বিভিন্ন সরকারি দফতরকে আয় বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিকে, তাঁর দলের এক নেতার বিরুদ্ধেই রাজস্ব আদায়ে বাধাদানের অভিযোগ উঠল পুড়শুড়ায়।
অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অভিযোগে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জরিমানা করেছিলেন এক ব্যক্তিকে। রাজস্বও ধার্য্য করেন। এর প্রতিবাদে জয়দেব জানা নামে পুড়শুড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি লোকলস্কর নিয়ে ওই আধিকারিককে ঘেরাও করেন। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে পুড়শুড়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয়ে। আধিকারিক দেবব্রত চক্রবর্তীকে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখা হয়। শেষে, জরিমানা মকুবের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঘেরাও-মুক্ত হন তিনি। দেবব্রতবাবু বলেন, “মাটি কাটার পরিমাণ অনুযায়ী রাজস্ব দিতেই হবে। তবে জরিমানার টাকা মকুব করতে আমাকে বাধ্য করা হয়েছে।” ঘটনার কথা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে মন্তব্য করেছেন। ঘেরাওয়ের ঘটনায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই সামনের সারিতে ছিলেন বলে দফতর সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শ্যামপুর মৌজায় প্রদীপ পাল নামে এক ব্যক্তি তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছিলেন। সেই মাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় একটি রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে দাবি প্রদীপবাবুর। গ্রামের কিছু মানুষ এতে আপত্তি জানান। তাঁদের বক্তব্য, ভাঙনপ্রবণ এলাকার মাটি কাটায় আরও বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে গত শুক্রবার সরেজমিনে আসেন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক। মাটির মাপ দেখে রাজস্বের পরিমাণ জানিয়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে বিনা অনুমতিতে মাটি কাটার জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন। সেই টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন প্রদীপবাবু। ১০ হাজার টাকা মঙ্গলবারই জমা দেবেন বলে ঠিক হয়।
কিন্তু এ দিন প্রদীপবাবু টাকা দিতে আসার পরিবর্তে স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়দেব জানা লোকজন নিয়ে এসে দেবব্রতবাবুকে দফতরেই ঘেরাও করেন। দেবব্রতবাবু বলেন, “আমরা সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা চূড়ান্ত হতাশাজনক।” অন্য দিকে জয়দেববাবুর যুক্তি, “ওই মাটি বন্যার জল ঢুকে জমেছে। সরকারি নির্দেশ আছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমি উদ্ধার করতে জমা মাটি সরিয়ে ফেলা যাবে। নিজের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে এক জনকে কেন জরিমানা দিতে হবে? রাজস্বই বা কেন দিতে হবে? তা ছাড়া, জমির মালিককে গত শুক্রবার এই দফতরে ঘণ্টাখানেক আটকে রাখা হয়েছিল।” ‘অবৈধ ভাবে’ জরিমানা আদায়ের জন্যই ওই আধিকারিককে ঘেরাও করা হয়েছিল বলে জানান জয়দেববাবু।
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি দেবব্রতবাবু। তাঁর বক্তব্য, জমির মালিক জরিমানা, রাজস্ব দিতে অস্বীকার করেছিলেন। সে সব নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে কিছুটা সময় লাগে। তাঁর আরও বক্তব্য, প্রদীপবাবুর কাছে সরকার বালিখাদানের রাজস্ব বাবদ ২ লক্ষেরও বেশি টাকা পায়। প্রদীপবাবু বলেন, “বন্যায় জমিতে পলি পড়েছিল। তা সরাচ্ছিলাম। সরকারি নিয়ম-কানুন জানা ছিল না। আমি তৃণমূল নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাই।”
স্থানীয় নেতৃত্বের পাশেই দাঁড়িয়েছেন পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান। তিনি বলেন, “ওই দফতর থেকে আগাম কোনও নোটিস না দিয়েই জরিমানা ধার্য্য করা হয়। অবৈধ ভাবে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছিল।” |