ছাত্রীর চিকিৎসায় এগিয়ে এল শ্রীরামপুরের পুলিশ
কুপন ছাপিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আট বছরের মেয়ের জন্য সাহায্য চাইছিলেন বাবা। পুলিশ কর্তার চোখে পড়ে ওই ঘটনা। শ্রীরামপুর থানার তরফে মেয়ের বাবাকে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ, বুধবার বাবা-মায়ের সঙ্গে চিকিৎসার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের পুত্তাপূর্তিতে রওনা হচ্ছে নন্দিতা রাম।
হুগলির জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটে থাকতেন ভ্যানচালক হৃষিকেশ রাম। মেয়ে নন্দিতা সেখানকারই একটি প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বছরখানেক আগে স্কুলে খেলার সময়ে এক বন্ধু জল ভেবে ভুল করে তার হাতে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। বাঁ হাত পুড়ে যায় নন্দিতার। জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোনও ফল মেলেনি। কনুইয়ের নীচ থেকে হাত ক্রমশ সরু হতে থাকে। হাত নাড়াতে পারে না ফুটফুটে মেয়েটি। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরেও লাভ হয়নি। হৃষিকেশ জানতে পারেন, উপযুক্ত চিকিৎসা করতে প্রচুর টাকার দরকার। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সব জায়গাতেই ছুটে বেড়ান তিনি। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি।
নিজস্ব চিত্র।
কয়েক মাস আগে শ্রীরামপুরের নতুন মাহেশ এলাকায় বাসা ভাড়া নেন হৃষিকেশ। তিনি বলেন, “মেয়ে বাঁ হাত নাড়াতে পারে না। রাতে ঘুমোতে পারে না। মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণায় কাতরায়। ওর এই অবস্থা কী করে সহ্য করি? তাই নিজেই কুপন ছাপিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে শুরু করেছিলাম। তাতে খুব যে সুবিধা হচ্ছিল, তা নয়।” সম্প্রতি শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে টহল দেওয়ার সময় হৃষিকেশকে দেখেন। অসহায় বাবার সমস্যার কথা শোনেন। এর পরেই তথাগতবাবু বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুত্তাপূর্তিতে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন নন্দিতাকে। হাজার তিরিশ টাকা জোগাড় করে পুলিশ। থানার পুলিশকর্মীরাও দশ হাজার টাকা চাঁদা দেন। তাঁরাই ট্রেনের টিকিট কেটে দেন। এটিএম অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে হৃষিকেশবাবুর নামে।
হৃষিকেশবাবু জানান, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও একবার গিয়েছিলেন। সেখানে শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী নামে পুলিশের এক অফিসারও শ্রীরামপুর থানায় যোগাযোগ করার কথা বলেন। পুলিশের এই ভূমিকায় রীতিমত আপ্লুত হৃষিকেশবাবুর স্ত্রী সঙ্গীতা। ওই দম্পতির কথায়, “পুলিশ আমাদের মেয়ের জন্য যা করল, তাতে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। পুলিশ সম্পর্কে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন বুঝতে পারছি, পুলিশেই এমন লোকও আছেন, যাঁদের মানবিকতা ভোলার নয়।”
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “থানার এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমন কাজে গোটা পুলিশ বিভাগেরই মাথা উঁচু হয়।” আর শ্রীরামপুরের আইসি তথাগত পাণ্ডের কথায়, “একরত্তি মেয়ের চিকিৎসার কাজে লাগতে পেরে কৃতিত্ব নিতে চাই না। শুধু চাই ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।”
কী বলছে ছোট্ট নন্দিতা? তার কথায়, “পুলিশ কাকুরা শুনলাম আমার জন্য অনেক কিছু করছে। ওদের দেখে আর ভয় পাব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.