দীর্ঘ সময় ধরে সুবে বাংলার প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র মুর্শিদাবাদে থাকতেন খোদ নবাব। ছিলেন আমির ওমরাহেরা। তাঁদের পরিবার। বহু রাজকর্মচারী। তাঁদের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছিল অসংখ্য ভবন। বড় বড় প্রাসাদ-ইমারতের পাশাপাশি সেই সব ভবনের বেশ কিছু এখনও রয়ে গিয়েছে এই জেলার নানা প্রান্তে। সেই সব পুরাভবনগুলির কোনও কোনওটার বয়স তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো বছর। প্রশ্ন উঠছে, এই সব ভবনগুলি নিয়ে কী করা উচিত।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (কলকাতা মণ্ডল) অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা বিমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। এ ছাড়াও মুর্শিদাবাদ শহর, কাশিমবাজার এলাকা ছাড়াও কান্দি মহকুমা এলাকাতেও বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী ভবন রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানা যার হাতেই থাকুক না কেন, ওই বাড়িগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, কোনও বিশেষ যুগের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিকও নির্দেশ করে ওই ভবনগুলি। ফলে ঐতিহ্যবাহী ভবনের একটা তালিকা তৈরি করা এবং সেই তালিকা মত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।” |
বাড়ির ফাঁদে প্রাচীন ভবন। নিজস্ব চিত্র। |
বিমলবাবুর কথায়, “হেরিটেজ ভবনের নির্মাণ শৈলী বা গঠন শৈলীর বৈশিষ্ট্য, কোন যুগের স্মারক, কার আমলে তৈরি, ভবনের প্রাচীনতা ও গুরুত্ব, বাড়ির মালিক-সহ বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করার পাশাপাশি ওই ভবনের ছবিও তুলে রাখা প্রয়োজন।” বিমলবাবু বলেন, “ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কতগুলো হেরিটেজ ভবন রয়েছে, তার জাতীয় পঞ্জি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্ব দেয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে। সেই মতো এই রাজ্যে হেরিটেজ ভবনের ডকুমেন্টেশনের কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ৫ বছরের মধ্যে তা শেষ করার কথাও বলা হয়। কিন্তু ওই কাজ কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই।” হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরাতত্ত্ববিদ গৌতম হালদার বলেন, “ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের ভবন সমীক্ষা শাখার ওই কাজ করার কথা। কিন্তু পরিকাঠামোগত কিছু ঘাটতি রয়েছে। ফলে ওই কাজ হয়নি বলেই আমার ব্যক্তিগত মত।”
মুর্শিদাবাদ জেলা সংগ্রহশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিভিন্ন হেরিটেজ বিল্ডিং থেকে পুরাসম্পদগুলি সংস্কার করে ডকুমেন্টেশন করা উচিত, যাতে আগামী প্রজন্মের কাছে জেলার ইতিহাস তুলে ধরা যায়। অনেক ইতিহাস ভাগীরথীর গর্ভে চলে গিয়েছে। আগামী দিন চার বাংলা মন্দির, গঙ্গেশ্বর মন্দিরও ভাগীরথীতে তলিয়ে যেতে পারে। এ জন্যই ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন।” |