|
|
|
|
|
ক্যানসারের অন্তিম সেবায় এগিয়ে
কেরল-ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ তিমিরেই
আশিস বসু • আগরতলা
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
কেরল পেরেছে, এ বার ত্রিপুরাও পারল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এখনও সেই তিমিরেই।
অন্তিম পর্যায়ের ক্যানসার রোগীদের জন্য বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করল ত্রিপুরা সরকার। ক্যানসারে আক্রান্ত শয্যাশায়ী মানুষ, যাঁরা হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না, বিনা খরচে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করা হবে। পৌঁছে দেওয়া হবে নিখরচায় ওষুধও।
দেশ জুড়ে ক্যানসার যেভাবে ক্রমশ মহামারীর আকার নিচ্ছে, তাতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা যে খুবই জরুরি, তার উল্লেখ রয়েছে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কিছুদিন আগে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তী ধাপে কেরলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সহায়তায় এই প্রকল্প চালু করে। সেখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক রাজা গোপাল, নগেশ সিহমা এবং নন্দিনীর নেতৃত্বে ২০০৬ সাল থেকে ওই রাজ্যের ১৪টি জেলায় ১০০টি ইউনিটের মাধ্যমে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই ত্রিপুরায় এই ব্যবস্থা চালু হল। ত্রিপুরার আগরতলা ক্যানসার হাসপাতালের সুপার গৌতম মজুমদার জানান, ২০০৮ সালে কেরলের ব্যবস্থা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি তাঁর রাজ্যে এমন প্রস্তাব দেন। কেরলের চিকিৎসকদের সাহায্যেই অন্তিম পর্যায়ের ক্যানসার রোগীদের ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার সার্ভিস’ বা উপশম চিকিৎসা চালু করেছেন তাঁরা।
আগরতলার ওই হাসপাতাল থেকে একজন চিকিৎসক সহ তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী কেরলে গিয়ে ডা: রাজার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তারপরেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর তত্ত্বাবধানে ত্রিপুরা জুড়ে অন্তিম পর্যায়ের ক্যানসার রোগীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। গৌতমবাবু বলেন, “অন্তিম পর্যায়ের ক্যনাসার রোগীদের জীবনের মান উন্নত করতে এই পদক্ষেপ জরুরি।”
আগরতলায় যোগেন্দ্রনগরের প্রেমা দাস, কৃষ্ণনগরের নিধুরানী দেববর্মা, বনমালীপুরের বিজয়া দেববর্মা, রামনগরের সুশীলকুমার সরকারের পরিবারের লোকেরা সরকারি ক্যানসার হাসপাতালের সাম্প্রতিক এই পরিষেবায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই অন্তিম পর্যায়ের রোগীকে বাড়ি থেকে বের করাই সমস্যা হয়ে পড়ে। কখনও আর্থিক কারণে, কখনও লোকবলের অভাবে, কার্যত বিনা চিকিৎসায় তাঁরা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। আগরতলা হাসপাতাল সেই যন্ত্রণার খানিকটা উপশমের ব্যবস্থা করছে।
সুপার জানালেন, সরকারি ব্যবস্থাতে থেকেও কী ভাবে এই পরিষেবার মাত্রা বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ভবিষ্যতে রোগীকে পুষ্টির প্রয়োজনে ‘প্রোটিন সাপোর্ট’ও দেওয়া হবে। আগরতলা ক্যানসার হাসপাতালে সমস্ত রোগীকেই বিনা খরচায় চিকিৎসা করা হয়। ২৩টি অত্যন্ত মূল্যবান ওষুধ হাসপাতাল থেকে রোগীর প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া হয়। এই ওষুধগুলির বাইরে কোনও দামী ওষুধ প্রয়োজন হলে রোগীকে কিনতে হয়। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্যে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী রোগীদের জন্য নিখরচায় রেডিও থেরাপি, কেমো থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ৭০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ক্যানসারে মারা যান বেশ কেয়ক হাজার মানুষ। এঁদের অনেকেই শেষ সময়ে সামান্য চিকিৎসা বা সেবাটুকুও পান না। দু’একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’-এর ব্যবস্থা করলেও সরকারি তরফে এখনও কোনও উদ্যোগই নেই। কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “জেলা স্তরে হাসপাতালগুলিতে ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো চালু করতে গিয়েও বার বার ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। কারণ উদ্যমের অভাব। সমস্ত চিকিৎসাটাই কলকাতামুখী। সেখানেই এখনও পর্যন্ত রাশ টানা যাচ্ছে না। এর উপরে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসার কথা এখনও ভাবা যাচ্ছে না।”
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের চিকিৎসাকে বলে ‘হোম বেসড কেয়ার’। স্বেচ্ছাসেবীদের কয়েকটি দল তৈরি করে এই প্রকল্প চালু করা সম্ভব। ওই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রোগীদের বাড়িতে পাঠালে তাঁরাই উপসর্গ দেখে, চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওষুধ দিতে পারবেন। অন্তিম পর্যায়ে মূলত ব্যথা কমানো, খিদে বাড়ানো, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োজন। এটাই আক্ষেপের বিষয় যে এ রাজ্যের বহু রোগী সেটুকুও না পেয়ে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ” |
|
|
|
|
|