খাদ্যের মান রক্ষার স্বার্থেও দরকার বিদেশি লগ্নি, সওয়াল শিল্পমহলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মুদি দোকানের স্যাঁতসেঁতে গুদামঘরে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইঁদুর-আরশোলা। পানীয় জলের বোতল কাদা-জল মাখছে। ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দিয়ে দেখলেন, মিষ্টিটা বেশি লাগছে। আসলে ‘বেশি মিষ্টি’ নয়, নকল! পাড়ার ফলের দোকানে দাগ-ছাড়া হলুদ কলা বা আপেল খুঁজে পেতে কালঘাম ছুটছে। আর বাজারে সব্জি কেনার সময়ে তো বোঝার উপায়ই নেই ভিতর থেকে পচে গিয়েছে কি না।
যে কোনও শহরে ছবিটা কম-বেশি এমনই। খাদ্য-পানীয়ের গুণগত মান এবং পরিচ্ছন্নতা ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন সর্বত্র। শিল্পমহল বলছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে, কিন্তু খাদ্যপণ্যের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কেউই মাথা ঘামাচ্ছে না। মুদি দোকানের গুদামের ‘পরিবেশ’ সম্পর্কে আস্থা নেই অধিকাংশেরই। সাধারণ সব্জিবিক্রেতার পক্ষে শাকসব্জি হিমায়িত করে রাখাও অসম্ভব। এই ধরনের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ কার্যকর করে খাদ্যপণ্যের মান সুরক্ষিত রাখতে চাইছে কেন্দ্র। শিল্পমহলের বড় অংশ মনে করছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে খাদ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হবে, তাতেই গুণগত মান নিয়ে চিন্তামুক্তি সম্ভব।
বর্তমান পরিকাঠামোয় খাদ্য-পানীয়ের মান পরীক্ষা হয় তৈরির একেবারে শেষ পর্যায়ে। ক্রেতা যদি দেখেন তিনি নিম্নমানের খাদ্য-পানীয় কিনেছেন, তাঁর কার্যত কিছু করার নেই। কোথায় কার খেত বা কারখানা থেকে কোন পণ্য আসছে, তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চাষের সময়ে ফসলে কতখানি কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করার পরিকাঠামো নেই। অথচ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি সংস্থাগুলির কায়দায় একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মান নিয়ন্ত্রিত হয়। কোন পণ্য কোথা থেকে এসেছে, তার হিসেব থাকে। এ প্রসঙ্গে খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কে ভি টমাস বলছেন, “অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রতিটি পণ্যের উৎস সুনির্দিষ্ট করতে পারলে ক্রেতাদের জন্য পুরো খাদ্যশৃঙ্খলটাই সুরক্ষিত করে তোলা সম্ভব।”
ভারতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ (এফএও)-এর সহ-প্রতিনিধি গোপী ঘোষ মনে করছেন, খাদ্যপণ্যের এই ‘উৎস সন্ধান’ই হল খাদ্যের মান ও স্বাস্থ্যসম্মত দিকটি সুরক্ষিত করার সব থেকে বড় রাস্তা। ভারতকে তাই খাদ্যপণ্য তৈরির পরে তা পরীক্ষা করার রেওয়াজ থেকে সরে এসে আগাগোড়া মান নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত করতে হবে। যথেষ্ট সংখ্যক হিমঘর এবং প্রতিটি পর্যায়ে তথ্য রাখার ব্যবস্থা থাকলে তা সম্ভব। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা শপিং মলে পরিচ্ছন্নতা এমনিতেই অনেক বেশি। সেখানে নকল পণ্য ঢোকা মুশকিল, কারণ বড় খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থাগুলি স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে পণ্য কেনার বদলে উৎপাদক সংস্থার থেকেই পণ্য কেনার চুক্তি করে। চাষিরা ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক ছড়াচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়োগ করা হয় কৃষিবিজ্ঞানীদের। শহরে বড় বড় হিমঘর তৈরির পাশাপাশি খেতের একেবারে পাশে ছোট হিমঘর তৈরি করাও তাদের পক্ষে সম্ভব। আর এ ভাবেই সম্ভব চাষের খেত থেকে একেবারে খাবারের টেবিল পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান সুরক্ষিত রাখা।
ভারতী-ওয়ালমার্টের এমডি ও সিইও রাজ জৈন তাই বলছেন, “ভারতের মতো দেশে খাদ্যের মান ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি লগ্নি এলে এ দিকে বেশি করে নজর দেওয়া সম্ভব।” তাঁর যুক্তি, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির ফলে খাদ্যপণ্য কম নষ্ট হবে, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যের দিকটিও সুনিশ্চিত হবে। ক্রেতারা কম দামে আরও ভাল পণ্য পাবেন। বিগ বাজার চেনের মালিক ফিউচার গোষ্ঠীর কর্ণধার কিশোর বিয়ানি বলছেন, “আরও সুখের দিন আসছে। বড় রিটেল সংস্থাগুলি খুব সহজেই খাদ্যের মান-সুরক্ষা আইন মেনে কাজ করতে পারবে। যার ফলে সর্বোচ্চ মানের খাদ্যপণ্যই পাবেন ক্রেতারা।” |