ঘোষণাই সার
ছ’মাসের আগে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল হচ্ছে না
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দফায় জঙ্গলমহল সফরে এসে জানিয়েছিলেন, ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হবে। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মী-সঙ্কট এবং পরিকাঠামোগত অব্যবস্থার ছবিটা সরেজমিনে দেখার পর জানিয়ে দিলেন, পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে উন্নীতকরণ সম্ভব নয়। ৬ মাসের আগে ঘাটতি পূরণের যে আশা দেখছেন না--তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ফেরার সময়ে আনন্দবাজারকে শ্যামাপদবাবু বলেন, “আগে ম্যানপাওয়ার-টা বাড়াতে হবে, না হলে জেলা হাসপাতাল হবে কী করে! এর জন্য ৬ মাস তো সময় লাগবেই।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব রয়েছে। বেশ কয়েকটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ১৮টি চিকিৎসক-পদ, ৩৪টি জেনারেল ডিউটি অ্যাটেনডেন্ট (জিডিএ) পদ, ১৭টি সুইপারের পদ শূন্য। নিয়োগ হয়নি বেশ কয়েক বছর। হাসপাতালের কয়েক জন নার্স মেটারনিটি লিভে রয়েছেন। কর্মী-সঙ্কটের জেরে হাসপাতাল জুড়ে চরম অব্যবস্থার ছবি। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পদটিও শূন্য। হাসপাতাল সুপার ছুটিতে গেলে অব্যবস্থার ছবিটা আরও প্রকট হয়ে পড়ে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
এ প্রসঙ্গে শ্যামাপদবাবুর বক্তব্য, “সুইপার নেই। মর্গে সরকারি ডোম নেই। মর্গটা কোনও রকমে ঠেকা দিয়ে চালানো হচ্ছে। ভয় বা অন্য কোনও কারণে চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব রয়েছে। গত, দু’বছরে যে সব নার্স অবসর নিয়েছেন, তাঁদের আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই ভাবে চিকিৎসকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। তা ছাড়া পিএসসি-র মাধ্যমে জিডিএ এবং সুইপার নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে।” হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এ দিন প্রথমেই চলে যান আউটডোরে। সেখানে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দেখে ধমক দিয়ে শ্যামাপদবাবু বলেন, “ব্যস্ত সময়ে চিকিৎসকদের বিরক্ত করতে আউটডোরে এসেছেন কেন! দু’টোর পর আসবেন।” হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে শ্যামাপদবাবু দেখেন, নিম্নমানের মশলা দিয়ে রান্না করা হচ্ছে, অথচ তাঁকে দেখানো হয় নামি ব্র্যান্ডের মশলার প্যাকেট। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে অধিকর্তা বলেন, “রোগীর কিছু হলে আপনি তো বিপদে পড়ে যাবেন।” কয়লার উনুনের পরিবর্তে গ্যাসে রান্না করার পরামর্শ দেন তিনি। লেবাররুমে (প্রসূতিকক্ষ) এসে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় অধিকর্তার। চার দিকে ঝুল ও নোংরায় ভর্তি। রীতিমতো বিরক্ত শ্যামাপদবাবু পরিষ্কারের নির্দেশ দেন। শিশু-বিভাগে গিয়ে দেখেন, একটি শিশুর পরিজনেরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনেছেন। কেন বাইরে থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতালের সুপার সুদীপ কাঁড়ার অধিকর্তাকে জানান, ওই ওষুধগুলি স্টকে নেই। পরিদর্শন সেরে সুপারের অফিসঘরে বৈঠক করেন অধিকর্তা। হাসপাতালে ভিজিটরদের মন্তব্য লেখার জন্য কোনও খাতা নেই জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। শ্যামাপদবাবুর নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে নতুন খাতা কিনে আনা হয়। এক চক্ষু-বিশেষজ্ঞের অনিয়মিত হাজিরা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞকে শো-কজ করার জন্য সুপারকে নির্দেশ দেন শ্যামাপদবাবু। চিকিৎসাধীন রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য পরিজনেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দিনে দু’বার দেখা করার নির্দেশ দেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, “অনেক কিছুই নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা যদি মানুষকে উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে দেখেন, তা হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.