|
সেনসেক্স বাড়ল ৩৬৩ পয়েন্ট
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
শেয়ার বাজারের পারদ চড়ছে রোজই। অথচ দেশের বা বিশ্ব অর্থনীতির যে মৌলিক উপাদানগুলি পাকাপোক্ত থাকলে সাধারণত বাজার ওঠে, তার অধিকাংশই এখন নড়বড়ে। তাই তার পরেও সূচকের এই উত্থানের পিছনে ফাটকার হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার ৩৫৯ ওঠার পর শুক্রবারও ৩৬৩.৩৮ পয়েন্ট বেড়েছে সেনসেক্স। এই নিয়ে টানা তিন দিন বজায় থাকল তার ঊর্ধ্বগতি। এ দিন তা থিতু হয় ১৬,৮৪৬.৮৩ অঙ্কে। ২০০৯-এর জুলাইয়ের পর কখনও এত ভাল সপ্তাহ কাটায়নি বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ। কিন্তু তা সত্ত্বেও উল্লসিত হওয়ার কারণ দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। কারণ তাঁরা মনে করছেন, সম্প্রতি ভারতে বা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এমন ইতিবাচক ঘটনা ঘটেনি, যা চাঙ্গা করে তুলবে বাজারকে।
সাধারণত কেউ শেয়ার কেনেন কেন? কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, আগামী দিনে ওই সংস্থার ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি হবে। বাড়বে মুনাফা। আর তার দৌলতে লাভবান হবেন তিনি নিজেও। কিন্তু মার্কিন ও ইউরোপীয় অর্থনীতির দশা এখনও বেহাল। তার উপর মন্দা এ বার ছোবল বসাতে শুরু করেছে চিনের উপরে। একই রকম পরিস্থিতি দেশের অন্দরেও। ৭ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে আর্থিক বৃদ্ধির হার। শিল্প বৃদ্ধির হার তলানিতে। থমকে গিয়েছে পরিকাঠামো শিল্পের গতিও। সব মিলিয়ে, একে ব্যবসার পক্ষে সুসময় বলা শক্ত। তাই এই পরিস্থিতিতেও কী করে লগ্নিকারীরা সংস্থাগুলির ভাল ফলের আশায় শেয়ার কিনছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে করছেন, বাজার উঠছে ফাটকার জোরে। তাই যে কোনও সময় ফানুস চুপসে যাওয়ার সম্ভাবনা।
অনেকে অবশ্য বলছেন, হালে মার্কিন সংস্থাগুলিতে কর্মসংস্থান কিছুটা বেড়েছে। ভারতের বাজারে ফিরতে শুরু করেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি। ইউরোপ-সহ বিশ্ব অর্থনীতির হাল ফেরাতে উদ্যোগে সামিল হতে রাজি হয়েছে আমেরিকা-সহ ছ’টি দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। দেশেও কমতে শুরু করেছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে অদূর ভবিষ্যতে সুদ আর না-বাড়ারই সম্ভাবনা। পেনশন, খুচরো ব্যবসার মতো ক্ষেত্রের দরজা বিদেশি লগ্নির জন্য খুলে দিয়ে ফের সংস্কারে মন দিতে চাইছে কেন্দ্র। এই বিষয়গুলিই ইন্ধন জুগিয়েছে বাজারের উত্থানে।
কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ অনেক বিশেষজ্ঞই। কারণ তাঁরা মনে করেন, হাতে গোনা কয়েকটি সুলক্ষণ দেখা গেলেও বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়া এখনও দূর অস্ৎ। আবার ভারতে কেন্দ্র সংস্কারের পথে পা বাড়ালেও বাধ সাধছে রাজনীতি। তাই অর্থনীতির ওই সব সুখবর লগ্নিকারীদের উদ্বেগ কমালেও বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণ আসলে ফাটকা। পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের এমডি অক্ষয় গুপ্তের দাবি, “ফাটকার জোরে বড় জোর ১৮ হাজারের ঘরে পৌঁছবে সূচক। কিন্তু তা ছাড়াতে মজবুত হতে হবে অর্থনীতির ভিত।” ত্রাণ প্রকল্পে নারাজ প্রণব। আর্থিক বৃদ্ধি তলানিতে ঠেকায় আশঙ্কিত শিল্পমহল। কিন্তু শুক্রবার অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানালেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এখনই ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করবে না কেন্দ্র। একই মতের শরিক যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। |