জঙ্গল-ঘেঁষা জায়গায় পর্যটক ফেরাতে উদ্যোগ |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • গোয়ালতোড় |
শীত এসেছে। চড়ুইভাতির সময়। কিন্তু কোথায় যাবেন মানুষ? পশ্চিম মেদিনীপুরের বন-জঙ্গলই ছিল শীতের চড়ুইভাতির জন্য আদর্শ গন্তব্য। কিন্তু গত তিন বছর ধরেই অশান্ত জঙ্গলমহল। জেলার পিকনিক-পার্টিই হোক বা কলকাতা বা অন্য জেলার পর্যটকতাঁদের কাছে তিন বছর ধরেই জঙ্গলমহল মানে ‘আসা বারণ’। তবে ইদানীং পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করছে বলে দাবি প্রশাসনের। যে কারণে সামনের বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে পর্যটন-উৎসবেরও পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। তার পরেও গভীর জঙ্গল এখনও তত অনায়াস গন্তব্য হয়ে ওঠেনি। তবে গড়বেতা, গোয়ালতোড়, আড়াবাড়ি-সহ জঙ্গল-ঘেঁষা কয়েকটি এলাকায় এ বারের শীতে যাতে মানুষজন নির্ভয়ে যেতে পারেনসে জন্য উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। |
আর সেই উদ্যোগের হাত ধরেই শীতের রোদ মেখে লাল-কাঁকুরে পথে শাল-মহুয়ার জঙ্গলে পর্যটকদের ফের আনাগোনার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। অস্থির পরিস্থিতির কারণে এই বন-দফতরই আগের কয়েক বছর পর্যটকদের জঙ্গলে যেতে নিষেধ করেছিল। থমকে গিয়েছিল বনবাংলো বা জঙ্গলের মধ্যে কটেজে রাত কাটানো, বন-দফতরের সাজানো-গোছানো জলাশয়ের ধারে পিকনিক কিংবা বনপথে নিছকই ঘোরাফেরা। সরকারের রাজস্ব-আদায়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকী বন-দফতরের একাধিক অফিস বা রূপাঘাঘরার মতো পর্যটনস্থলে নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে অনতি-অতীতে। এ বার পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করায় আগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে বন-দফতর। বেশ কয়েক জায়গার বিট ও রেঞ্জ অফিসে ফিরতে শুরু করেছেন বনকর্মীরা। গোয়ালতোড়ের রূপাঘাঘরার পর্যটনস্থলটি ফের সাজানোর উদ্যোগও শুরু হয়েছে। বন দফতরের বক্তব্য, চলতি মরসুমে গভীর জঙ্গলে না হোক, জঙ্গল-ঘেঁষা জায়গাগুলিতে পর্যটকরা আসতে পারেন নির্ভয়েই। |
গড়বেতার মংলাপোতা জলাধার। |
মেদিনীপুর সদর শহর সংলগ্ন গুড়গুড়িপাল, চাঁদড়ায় আগের বছরগুলিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতও ছিল সমস্যা-সঙ্কুল। পর্যটকদের আসা তো দূর অস্ৎ। অথচ গুড়গুড়িপালে রয়েছে কৃত্রিম জলাধার। যেখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। রয়েছে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য পার্ক এবং পিকনিক করার সুন্দর সুন্দর স্পট। চাঁদড়ায় রয়েছে একাধিক রেস্ট-হাউস। শালবনির আড়াবাড়ির জঙ্গলে এক সময়ে যেখানে দু’তিন মাস আগে থেকেই পর্যটকরা বন-দফতরের ঘর বুকিং করতেন, গত তিন বছর সে-সবই হয়ে গিয়েছিল যেন স্মৃতি। এ বার ফের বন-দফতর উদ্যোগী হয়েছে পর্যটকদের ফেরাতে। জেলার অন্যত্র, যেমন--গনগনির জঙ্গল, চন্দ্রকোনা রোডের পরিমল-কানন, ধাদিকার কুইলিবাঁধ, খড়িকাশুলি, মংলাপোতা, চাঁদাবিলার মতো পিকনিক স্পটগুলিতেও ফের লোক আসবেন বলেই আশা মেদিনীপুর বন-বিভাগের ডিএফও আশিস সামন্ত এবং রূপনারায়ণ বন-বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার। তাঁদের বক্তব্য, “জঙ্গল-ঘেঁষা একাধিক পিকনিক-স্পট এবং পর্যটনস্থলগুলিতে লোকজন যাতে ফের আসেনসে জন্য আমরা প্রচার শুরু করছি।”
|