|
|
|
|
অস্থি বিশেষজ্ঞ ছুটিতে, আসানসোলে হয়রানি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
ছুটিতে গিয়েছেন আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের একমাত্র অস্থি বিশেষজ্ঞ। বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্ততির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু অনেকে টাকার অভাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা বেসরকারি নার্সিংহোমে যেতে পারছেন না। সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
হাসপাতালের অস্থি বিভাগের এই দূর্গতিতে ক্ষুব্ধ মহকুমার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় লাইন দাঁড়িয়েও উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। পথ দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে গিয়েছে শুভ্র চট্টরাজ নামে এক ব্যক্তির। তাঁর অভিযোগ, “এখানে আমার চিকিৎসা হয়নি। বর্ধমানে পাঠানো হয়েছে।” হাসপাতালের এই পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন সুপার নিখিল দাস। তিনি জানান, হাসপাতালের একমাত্র অস্থি বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় মাইতি মাসখানেক ধরে ছুটিতে রয়েছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি রাজ্যের বাইরে। হাসপাতালের দুই অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু একটু জটিল সমস্যা হলেই রোগীদের বর্ধমানে পাঠাতে হচ্ছে। সুপার বলেন, “দু’জন কোনও রকমে কাজ চালাচ্ছেন। তাঁরাও ছুটিতে যেতে চাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। এই অবস্থায় বিভাগটি সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।”
রোগী কল্যাণ সমিতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছে আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে। মলয়বাবুর দাবি, তিনি বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছেন। নিখিলবাবু জানান, হাসপাতালের শূন্যপদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে শ্যামাপদবাবুর বক্তব্য, “সুইপার নেই। মর্গে সরকারি ডোম নেই। মর্গটা কোনও রকমে ঠেকা দিয়ে চালানো হচ্ছে। ভয় বা অন্য কোনও কারণে চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব রয়েছে। গত, দু’বছরে যে সব নার্স অবসর নিয়েছেন, তাঁদের আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই ভাবে চিকিৎসকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। তা ছাড়া পিএসসি-র মাধ্যমে জিডিএ এবং সুইপার নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে।” হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এ দিন প্রথমেই চলে যান আউটডোরে। সেখানে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দেখে ধমক দিয়ে শ্যামাপদবাবু বলেন, “ব্যস্ত সময়ে চিকিৎসকদের বিরক্ত করতে আউটডোরে এসেছেন কেন! দু’টোর পর আসবেন।” হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে শ্যামাপদবাবু দেখেন, নিম্নমানের মশলা দিয়ে রান্না করা হচ্ছে, অথচ তাঁকে দেখানো হয় নামি ব্র্যান্ডের মশলার প্যাকেট। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে অধিকর্তা বলেন, “রোগীর কিছু হলে আপনি তো বিপদে পড়ে যাবেন।” কয়লার উনুনের পরিবর্তে গ্যাসে রান্না করার পরামর্শ দেন তিনি। লেবাররুমে (প্রসূতিকক্ষ) এসে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় অধিকর্তার। চার দিকে ঝুল ও নোংরায় ভর্তি। রীতিমতো বিরক্ত শ্যামাপদবাবু পরিষ্কারের নির্দেশ দেন। শিশু-বিভাগে গিয়ে দেখেন, একটি শিশুর পরিজনেরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনেছেন। কেন বাইরে থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতালের সুপার সুদীপ কাঁড়ার অধিকর্তাকে জানান, ওই ওষুধগুলি স্টকে নেই। পরিদর্শন সেরে সুপারের অফিসঘরে বৈঠক করেন অধিকর্তা। হাসপাতালে ভিজিটরদের মন্তব্য লেখার জন্য কোনও খাতা নেই জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। শ্যামাপদবাবুর নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে নতুন খাতা কিনে আনা হয়। এক চক্ষু-বিশেষজ্ঞের অনিয়মিত হাজিরা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞকে শো-কজ করার জন্য সুপারকে নির্দেশ দেন শ্যামাপদবাবু। চিকিৎসাধীন রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য পরিজনেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দিনে দু’বার দেখা করার নির্দেশ দেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, “অনেক কিছুই নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা যদি মানুষকে উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে দেখেন, তা হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়।” |
|
|
|
|
|