|
|
|
|
মাত্র ১৮ শতাংশ পড়ুয়ার ভোট মেদিনীপুর কলেজে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। মঙ্গলবার ছাত্র সংসদের ভোট হয়। দুপুরে ফল বেরোনোর পর দেখা যায়, বেশির ভাগ আসনেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থিত প্রার্থীরা। প্রায় এক দশক পরে মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র সংসদ বাম-বিরোধীরা দখল করল।
তবে, ভোট হলেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলেই। কারণ, এ দিন ভোট পড়েছে মাত্র ১৭.৬ শতাংশ। মেদিনীপুর কলেজে এর আগে এত কম ভোট কবে পড়েছে, আদৌ পড়েছে কি না তা কেউই মনে করতে পারছেন না। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে প্রতি বছর ৭০ শতাংশের উপরে ভোট পড়ে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, “অন্যবারের তুলনায় এ বার একটু কম ভোট পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তেমন সাড়া ছিল না। কেন এই পরিস্থিতি হল বুঝতে পারছি না।” কলেজের এক অধ্যাপকের বক্তব্য, “নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় একাংশ অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের কলেজে পাঠাননি।” |
 |
ছাত্র সংসদের ভোট ঘিরেও নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
গত সেপ্টেম্বরেই মেদিনীপুর কলেজে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ভোট স্থগিত রাখার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এসএফআই। সংগঠনের এক কর্মী সে বার মামলা করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে এসএফআইয়ের অভিযোগ ছিল, তাদের কর্মী-সমর্থকদের মনোনয়নই জমা দিতে দেওয়া হয়নি। তখন হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। পরে অবশ্য আদালতের যাবতীয় নির্দেশ মেনে ফের নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের ছাত্র-সংসদে রয়েছে ৮৭টি আসন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভোট নেওয়া হয়েছে ৬৪টি আসনে। বাকি ২৩টি আসনে পরে ভোট নেওয়া হবে। কলেজের এক আধিকারিক জানান, “২৩টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনে কোনও মনোনয়নই জমা পড়েনি। বাকি ১৭টি আসনে যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। তাই ওই আসনগুলিতে ভোটগ্রহণ হয়নি।” কলেজ সূত্রে খবর, এ দিনের ৬৪টি আসনে ২৯০৩ জন ছাত্রছাত্রীর ভোট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ভোট পড়েছে মাত্র ৫১১টি! কেন এই পরিস্থিতি? এসএফআই নেতা সৌগত পণ্ডার মন্তব্য, “ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। একটি আসনেও আমাদের প্রার্থী ছিল না। ওদের সন্ত্রাসের ফলেই এই অবস্থা।”
ছাত্র পরিষদ নেতা মহম্মদ সইফুল্লা-রও অভিযোগ, “ওই কলেজে ভোটের পরিবেশই ছিল না।” ডিএসও নেতা কুমারেশ দে বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভোটদানের প্রবণতাও অনেকটা কমেছে। সেই অর্থে ভোটের আমেজ ছিল না।” এক ছাত্রের বক্তব্য, “এ বার কলেজে সে ভাবে বিরোধী শক্তিই (পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিরোধী হওয়ার কথা এসএফআইয়ের) নেই। তাই ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ কমেছে। নির্বাচনের ফলাফল কী হতে চলেছে, কমবেশি তা সবাই জানতেন।” ঘুরে-ফিরে সবার বক্তব্যেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকেই কটাক্ষ।
সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বুদ্ধ মণ্ডলের সাফাই, “সাধারণত এই সময়ে ভোট হয় না। সামনে পরীক্ষা। তাই একটু কম ভোট পড়েছে।” এ দিন যে ৬৪টি আসনে ভোট হয়েছে তার মধ্যে ৫৫টি পেয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, ৮টি ডিএসও ও ১টি ছাত্র পরিষদ। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম হলেও ভোটকে কেন্দ্র করে পুলিশি প্রহরা ছিল নজরকাড়া। এ দিন সকাল থেকেই কলেজের সামনে ছিলেন দু’জন ডিএসপি, পাঁচ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। কলেজের আশপাশ এলাকায় দুপুর পর্যন্ত পুলিশি টহল চলেছে। জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতেই এই বন্দোবস্ত।”
বিকেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিজয় মিছিল থেকে পার্টি অফিসে আবির ছোঁড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। বিজয় মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ ঘোরে। এই পথেই রয়েছে সিপিএমের জেলা অফিস, জোনাল অফিস, এসএফআইয়ের জেলা অফিস। এই তিনটি অফিসেই সবুজ আবির দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বক্তব্য, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি! |
|
|
 |
|
|