|
|
|
|
মাওবাদী-দুর্গ সারান্ডা |
উন্নয়ন কর্মসূচির সূচনায় জয়রাম, পাশে অর্জুন মুন্ডা |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • রাঁচি |
যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকলেও, মাওবাদীদের ‘দুর্গ’ ভাঙতে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করছে প্রশাসন। ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের দীর্ঘকালের শক্ত ঘাঁটি, আদিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিম সিংভূম জেলার সারান্ডার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ ওই বার্তাই পৌঁছে দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
বনাঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে জমি-মালিকানার পাট্টা দলিল, সৌর-লণ্ঠন, সাইকেল বন্টন-সহ আজ একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আর কংগ্রেসি মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা। সরকারি তথ্যাভিজ্ঞ মহল জানাচ্ছে, সম্ভবত এ দিনই প্রথম স্বাধীন ভারতের কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমানায়, এশিয়ার বৃহত্তম শাল-জঙ্গল সারান্ডার মাটিতে পা রাখলেন।
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সারান্ডার ছোটানাগরা সিআরপিএফ ক্যাম্পের কাছেই। পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা সকাল থেকেই মঞ্চটি ঘিরে রাখে। দুর্গম এলাকা। টেলি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক না-থাকায় কোনও রকম ঝুঁকি না-নিয়ে গত কালই ছোটানাগরার আশপাশ অঞ্চলের দখল নেয় যৌথ বাহিনী। আজ সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডাকে নিয়ে রাঁচি থেকে হেলিকপ্টারে সারান্ডার উদ্দেশে জয়রাম রওনা দেন। মন্ত্রীর সফরের জন্য তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী একটি হেলিপ্যাড। অনুষ্ঠান সেরে বিকেলের আগেই তাঁরা চাইবাসায় ফিরে আসেন। |
|
সারান্ডায় জঙ্গলমহলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সূচনায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
পাশে ঝাড়কন্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। শুক্রবার পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি |
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সারান্ডায় পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। একই সঙ্গে উন্নয়ন-সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে গ্রামবাসীদের এগিয়ে আসার ডাক দেওয়া হয়েছে। জয়রাম ও অর্জুন, দু’জনেই জানান, মানুষের নিরাপত্তা-সহ গ্রামের শান্তি রক্ষা এবং উন্নয়নের কাজ পাশাপাশিই চলবে। আজ থেকেই সমস্ত বনবাসী পরিবারের হাতে জমির মালিকানা পাট্টা দলিল তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজও চলছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনায় গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরির কাজও শুরু হবে শীঘ্রই। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলির কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে সরকার ঘোষিত সুযোগ সুবিধা। কর্মক্ষম গ্রামের সমস্ত গরিব মানুষকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে সৌর-লণ্ঠন। গরিব গ্রামবাসীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দেওয়া হবে পরিবার পিছু একটি করে সাইকেল।
বস্তুত, অনুন্নয়নকে পুঁজি করেই সারান্ডায় বিভিন্ন জঙ্গি-সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত। এ কথা মানছেন সরকারি কর্মীদের একাংশও। সরকারি সূত্রের খবর, আদিবাসী অধ্যুষিত সারাণ্ডার ৫৬ টি গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। শালবনের জঙ্গলই অধিকাংশ গ্রামের জীবিকার ভরসা। পাকা রাস্তা নেই। জলের সঙ্কট। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, ইন্দিরা আবাস যোজনায় গরিবদের গৃহনির্মাণ প্রকল্প কিংবা ১০০ দিনের কর্ম সুনিশ্চিত করার মতো গ্রামোন্নয়নের কোনও কাজই বিগত বছরগুলিতে এখানে হয়নি। যতটুক কাজ হয়েছে তার সুফলও সারাণ্ডার প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। এক বছর আগে রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েত ভোট হলেও সারান্ডায় পঞ্চায়েতগুলির কাজ এখনও সে-ভাবে শুরুই হয়নি।
সরকারি আধিকারিকরা জানান, গত এক দশক ধরে সারান্ডার উপরে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই আলগা হয়েছে। এই এলাকার লালমাটির পথে পর পর ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটেছে। মাওবাদীদের ঘটানো বিস্ফোরণে একসঙ্গে ২৯ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যুও হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ার পর সারান্ডাকেই মাওবাদীদের ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’ বলে মনে করত পুলিশ। রাজ্য পুলিশ ও সিআরপিএফের দাবি, গত বর্ষায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরে জঙ্গিরা সারান্ডা থেকে পিছু হটেছে। তবু উন্নয়নের কাজ অটুট রাখতেও সেই নিরাপত্তা-বাহিনীকে দরকার। সরকারি আধিকারিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এখনও যৌথ বাহিনীর সাহায্য ছাড়া সারান্ডায় এক পা চলার ঝুঁকিও নিচ্ছে না রাজ্য প্রশাসন। |
|
|
|
|
|