কেষ্টপুরের তৃণমূল নেতা স্বপন মণ্ডল খুনের পরে দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন তিনি। রাজারহাট তৃণমূলের সেই সদ্য প্রাক্তন যুব সভাপতি পার্থ সরকারকে ওই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবারই কেষ্টপুর-কাণ্ডে হস্তক্ষেপ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ পার্থকে গ্রেফতার করে জানিয়ে দিল, ওই খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারীকেই তারা গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে ওই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হল।
শুক্রবার বারাসত আদালতে পার্থকে হাজির করায় পুলিশ। তাঁকে স্বপন খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখালেও অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে কিন্তু চায়নি পুলিশ। পার্থবাবুকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। আদালত থেকে তাঁকে ব্যারাকপুর জেলে পাঠানো হয়। এ দিন আদালত চত্বরে ভিড় করেন কেষ্টপুর-রাজারহাট এলাকার বহু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক রেষারেষিতে ফাঁসানো হয়েছে পার্থকে। ওই ভিড়ে ছিলেন নিহত স্বপন মণ্ডলের মা-বাবাও।
যে খুনের ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলেন, তার মূল ষড়যন্ত্রকারীকে হাতে পেয়েও কেন পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিল না? উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “আসলে ওই ব্যক্তি খুনের ষড়যন্ত্রকারী। ধৃতদের কাছ থেকে সেই তথ্য জানার পরে তা যাচাইও হয়ে গিয়েছে। যখন কারও কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কিছু উদ্ধারের বিষয় থাকে, তখন পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়নি।” আদালত চত্বরে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের কিন্তু অভিযোগ, “কারও ‘মন’ রাখতে ধরা হয়েছে পার্থকে। নিজেদের হেফাজতে রাখার স্বপক্ষে কোনও যুক্তিই কিন্তু পুলিশ দিতে পারত না আদালতে।”
কেন পার্থকে গ্রেফতার করল পুলিশ? আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে বাগুইআটি থানার পুলিশ জানিয়েছে, স্বপন মণ্ডল খুনের ঘটনায় প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের জেরা করেই জানা গিয়েছে, এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী হলেন পার্থ। পুলিশের অভিযোগ, পার্থই খুনের জন্য টুলকোদের লাগিয়েছিলেন। তাঁকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। নিউটাউন থানায় যাওয়ার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভের আঁচ করে শুক্রবার ভোর পাঁচটার মধ্যেই পার্থবাবুকে বারাসত আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। নিজেদের হেফাজতে থাকার সময়ে তাঁকে জেরা করার সময়ই কার্যত পায়নি তারা। আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে পার্থ বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
পার্থবাবুর পরিবারিক সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত বারোটা নাগাদ বাগুইআটির বাড়িতে ফেরেন পার্থ। বাগুইআটির তৃণমূল ভবন থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি জামা-জুতো পড়া অবস্থাতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময়ই তাঁর বাড়িতে আসেন বাগুইআটি থানার ওসি। তিনি পার্থকে বলেন, ‘নিউটাউন থানায় যেতে হবে। এসপি খোঁজ করছেন’। এর পর পার্থকে পুলিশের জিপে নিউটাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বপন খুনের ঘটনায় পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার কাকভোরেই। পার্থর অনুগামীরা সকালেই নিউটাউন থানায় যান। কিন্তু সেখানে পার্থ ছিলেন না। এক তৃণমূল সমর্থক বলেন, “নিউটাউন থানা থেকে পার্থকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা পুলিশ আমাদের বলতে চায়নি। এতে আমাদের উদ্বেগ বাড়ে। পরে আমরা জানতে পারি, সাতসকালেই পার্থকে বারাসত আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
স্বপন খুনের অভিযোগে পার্থকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ওই যুবনেতার অনুগামীরা হতবাক। পার্থর এক অনুগামী নিউটাউন থানার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “স্বপন যে দিন (২৭ নভেম্বর) খুন হন, সে দিন সকালে পার্থর সঙ্গে ওর মুকুল রায়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। প্রাণ সংশয়ের বিষয়টি মুকুলবাবুকে জানানোর কথা ছিল স্বপনের। শেষ মুহূর্তে মুকুলবাবুর কাছে যাওয়ার বিষয়টি বাতিল হয়।” ওই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর মন্তব্য, “রবিবার দুপুরে স্বপনের সঙ্গে যদি পার্থ থাকত, তা হলে ওকেও খুন হতে হত। আগের বার স্বপনকে যখন গুলি করা হয়েছিল, তখন হাসপাতালের মূল খরচ পার্থই বহন করেছিল। এটা সকলেই জানেন।” |