|
|
|
|
মমতাকে উস্কে দিয়ে কেন্দ্রে সঙ্কট বাড়াতে চায় বিজেপি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান নমনীয় করার জন্য যখন খোদ মনমোহন সিংহ আসরে নেমেছেন, সেই সময় বিজেপি-ও সুকৌশলে তাঁকে উস্কে দিতে চাইছে। যাতে মমতা তাঁর অবস্থান শিথিল না করেন। আর কেন্দ্রও সঙ্কট থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে না পারে। এর জন্য কখনও অরুণ জেটলির মতো দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মমতাকে সতর্ক করে দিচ্ছেন, সরকারের পাশে দাঁড়ালে ভোটাররা মুখ ফেরাবে। আবার কখনও তাঁরা দলের ব্যবসায়ী সংগঠনকে পাঠাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রীর কাছে। খুচরো ব্যবসা নিয়ে চলতি বিতর্কে মমতার অবস্থানের জন্য তাঁকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতে।
কংগ্রেসের মতো বিজেপি নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে বিতর্কে সরকারের সঙ্কটমোচন করতে পারেন একমাত্র মমতাই। ডিএমকে বা এনসিপি-র মতো ইউপিএ-র অন্য শরিকরা সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মমতা এখনও অনড়। মমতাকে বোঝানোর জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী পর পর দু’দিন দু’বার ফোন করেছেন। কংগ্রেস ও সরকারের এই বেগতিক অবস্থা দেখে বিজেপি নেমে পড়েছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। মমতাকে উস্কে দিয়ে অরুণ জেটলি আজ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের গোটা অর্থনীতিটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট ব্যবসার উপরে। চিরাচরিত ভাবে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিপিএমের বিরুদ্ধেই থেকেছে। তৃণমূল যদি এখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি ঢুকতে দেওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রকে সমর্থন করে, তবে ওই ব্যবসায়ীদের ভোট সিপিএমকে উপহার দেওয়ার সামিল হবে। টান পড়বে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কেও।”
শুধু তাই নয়, গত কালের ভারত-বন্ধে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে পেরে বিজেপি এখন উজ্জীবিত। তাদের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা আজ আনন্দ শর্মার সঙ্গে দেখা করে বিদেশি পুঁজির জন্য খুচরো ব্যবসার দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। আনন্দ শর্মা তাঁদের জানিয়েছেন, “সব দিক ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার সম্ভব নয়।” এর পরেই জেটলির মতো শীর্ষ নেতারা দলের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মমতার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিয়েছেন। ওই সংগঠনের নেতা প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছি।” কী কারণে এই সাক্ষাৎ চান তাঁরা? খান্ডেলওয়ালের বক্তব্য, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের যাঁরা সমর্থন করেছেন, তাঁদের সকলের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেন ক্ষতিকারক, তা-ও সকলের কাছে বোঝাতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যও তাই।”
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, অর্থনৈতিক দিক থেকে বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত যতই ঠিক হোক না কেন, রাজনৈতিক ভাবে এটি এখন ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। নিজেরই চক্রব্যূহে ফেঁসে গিয়েছে সরকার। মুলতুবি প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিতে সরকারের মুখ পুড়বে কি না, তার নির্ধারক শক্তি এখন মমতাই। তাই সরকার যখন মমতাকে পাশে রাখতে মরিয়া, তখন বিজেপি-ও তাঁকে পাশে টানতে চাইছে সুকৌশলে। যাতে সরকারকে আরও বিপাকে ফেলা যায়। দু’দিন আগেই কলকাতা গিয়ে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী মমতাকে খোঁচা দিয়ে বলে এসেছেন, রাজ্যে সিপিএমের জমানায় তৃণমূল সরব হলে এখন কেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব হবে না? কংগ্রেস চেষ্টা চালাচ্ছে বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে বিজেপি-র অন্দরের মতান্তরকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে। যে কারণে আনন্দ শর্মা আজও বলেন, “গুজরাত, হিমাচলের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্য বিদেশি লগ্নির পক্ষেই সওয়াল করেছে।” বাণিজ্য মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি নেতা শান্তা কুমার অবশ্য কংগ্রেসের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমলের সঙ্গে কথা হয়েছে। উভয়েই বলেছেন, কোনও দিনই তাঁরা বিদেশি লগ্নির পক্ষে সওয়াল করেননি।” |
|
|
|
|
|