|
|
|
|
খুচরো-বিতর্কে ক্ষতি হবে না দলের, আত্মবিশ্বাসী রাহুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যে ভাবে তামাম বিরোধী দল, এমনকী মুলায়ম-মায়াবতীরাও সুর চড়িয়েছেন, তাতে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা ছিল তাঁরই। কিন্তু সেই তিনি, রাহুল গাঁধীই আজ দলীয় বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই উত্তরপ্রদেশের ভোটে।”
খুচরো-বিতর্কে সনিয়া-রাহুল কেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পক্ষে মুখ খুলছেন না, তা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। ক’দিন আগে মায়াবতী বলেছেন, “রাহুলের বন্ধুদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তবু রাহুল তা নিয়ে কিছু বলেননি। খুচরো-বিতর্ক প্রসঙ্গে আজও রাহুল ঠিক প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি বটে। কিন্তু দলীয় বৈঠকে তিনি যা বলেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ ভোটে রাষ্ট্রীয় লোকদল তথা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠ কৃষক নেতা অজিত সিংহের সঙ্গে জোট গড়তে সচেষ্ট রাহুল। যেহেতু কেন্দ্রের নীতি কৃষক-বন্ধু হয়ে উঠবে বলে কৃষক সংগঠনগুলি প্রচারে নেমেছে, তাই অজিত সিংহও তাতে সমর্থন জানাচ্ছেন। সেটাও ইতিবাচক বলে মনে করছে কংগ্রেস।
রাহুলের নেতৃত্বে আজ কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের প্রচার কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্য কংগ্রেস নেত্রী তথা উন্নাও-এর সাংসদ অনু টন্ডন বলেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে বিজেপি, সপা ও বসপা যে ভাবে প্রচার চালাচ্ছে, তা কংগ্রেসের সম্ভাবনার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনুকে থামিয়ে রাহুল তখন বলেন, এই ধারণা ভুল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে কোনও খারাপ প্রভাব পড়বে না। বরং মায়াবতী সরকারের দুর্নীতিই মূল নির্ণায়ক বিষয় হয়ে উঠবে উত্তরপ্রদেশে। রাহুলের এই মন্তব্য জানাজানি হতেই মায়াবতী আজ পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “খুচরো-বিতর্ক থেকে মুখ ঘোরাতে চাইছেন কংগ্রেসের যুবরাজ।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া-রাহুল আর্থিক সংস্কার নিয়ে সচরাচর মুখ খোলেন না। বরং ইউপিএ সরকারের জন্মলগ্ন থেকে এটাই দস্তুর যে, সামাজিক সুরক্ষার কথা বলেন সনিয়া-রাহুল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন সংস্কারের কথা। এটা ভারসাম্যের রাজনীতি। তার মানে এই নয় যে, সনিয়া-রাহুল সংস্কারের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগে এই বার্তা দিতেই কংগ্রেসের মুখপত্র ‘সন্দেশ’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালেই সনিয়া গাঁধী বুঝেছিলেন বাজার নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি দেশের ভাল করবে। আবার সম্প্রতি যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় অধিবেশনে যে অর্থনৈতিক প্রস্তাব রাহুলের নেতৃত্বে গৃহীত হয়েছে, তাতেও সংস্কার তথা খুচরো-বিতর্কে সমর্থনের ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব কৃষি-বিপণন ব্যবস্থা আরও উদার করা। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত দালালের উপস্থিতি কৃষিক্ষেত্রের সর্বনাশ করছে। তাতে কৃষকরা যেমন ভাল দাম পাচ্ছেন না, তেমনই উপভোক্তাদেরও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। বস্তুত খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সপক্ষে এটাই সরকারের অন্যতম যুক্তি। সরকারেরও মূল বক্তব্য হল, এই নীতি রূপায়ণ হলে কৃষিক্ষেত্রে দালালদের উৎপাত কমবে। নয়া নীতির ফলে খুচরো বিক্রেতারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনবেন। তাতে কৃষক ও উপভোক্তা উভয়ের লাভ হবে।
খুচরো-বিতর্কের সমর্থনে প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে যে দল গড়েছেন, তাতেও টিম রাহুলের অনেক সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে জিতিন প্রসাদ, সচিন পায়লট, আর পি এন সিংহরা তাদের অন্যতম। উত্তরপ্রদেশের প্রচার কমিটির বৈঠকে আজ জিতিন এবং আর পি এন-ও উপস্থিত ছিলেন। পরে ঘরোয়া আলোচনায় আর পি এন বলেন, বিরোধীরা ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে কৃষক ও মধ্যবিত্তের ভাল হবে, এই প্রচার গড়ে তুলতে পারলেই বরং দলের পক্ষে ইতিবাচক হবে। তাতে বিজেপি, সপা-বসপাও চাপে পড়ে যেতে পারে। |
|
|
|
|
|