প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষোভ
রিপোর্ট রাজ্যপালকে, তবু ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ
চার-চারটি তদন্ত রিপোর্ট রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-আধিকারিকদের বিকাশ ভবনে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর অবশ্য জানিয়েছে, রিপোর্টে যে-সব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, সেগুলির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য জানার জন্যই এই জিজ্ঞাসাবাদ।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ-সহ বহু অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই নিয়ে উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি, উচ্চশিক্ষা সংসদ, সরকারি অডিটর এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের চারটি পৃথক তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে দফতরে। তার ভিত্তিতে উপাচার্যকে বরখাস্ত করার জন্য রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে এই ব্যাপারে দেখাও করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু।
শিক্ষামন্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর জানিয়েছিলেন, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার দফা তদন্ত হয়েছে এবং প্রতিটিতেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত। কিন্তু পরের দিনই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল উপাচার্যের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরেও বিভিন্ন দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষক বা আধিকারিককে বিকাশ ভবনে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ডেকে পাঠিয়ে কী ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে শিক্ষক-আধিকারিকদের?
২৫ নভেম্বর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটির কয়েক জন সদস্য। জানতে চাওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কেন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছে? ওই শিক্ষকই বা উপাচার্যকে সমর্থন করছেন কেন? প্রবীণ ওই শিক্ষক ঘনিষ্ঠদের কাছে এই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সোমবার ডেকে পাঠানো হয়েছিল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তাঁর কাছে।
উপাচার্য অবশ্য জানান, শিক্ষক-আধিকারিকদের সঙ্গে কথাবার্তার ব্যাপারে তাঁর কাছে সবিস্তার তথ্য নেই। তিনি বলেন, “শিক্ষক-আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে সরকারের তরফে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তবে স্নাতকোত্তরে ভর্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবনিকেশ-সহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে বলে শুনেছি।”
চার দফা তদন্তের পরেও বিকাশ ভবনে ডেকে পাঠিয়ে এই ধরনের জিজ্ঞাসাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, যে-সব অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, আসলে সেগুলির ভিত্তি নেই। তাই আবার জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন করে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।
বিকাশ ভবনের তরফে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি। কর্তাদের ব্যাখ্যা, তদন্তের জন্য এক দিন কোনও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানকার গোলমাল ধরা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে দফতরের কাছে কিছু তথ্য রয়েছে। আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেগুলির ব্যাপারেই বিশদ ভাবে জেনে নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের এই কাজটি করছে কারা? উচ্চশিক্ষা দফতর না উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি?
সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কথায় তা স্পষ্ট হচ্ছে না। দু’দিনই জিজ্ঞাসাবাদের সময় উচ্চশিক্ষা উপদেষ্টা কমিটির কোনও কোনও সদস্য হাজির ছিলেন। সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার নিজেই। উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে উপদেষ্টা কমিটিই। আর অভিরূপবাবুর দাবি, এতে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই। এটি ‘প্রশাসনিক কাজ’। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওখানে আমার না-থাকলেও চলত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেই বিষয়েই ওঁদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে। সকলকেই তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।”
তা হলে কি রিপোর্ট তৈরির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়নি?
অভিরূপবাবু বলেন, “আমরা তো একটা প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছি।”
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, এই জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ তো চলেই। সবই তো আর আমাকে জানিয়ে হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.