বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল
বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
রিত্রের দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ--মহকুমা হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালের পরিকাঠামোয় নজর দিলে দেখা যাবে সেখানে ‘নেই’-এর তালিকা অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে কি কি আছে, সেই তালিকাকে। কিন্তু পরিষেবা তো বন্ধ রাখা যায় না। অতএব অনেক কিছু ‘নেই’ কে সঙ্গে নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল।
প্রয়োজনীয় সংখ্যায় নেই জেনারেল ফিজিশিয়ান। নেই শল্য চিকিৎসক। মহকুমার দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের চিকিৎসায় ভরসা এই হাসপাতাল। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। ফলে বেহাল পরিকাঠামোয় পান থেকে চুন খসলেই লেগে যাচ্ছে ধুন্ধুমার। ওঠে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। চলে ভাঙচুর। নিগৃহীত হতে হয় চিকিৎসকদের। এই অবস্থায় যে সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে তা স্বীকার করেছেন চিকিৎসকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “লিখে দিন, রোগীর বাড়ির লোকজন যেন একটু ধৈর্য দেখান।”
সম্প্রতি সমস্যা আরও বেড়েছে হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক অন্যত্র কাজে যোগ দেওয়ায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান উমাপদ দাস এবং একজন শল্য চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মণ্ডল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসেস-এ যোগ দিয়েছেন। এ জন্য ওই দুই চিকিৎসক নিজেরাই আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে কাজ করবেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে জেনারেল ফিজিশিয়ানের চারটি পদ খালি থাকলেও আছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। শল্য চিকিৎসকের তিনটি পদ খালি রয়েছে। সেখানেও একই পরিস্থিতি। আছেন মাত্র এক জন। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই যে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় তা স্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এক নজরে
• শয্যাসংখ্যা ২৫০ রোগীর চাপ বাড়লেও বাড়েনি শয্যা
• কর্মীর অভাব তাই বিকেল ৪টের পর বন্ধ হয়ে যায় ব্লাড ব্যাঙ্ক
• সদ্যোজাতদের জন্য নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট তৈরির কাজ শেষ হয়নি
• বিকল্প বিদ্যুৎ হিসাবে থাকা জেনারেটরের অবস্থা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শোচনীয়
• ৪৭ জন সুইপারের পরিবর্তে আছেন মাত্র ১৮ জন, জিডিএ থাকার কথা ৯২ জন আছেন ৪৭ জন
• কোনও প্যাথলজিস্ট না থাকায় কাজ চালান দু’জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট
তা হলে কেমন হাল পরিষেবার?
হাসপাতালের সুপার গোপাল নস্কর বলেন, “অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের সাহায্যে কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, যে দু’জন চিকিৎসক অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁদের পরিবর্ত হিসাবে দ্রুত দু’জন চিকিৎসক পাঠানোর জন্য গত ২৪ নভেম্বর রাজ্যের ডিরেক্টর অব হেলথ্কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। না হলে পরিষেবা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা। এমনকী ভবিষ্যতে শল্য ও মেডিসিন বিভাগ বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ইতিমধ্যেই হাসপাতালের সমস্যার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সহ স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোর যা হাল তাতে পরিবর্ত দু’জন চিকিৎসকের ব্যবস্থা না করেই ওই দুই চিকিৎসককে একসঙ্গে ছাড়া উচিত হয়নি। এর ফলে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তবে শুধু দু’জন চিকিৎসকের না থাকাই একমাত্র সমস্যা নয় এই মহকুমা হাসপাতালে। শয্যাসংখ্যা মাত্র ২৫০। অথচ রোগীর চাপ এত বেশি যে বাধ্য হয়ে মেঝেয় রাখা হয় রোগীদের। বিকেল ৪টের পরে কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে হাসপাতালে থেকে কোনও সুবিধা মিলবে না। কারণ ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। কেননা কর্মীর অভাব। চারজন টেকনিশিয়ান থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। সুপারের কথায়, “চারজন টেকনিশিয়ান ছাড়া ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা রাখা সম্ভব নয়।” বাধ্য হয়েই রোগীর বাড়ির লোকজনদের ছুটতে হয় বাইরে। এ ছাড়া ব্লাড ব্যাঙ্কে তিন জন মেডিক্যাল অফিসারের থাকার কথা। আছেন একজন। সদ্যোজাত শিশুদের জন্য নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। ওই ব্যবস্থা চালু করতে আরও নার্স প্রয়োজন। সে দিকেও রয়েছে সমস্যা। লোডশেডিংয়ে হাসপাতালের কাজ চালানোর জন্য বসানো হয়েছিল একটি ৫০ কেভি জেনারেটর। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু পুরনো এই জেনারেটরের বর্তমানে যা অবস্থা তাতে যে কোনও দিন সেটি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ডেডিকেটেড পাওয়ার’ লাইনের কাজের জন্য নিজের বিধায়ক তহবিল থেকে গোপাল শেঠ অর্থ বরাদ্দ করেছেন। এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে আর বিদ্যুতের সমস্যায় ভুগতে হবে না।
গোটা হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ৪৩ জন্য সুইপারের বদলে রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। ফলে রোগীদের ওয়ার্ডগুলির দশা কেমন তা সহজেই অনুমেয়। ৯২ জন জিডিএ (জেনারেল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট) থাকার কথা। আছেন ৪৭ জন। কোনও প্যাথলজিস্ট না থাকায় দু’জন ল্যাব-টেকনিশিয়ানকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
তবে এত সমস্যার মধ্যে একটি ক্ষেত্রে রোগীরা কিছু স্বস্তি পেয়েছেন। তা হল বর্তমানে রোগীর বাড়ির লোকজনদের আর বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয় না। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমস্ত সমস্যার কথাই স্বাস্থ্য দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীল বলেন, “দু’জন চিকিৎসক না থাকায় সমস্যা একটু হবেই। তবে সুযোগমতো ওই হাসপাতালে চিকিৎসক পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যভবন থেকে জানানো হয়েছে। অন্য যে সব সমস্যা রয়েছে, সেগুলিরও অবশ্যই সমাধান করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.