|
|
|
|
কৃষক ভবনে বৈঠক দলীয় নেতৃত্বের |
ঘরছাড়াদের ফেরাতে তৎপরতা সিপিএমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিধানসভা ভোটের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘর ছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ঘরে ফেরাতে তৎপর হচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তবে দলীয় উদ্যোগে, দল বেঁধে কর্মী-সমর্থকেরা ঘরে ফিরুন--চাইছেন না নেতারা। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা, দল বেঁধে ফিরলে হামলা হতে পারে। হামলার দায় ঝেড়ে ফেলে তৃণমূলও তখন বামকর্মীদের বিরুদ্ধেই ‘গ্রাম-দখলে’র অপপ্রচারে নেমে পড়তে পারে। তাই ঘর ছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি সিপিএম নেতৃত্বের পরামর্শ, ‘নিজেদের উদ্যোগেই ঘরে ফিরুন। ফেরার সময় কোনও সমস্যা হলে দল পাশে থাকবে’।
দলীয় সূত্রে খবর, ক’দিন আগে মেদিনীপুর শহরে কৃষকভবনে কেশপুরের কয়েক জন নেতার সঙ্গে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার-সহ সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য। সেই বৈঠকে এই পরামর্শ দেন খোদ দীপকবাবুই। বৈঠকে জেলা নেতৃত্বকে কিছুটা সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়। একাংশ কর্মী অভিযোগ করেন, আগে নিচুতলার কর্মীদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হত না। জেলা নেতৃত্ব নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজকর্ম করতেন। পাশাপাশি তাঁদের বক্তব্য, এখন ঘরে ফেরার পরিস্থিতিও নেই। ঘরে ফিরলেই হামলা হবে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, “জেলা সম্পাদক এমনও বলেছেন যে, ‘ঘরে ফিরুন। তেমন হলে আপাতত সক্রিয় ভাবে পার্টির কাজ করতে হবে না’। তবে এ ভাবে ঘর ছেড়ে থাকবেন না।” শুধু কেশপুরই নয়, গড়বেতা-শালবনির নেতাদের সঙ্গেও এমন বৈঠক করেছেন জেলা নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, কেশপুর-গড়বেতায় লোকাল কমিটির সম্মেলন এখনও শুরু হয়নি। লোকাল-স্তরের সম্মেলন শেষ হলে জোনাল সম্মেলন হবে। তার আগে স্থানীয় নেতাদের ঘরে ফেরাতেই জেলা নেতৃত্বের এই তৎপরতা।
রাজ্যে পালাবদলের পর জেলায় ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ে সিপিএম। দলের বহু কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। একাংশ কর্মী-সমর্থক ঘর ছাড়া হন। এ বারের ভোটে সিপিএম যে সব এলাকায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে পেরেছে, সেই গড়বেতা-কেশপুরেও একই পরিস্থিতি। ফলে, এতটুকু স্বস্তিতে নেই দলের নেতা-কর্মীরা। অথচ, ক’মাস আগেও ‘লাল-দুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া সব এলোমেলো করে দিয়েছে। ভাঙন ধরিয়েছে সিপিএমের সংগঠনেও। জেলার ১৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০টিই বিরোধীদের দখলে। বামেদের হাতে ৯টি। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, বিজেপি ও নির্দল ‘কাঁটা’ না-থাকলে বাম-বিরোধীরা আরও ৬টি আসনেও জিতে যেতে পারত।
এ হেন পরিস্থিতিতে ভোটের ফল-প্রকাশের পর থেকেই নতুন শাসকদলের লোকজনের দাপটে ঘর ছাড়া হন সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। তাঁরা অনেকেই এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। তাঁরা যেমন দুরবস্থায় রয়েছেন, উদ্বেগে রয়েছেন দলের নেতারাও। তাঁরা মনে করছেন, স্থানীয়-স্তরে যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন, তাঁরা ঘরে না-ফিরলে বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের রাশ ধরে রাখা দিনে দিনে আরও মুশকিল হয়ে পড়বে। পঞ্চায়েত ভোটও আসছে। কেশপুরে মোট ৭টি লোকাল কমিটি রয়েছে। খেতুয়া, আনন্দপুর, সাহসপুর, কেশপুর, নেড়াদেউল, ছুতারগেড়্যা ও বিশ্বনাথপুর। এর মধ্যে খেতুয়া, আনন্দপুর, সাহসপুর ও নেড়াদেউল লোকাল কমিটির সম্পাদকেরা এখনও ঘর ছাড়া। গড়বেতায় মোট ৭টি লোকাল কমিটি রয়েছে। খড়কুশমা, ফুলবেড়িয়া, ধাদিকা, চমকাইতলা, গড়বেতা, ফতেসিংহপুর ও আমলাগোড়া। এর মধ্যে গড়বেতা ও চমকাইতলা বাদে বাকি ৫টি লোকাল কমিটির সম্পাদকই ঘর ছাড়া। শুধু ‘সন্ত্রাসে’র আতঙ্কই নয়, বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে আবার নানা মামলার খাঁড়াও ঝুলছে। তাঁরাও ঘরে ফেরার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। জেলা নেতৃত্বের উদ্যোগে বৈঠক তো হচ্ছেই, তার পাশাপাশি পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের উদ্যোগেও আলোচনায় বসছেন ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকেরা। দলীয় সূত্রে খবর, ক’দিন আগে নেড়াদেউল এলাকার ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীরা মেদিনীপুর শহরে দলেরই এক কার্যালয়ে অলোচনায় বসেন। কিছু দিনের ব্যবধানে দু’বার এমন আলোচনা হয়। প্রথম বার ১২ জন কর্মী থাকলেও দ্বিতীয় বার ২৮ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। জেলা নেতৃত্বের পরামর্শ মেনে এ ভাবে বিভিন্ন এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের উদ্যোগে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলেই দলীয় সূত্রে খবর। তৃণমূলের ‘বাড়াবাড়ি’ নিয়ে কোনও কোনও এলাকায় জনমনে তৈরি হওয়া অসন্তোষও ঘরে ফিরতে ‘সহায়ক’ হবে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীদের একাংশ।
|
|
|
|
|
|