|
|
|
|
গুরুত্ব প্যাকেজে, ফের মমতা-প্রধানমন্ত্রী কথা |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে তৃণমূলকে পাশে পেতে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। গতকালই তাঁকে ফোন করে এই সিদ্ধান্তের সুফল বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বরফ গলেনি। তার পর আজ সকালে ফের ফোন।
এ প্রসঙ্গে মমতা নিজে আজ বলেন, তাঁরা চান না সরকার পড়ে যাক। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এ বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কথাই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের আনা মুলতুবি প্রস্তাব মেনে ভোটাভুটিতে গেলে মমতার সমর্থন ছাড়া গত্যন্তর নেই কংগ্রেসের। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কৌশল, তৃণমূল নেত্রীর সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। তাঁকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে রাজ্যের স্বার্থে মমতা যে প্যাকেজ চাইছেন তা অগ্রাধিকার দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, হাতে আরও সময় রয়েছে। সোমবার সংসদের অধিবেশন বসছে না। মঙ্গলবার মহরম। সংসদ বন্ধ। এর মধ্যে মমতার সঙ্গে রাজনৈতিক দৌত্য আরও বাড়ানো হবে।
খুচরো প্রশ্নে দলের বিরোধিতা স্পষ্ট করে দেওয়ার পরে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ফোনে প্রথমে অধরাই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কালই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এক দফা বোঝান। তার পরে আজ সকালে ফের ফোন করে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মায়ের শরীর সম্পর্কে খোঁজ নেন তিনি। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে যে ‘অপ্রীতিকর ব্যবহার’ করা হয়েছে, তার জন্য আন্তরিক দুঃখপ্রকাশও করেন। তৃণমূলের অভিযোগ, বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী প্রতিবাদ জানালে কংগ্রেসের তরফে তাঁর সঙ্গে কিছুটা ‘রূঢ় ব্যবহার’ করা হয়। ফলে তিনি সে দিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী এর পর বিশদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝান, দেশের কৃষক, ছোট ব্যবসায়ীরাও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এলে কী ভাবে লাভবান হবেন। তা ছাড়া, যে হেতু রাজ্যের হাতে রক্ষাকবচ থাকবে, ফলে পশ্চিমবঙ্গে এই বিদেশি লগ্নি তিনি চাইলে না-ও আনতে পারেন। কিন্তু দেশের অন্যান্য রাজ্য, যারা এই লগ্নির দিকে তাকিয়ে রয়েছে, মমতা যেন তাদের কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন । মমতা তাঁকে জানিয়েছেন, তিনিও চান না এমন কিছু হোক যাতে সরকার পড়ে যায়। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থের দিকটি তাঁকে মাথায় রাখতেই হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মমতা আজ সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ফোন করে আমার মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর করেছেন। আমি ওঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।” খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, অতীতে কেন্দ্র সঙ্কটে পড়লে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পারব না। ওঁকে বলেছি, আমরা চাই না সরকার পড়ে যাক। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ যে খুচরো ব্যবসার উপর নির্ভরশীল সে কথা তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, “খেতে দিতে না পারি, পেটে কিল মারতেও পারব না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনারা আর এক বার ভাবুন।”
খোদ প্রধানমন্ত্রীর বোঝানোর চেষ্টার পাশাপাশি অন্য পথও দেখছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে মমতা যে ২০ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের ঋণ মেটাতে এবং উন্নয়নের জন্য চেয়েছিলেন, তা কী ভাবে তাঁকে দেওয়া যায়, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। ৭ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি অর্থ কোন খাতে দেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, কানিমোজি বা অন্য অনেক শরিক নেতার সঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে এক নিক্তিতে দেখা ঠিক নয়। মমতা যা চাইছেন তার মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। রাজ্যের উন্নয়নকেই এখন পাখির চোখ দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এটাও লক্ষ রাখা হচ্ছে যে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কংগ্রেসের তরফে এমন কোনও উক্তি বা আচরণ যেন না করা হয়, যা মমতাকে স্পর্শকাতর করে তোলে। আজই এক আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রণববাবু বলেন, যে ভাবে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে তা রাজনৈতিক দলগুলির সংকীর্ণ মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। তাঁর কথায়, সরকার কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিলে তা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকসভায় আলোচনা এবং ভোটাভুটি করতে হবেএমনটা হলে সংসদ চলতে পারে না। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি বিরোধীদের পাশাপাশি শরিক দলগুলির প্রতিও বার্তা দিতে চেয়েছেন। ‘সংকীর্ণ রাজনীতি’র বিষয়টি নিয়ে পরে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেন। বলেন, “একজন সংকীর্ণ মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিই এ ধরনের কথা বলতে পারে।” পরে অবশ্য নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী রাজ্যগুলি প্রয়োজনে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিকে আসতে মানা করে দিক। কিন্তু মন্ত্রিসভায় কোনও একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা গোটা দেশের জন্যই নেওয়া হয়। দেশের কোনও একটি প্রান্তে সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে কি অন্য অংশে তার আঁচ পড়ে না? আসলে এই ধরনের অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে সরকার নিজের সংকীর্ণ মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে।” কেন্দ্রের মতে, এমন তিক্ততা কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে না হওয়াই এখন অভিপ্রেত। বরং মমতার মন জুগিয়ে চলাটাই এখন কংগ্রেসের অগ্রাধিকার। আজ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী দলের নেতাদের কাছে মমতার মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তিনি প্রয়োজনে মমতাকে ফোন করতে পারেন বলেও জানা গিয়েছে।রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মমতা যদি কংগ্রেসের সঙ্গে এই সময়ে দর কষাকষি করে উন্নয়নের জন্য অর্থ আদায় করে নিতে পারেন, তা হলে সেটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে অভিপ্রেত হবে। কারণ, সরকারের পক্ষে তৃণমূল যদি ভোটও দেয়, তবু রাজ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি না-আনার অধিকার তাঁর হাতেই থাকবে। আবার ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে প্রশাসনে নতুন উদ্যমও আনতে পারবেন নেত্রী। |
|
|
 |
|
|