গে শান্তি আলোচনার দ্রুত পরিণতি চান। তাঁর আশা, পূর্ণ রাজ্য হিসাবে সূবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব যখন হবে, ততদিনে, রাজ্যে আর কোনও অশান্তি, কোনও বিভেদ থাকবে না। |
|
|
|
|
|