একশো দিনের কাজ
হাওড়ার হাল শোচনীয়, ব্যতিক্রম শ্যামপুর
ক সময়ে যা ছিল জমির আল, বর্তমানে তা রাস্তা।
দীর্ঘদিন আগে মজে যাওয়া, প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা খাল এখন জলে টইটম্বুর।
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে হাওড়া জেলার মধ্যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাচ্ছে শ্যামপুর-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত শ্যামপুর পঞ্চায়েত। এ কথা বলছেন প্রশাসনের কর্তারাই। সবচেয়ে খুশি গ্রামবাসীরা। তাঁরা যেমন কাজ পেয়েছেন, তেমনই পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগে ফিরেছে গ্রামের হালও।
হাওড়া জেলায় সামগ্রিক ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ শোচনীয়। প্রশাসনের হিসাবেই, প্রকল্পটিতে চলতি আর্থিক বছরে গড়ে ১২ দিন কাজ পেয়েছেন গ্রামবাসীরা। সোমবার জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পটির শোচনীয় হাল দেখে সমালোচনা করেন। শ্যামপুর পঞ্চায়েত অবশ্য ব্যতিক্রম। পঞ্চায়েতের হিসেবে, চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই মজুরেরা কাজ পেয়েছেন গড়ে ২১ দিন। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা।
পঞ্চায়েতটিতে রয়েছে ৮টি গ্রাম। দামোদরের খাল থেকে পঞ্চায়েত অফিস পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার মাটির রাস্তাটি এখন গ্রামবাসীরা নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। কিছু দিন আগেও যা ছিল মূলত আল। এখন তা পাঁচ ফুট চওড়া হয়েছে। স্থানীয় ইটভাটার কর্মী সৌমিত্র দাস বলেন, “এক সময়ে অনেক ঘুরে ভাটায় যেতে হত। রাস্তা হওয়ায় সহজে যাতায়াত করছি।” রাস্তা তৈরিতে খরচ হয়েছে এক লক্ষ টাকা। প্রকল্পটিতে কাজ করেছেন সন্ধ্যা দাস। তিনি বলেন, “নিজের গ্রামের রাস্তা নিজেরাই তৈরি করেছি। মজুরি পেয়েছি। এর আনন্দই আলাদা।”
ওই রাস্তা তৈরি হয়ে যাওয়ায় দু’পাশের জমির দাম বেড়ে গিয়েছে। মধুসূদন দাস নামে এক গ্রামবাসী জানান, জমির দাম ছিল ৪০ হাজার টাকা বিঘা। বর্তমানে এক কাঠারই দাম ৪০ হাজার টাকা ছুঁয়েছে। তাঁর কথায়, “রাস্তা তৈরির ফলেই জমির দাম বেড়েছে।” শ্যামপুর বাজার সংলগ্ন রাস্তায় ইট পাতা হয়েছিল অনেক আগে। ইট উঠে গিয়েছিল। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পুরো রাস্তায় নতুন ইট বিছানো হয়েছে। এমন উদাহরণ রয়েছে গোটা পঞ্চায়েত জুড়েই।
ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
ছবির মতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে শ্যামপুর ফুটবল মাঠটিকে। দামোদরের চর থেকে মাটি তুলে এখানে এনে ফেলা হয়েছে। পঞ্চায়েতের হিসেবে, এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। তৈরি হয়েছে চার হাজার শ্রম দিবস। প্রচুর বিলুপ্ত খাল উদ্ধার করে সেগুলি খনন করা হয়েছে। চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। পূর্ত (সড়ক) দফতরের যে সব পিচের রাস্তা আছে, তার ধার নিয়মিত সাফ করা হয়। এক সময়ে ফুটপাথ দখল করে অনেকে ইমারতি দ্রব্য রাখতেন। ফলে নিয়মিত দুর্ঘটনা হত। এখন আর ফুটপাথে কেউ ঘেঁষতে পারেন না বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
জেলা থেকে টাকা আসতে দেরি হওয়ায় এই প্রকল্পে মজুরি পেতে সময় লাগে অন্তত ১৫ দিন। এখানে কাজ করার সাত দিনের মধ্যে মজুরি পেয়ে যান শ্রমিকেরা। গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তাদের দাবি, তাঁদের নিজস্ব তহবিল অনেকটা বেশি। তা থেকে মজুরদের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে জেলা থেকে টাকা এলে সমঝোতা করে নেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, শ্যামপুর বাজারের পাশে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাস্তায় ইট পাতা হয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর উপরে কংক্রিটের ঢালাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত কর্তারা জানান, যে হেতু এই প্রকল্পে ঢালাই করার কোনও আইন নেই, তাই সেই কাজটি করা হচ্ছে নিজস্ব তহবিলে। এ ভাবেই একশো দিনের কাজের সঙ্গে নিজস্ব তহবিলের মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে শ্যামপুর পঞ্চায়েত।
শ্যামচরণ পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছেন। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েতের যে কোনও প্রকল্প রূপায়ণ করতে গেলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। আমি স্যোসাল অডিট দলও করেছি। প্রতিটি কাজ হয়ে গেলে সোস্যাল অডিট দল তা খুঁটিয়ে দেখে। কাজ খারাপ হলে আমাদের তারা জানায়। এখনও অবশ্য আপত্তিকর কিছু আমাদের জানায়নি ওই দল।”
প্রকল্পটিতে সরকারের পক্ষ থেকে জেলার নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটর’ ফটিক চক্রবর্তী বলেন, “কোনও কোনও পঞ্চায়েত অনেক বেশি টাকারও কাজ করেছে। কিন্তু সব দিক খতিয়ে দেখলে শ্যামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে।” শ্যামপুর হাইস্কুলের মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে ১০০ দিনের প্রকল্পে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.