|
|
|
|
কিষেণজি-বিতর্ক |
তদন্ত ‘প্রভাবিত’ করছেন মুখ্যমন্ত্রীই, বলল সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কিষেণজি মৃত্যু-বিতর্কে আরও নতুন মাত্রা যোগ হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ বার ওই ঘটনার তদন্তকে ‘প্রভাবিত করার চেষ্টা’র অভিযোগ তুলল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। তাদের মতে, ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে যা বলেছেন, তাতে ‘ধোঁয়াশা’ আরও বেড়েছে।
বস্তুত, কিষেণজি’কে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’ হত্যা করা হয়েছে, এমন কোনও অভিযোগ প্রথমে তোলেনি সিপিএম। বরং, সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত ভুয়ো সংঘর্ষ হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বমরকে চিঠি দেওয়ার পরে অন্য সুরেই কথা বলেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁদের কাছে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’র কোনও তথ্য নেই। যা ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা সরকারই দিতে পারবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী গত রবিবার বেহালায় একটি উপনির্বাচনী জনসভায় কিষেণজি’র মৃত্যুর ঘটনার ‘ব্যাখ্যা’ দিতে গিয়ে যা বলেছেন, তাতেই গোটা বিষয় ‘জটিলতর’ হয়েছে বলে সিপিএম মনে করছে।
বিরোধী দলনেতা এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র মঙ্গলবার বলেছেন, “ব্যালিস্টিক এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও আসেনি। কী হয়েছিল, জানার জন্য সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আদালতেও বিচারাধীন বিষয় হতে চলেছে। কিন্তু তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে তদন্ত প্রভাবিত হবে। কোনও তথ্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা সরকার করছে কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।”
একই সঙ্গে সূর্যবাবুর বক্তব্য, “এই কিষেণজি বিগত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী-সহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিলেন। আমরা মাওবাদীদের কমিউনিস্ট বা বামপন্থী মনে করি না, তাদের সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু কিষেণজি’র মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে সেই প্রশ্ন অনেক বেড়ে গিয়েছে!”
সিপিএম যে প্রশ্নগুলি তুলেছে, তার সবই মুখ্যমন্ত্রীর রবিবারের বক্তব্য-জনিত।
যেমন:
• মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিন দিন ধরে মাইক নিয়ে প্রচার চালিয়ে কিষেণজি’দের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “ওখানে মাইক নিয়ে প্রচার হল আর কেউ কিছু শুনল না? এত বড় যখন ঘটনা, এখানে কেন মাইক নিয়ে বলে দেওয়া হল না যে, কিষেণজি’দের ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বলছে। তা হলে সকলেই জানতে পারতেন। ঘটনার পরে এই রকম একটা কথা বলার কী ভিত্তি আছে?”
• মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কিষেণজি’দের পুলিশ ‘সেফ প্যাসেজ’ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। সিপিএমের প্রশ্ন, কিষেণজি’দের ‘সেফ প্যাসেজ’ দেওয়ার কথা বলা হয় কী করে? যদি শেষ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়েও থাকে, তা হলে তার সুযোগ নিয়ে তাঁর সব সঙ্গী বেরিয়ে চলে গেল আর যৌথ বাহিনীর সামনে অরক্ষিত হয়ে রয়ে গেলেন শুধু কিষেণজি? তা হলে কি কোনও ‘বোঝাপড়া’ হয়েছিল সরকারের সঙ্গে?
• মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মাওবাদীরাই প্রথম গুলি চালিয়েছিল। সিপিএমের বক্তব্য, কিষেণজি’র মরদেহের শুধু ময়না তদন্ত থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তার জন্য ব্যালিস্টিক এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট দরকার। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে ওই কথা প্রকাশ্যে বলে দিলেন? তার মানে কি তদন্তকে ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা হল?
• মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, হাজার রাউন্ড গুলি চলেছিল। সিপিএমের প্রশ্ন, এত গুলির পরে শুধু কিষেণজি’র মৃতদেহ উদ্ধার হল অথচ আর কেউ আহত পর্যন্ত হল না? এক জওয়ানের হাত জখম হওয়া ছাড়া!
বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তখন তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবও সরকারকেই দিতে হবে। সূর্যবাবুর কথায়, “মধ্যস্থতাকারীদের কী করতে বলা হয়েছিল এবং কোথায় তাঁদের সঙ্গে সমস্যা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তা ছাড়া, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্য দু’টি রাজ্যের পুলিশও কিষেণজি’কে খুঁজছিল। তিনি জীবিত ধরা পড়লে অনেক তথ্য বেরিয়ে পড়ত, এই আশঙ্কা থেকেই কি সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? কেন্দ্রীয় সরকার কি সব ঘটনা জানত? এই সব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই!” প্রসঙ্গত, এসইউসি-প্রভাবিত সংগঠন ‘শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী মঞ্চে’র তরফে তরুণ সান্যাল এ দিন এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, কিষেণজি’র রাজনৈতিক বিশ্বাস ও কর্মপ্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন থাকুক বা না থাকুক, তাঁর মৃত্যু নিয়ে এত অভিযোগ ওঠায় ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।
|
|
|
|
|
|