রাস্তার বদলে আলই ভরসা মিরহাটিতে
স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কী রোজকার পানীয় জলের জন্যও নির্ভর করতে হয় পড়শি জেলার উপরে। প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে নিয়ে আসতে হয় পানীয় জল। গ্রামে তৈরিই হয়নি চলাচলের রাস্তা। এ ভাবেই দিন কাটছে খড়গ্রামের পদমকান্দি, চিঁচুড়িয়া, মিরহাটি, পাতডাঙা, বিশ্বনাথপুর, কাদিপুরের মতো গ্রামের বাসিন্দাদের।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এত দিনেও উন্নয়নের লেশমাত্র দেখতে পেলেন না তাঁরা। ভুড়ি ভুড়ি প্রতিশ্রুতি মিললেও কাজের সময়ে পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ। মুর্শিদাবাদের একেবারে সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চিঁচুড়িয়া আর মিরহাটি। প্রায় ৯ কিলোমিটার দুরে বীরভূমের চাঁদপাড়া গ্রাম। অসুখ-বিসুখ কিংবা অন্য কোনও প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের ছুটতে হয় সেখানেই। এমন কী গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে হলেও ভরসা সেই পড়শি জেলার গ্রামই।
সব মিলিয়ে দুই গ্রামে হাজার তিনেক মানুষের বাস। অথচ এত দিনে গ্রামে একটাও রাস্তা তৈরি হয়নি। আর রাত বিরেতে গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় গ্রামবাসীদের। ছোট গাড়ি তো দূর অস্ত, মোটরবাইক কিংবা নিদেন পক্ষে একটা সাইকেলের ব্যবস্থা করতেও কালঘআম ছুটে যায় সকলের। অ্যাম্বুল্যান্স তো গ্রামে কখনও ঢোকেইনি। অগত্যা ফুট তিনেকের ধামায় বসিয়ে কাঁধে করে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন গ্রামবাসীরা। এ ব্যাপারেও ভরসা সেই বীরভূমের রামপরহাট মহকুমা হাসপাতাল। তবে গ্রামবাসীরা জানালেন, চাঁদপাড়া পর্যন্ত যাওয়ার পরে দ্বিগুণ ভাড়া দিলে একটা গাড়ির ব্যবস্থা হয়েই যায়।
এ ভাবেই চলে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।
একই দির্ভোগ নিত্যদিন পোহাতে হয় গ্রামের খুদে পড়ুয়াদের। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে চাঁদপাড়া হাইস্কুলে যেতে হয় তাদের। আর উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গন্তব্য সেই রামপুরহাট। গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভজিৎ সাহা বলল, “এখন তবু ঠিক আছে। বর্ষাকালে ব্যাগে করে জামা কাপড় নিয়ে যেতে হয় রোজ। গ্রামে তো রাস্তা নেই। জমির আল ধরে যেতে গিয়ে জল কাদায় জামাকাপড় ভিজে যায়।” গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মণ্ডল, পূর্ণচন্দ্র সাহারা বললেন, “বহু বার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়ে আমরা ন্যুনতম উন্নয়নের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আখেরে লাভ কিছুই হয়নি। এখন যেটুকু রাস্তার মত অংশ রয়েছে তাও গ্রামবাসীরা নিজেরা তৈরি করেছেন। আশির দশকে মাটি ফেলে গ্রামের লোকেরাই রাস্তা তৈরি করেছিল। পঞ্চায়েত থেকে কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি।”
অফিস কিংবা আদালতে যেতে খড়গ্রাম কিংবা কান্দি যেতে হলে গ্রামবাসীদের প্রায় ৪৭ কিমি রাস্তা পেরোতে হয়। বীরভূমের চাঁদপাড়া, পাতরা, তেঁতুলিয়া, বিষ্ণুপুর ঘুরে আসতে হয় তাঁদের। অথচ গ্রাম থেকে খড়গ্রামের দুরত্ব মাত্র ২৩ কিমি। কিন্তু রাস্তা তো নেই।
মিরাটি গ্রামের বাসিন্দা ও খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির প্রক্তন কংগ্রেস সদস্য রাধাবিনোদ ঘোষ বলেন, “আমি বহু বার ওই এলাকায় রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমরা চাই এ ব্যাপারে সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করুন। তাহলে যদি কিছু একটা উপায় হয়। স্থানীয় দ্বারকা ও ঘুষকরা নদীর উপরে সেতু তৈরি করতে প্রচুর টাকার দরকার।”
গ্রামের কৃষক জহরলাল শেখ বলেন, “ভোট এলে সব পক্ষের নেতারা এসে অনেক আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু ভোট মিটলে তাদের কারোরই আর দেখা পাওয়া যায় না। আমাদের এই কষ্ট করেই দিন কাটাতে হয়।”
পাদমকান্দির পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক ঘোষ বলেন, “আমি এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। কেন যে এত দিনেও ওই এলাকায় একটা রাস্তা তৈরি হয়নি তার উত্তর আমার কাছেও নেই।”
ওই এলকায় রাস্তা তৈরি ও গ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও এলাকার সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে বলে জানালেন খড়গ্রামের কংগ্রেস বিধায়ক আশিস মার্জিত। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে যাতে ওই এলাকায় একটা রাস্তা তৈরি করে দেওয়া যায় সেটা দেখাই আমার কাজ। আমি চেষ্টা করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই এলাকায় রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হবে।”
প্রতিশ্রুতি তো আগেও অনেক মিলেছে তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বারও আশায় বুক বাঁধছেন গ্রামবাসীরা। যদি একটা কিছু উপায় হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.