চিঠিতে কখনও লেখা থাকছে ‘এ বার এ পাড়ার পালা’, কখনও ‘দেখি আমাদের চুরি কে আটকায়’। এ ভাবে রীতিমতো জানান দিয়েই ক্রমাগত হানা দিচ্ছিল চোরেরা। তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা রাতে এলাকায় পাহারা দিতে শুরু করেন। শেষমেশ মঙ্গলবার ভোরের দিকে দুই যুবককে চোর সন্দেহে পাকড়াও করে বেধড়ক মারধর করা হলে মৃত্যু হয় এক জনের। গুরুতর আহত অন্য জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় সকাল থেকেই চাঞ্চল্য ছাড়ায় বালির নিশ্চিন্দার পূর্ব পাড়ার ওই এলাকায়।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অজয় দাস। তাঁর বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যায়নি। আহত সোমনাথ অধিকারী দমদম মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা। এ দিন ভোরে বালি থানায় খবর যায়, পূর্ব পাড়ার বাসিন্দারা দু’জন চোরকে ধরে রেখেছে। পুলিশ গিয়ে দেখে দুই যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় অজয়ের। সোমনাথকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি। কে বা কারা ওই দুই যুবককে এ ভাবে মারধর করল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই ওই পাড়ায় চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি ক্ষেত্রে চুরি করতে এসে বাড়ির লোককে মারধরও করা হয়েছে বলেও বালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এর পরেই ওই এলাকায় টহলদারি শুরু হয়। পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দারাও পালা করে রাতে এলাকায় পাহারা দিতে শুরু করেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহখানেক আগে এক দিন সকালে পাড়ারই একটি চায়ের দোকানের সামনে একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখা যায়। রুলটানা কাগজটিতে ফের ওই এলাকায় চুরি করতে আসার হুমকি দেওয়া ছিল। বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকে। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব দাস বলেন, “চিঠি পাওয়ার পরের দিনই পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ সিংহের বাড়িতে চুরি করতে ঢোকে চোরেরা। গোবিন্দবাবুর ছেলে ঘুম থেকে উঠে বাধা দেওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়। সে দিনই এলাকার আর এক জনের বাড়িতেও চুরি হয়।”
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। অধিকাংশ বাসিন্দাই মারধরের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। কারা ওই দুই যুবককে পাকড়াও করেছিলেন কিংবা রাতে কারা পাহারায় ছিলেন তা-ও জানাতে চাননি কেউই। তবে শুধু নিশ্চিন্দা পূর্ব পাড়া নয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাশের পাড়া নর্থ ঘোষপাড়াতেও সোমবার সকালে একটি বন্ধ দোকানের সামনে একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। এক বাসিন্দা শম্ভু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ব পাড়ার চুরির ঘটনায় আমরাও আতঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু সোমবার সকালে সাদা কাগজে লাল কালিতে ‘এ বার এ পাড়ার পালা’ লেখাটা দেখে সবাই খুবই চিন্তায় পড়ি।”
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রশিদ মুনির খান বলেন, “একটি খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। যারা ওই গণপিটুনিতে জড়িত, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। চিঠির বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |