|
|
|
|
সাহিত্যিক মামণি রয়সম গোস্বামীর জীবনাবসান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
সঙ্গীত জগতের পরে অসমের সাহিত্য জগতেও ইন্দ্রপতন। ভূপেন হাজরিকার পর একই মাসে মৃত্যু ঘটল জ্ঞানপীঠ ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক ইন্দিরা মামণি রয়সম গোস্বামীর। আজ সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জীবনাবসান ঘটে তাঁর। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মামণি। তার মধ্যেও ভারত সরকার ও আলফা নেতৃত্বকে শান্তি আলোচনায় বসাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এই অসম-কন্যার প্রয়াণে একই সঙ্গে শোকজ্ঞাপন করেছেন এক দিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, অন্য দিকে আলফা নেতারাও। স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, রাজ্যে তিন দিন ধরে পালিত হবে শোক। পূর্ণ সরকারি মর্যাদায় কাল মামণির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। |
|
শেষ শ্রদ্ধা। গুয়াহাটিতে মামণির বাসভবনে শোকার্ত অনুরাগীরা। মঙ্গলবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মামণিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে। পরে জুলাই মাসে ফিরিয়ে আনা হয় গুয়াহাটিতে। সেই থেকেই গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে শয্যাবন্দি হয়ে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর অবস্থার উন্নতি ঘটছিল না। কাল রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে। অবশেষে আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস পড়ে তাঁর। হাসপাতাল থেকে মামণির মরদেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গাঁধীবস্তির বাসভবনে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-সহ বহু গুণমুগ্ধ সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সর্বসাধারণ যাতে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন সে জন্য এ দিন বিকালে মরদেহ নিয়ে গিয়ে রাখা হয় জাজেস ফিল্ডে। আগামিকাল সকাল দশটায় নবগ্রহ শ্মশানে মামণির শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। এই সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে রাজ্য সরকার কাল ছুটি ঘোষণা করেছে।
১৯৪২ সালের ১৪ নভেম্বর মামণির জন্ম। শৈশব থেকে কৈশোর কেটেছে শিলংয়ে। শিলংয়ের পাইন মাউন্ট স্কুলে পড়েছেন তিনি। পরে অসমিয়া ভাষা এবং সাহিত্য নিয়ে কটন কলেজ থেকে স্নাতক। ১৩ বছর বয়সেই মামণির গল্প ছাপা হয়। ১৯৬২ সালে ‘চিনাকি মরম’ তাঁর প্রথম গল্প সংকলন। পরে সাহিত্যজীবনে একে একে উপহার দিয়েছেন নীলকন্ঠী বজ্র, মামরে ধরা তরোয়াল, চিনাবর স্রোত, দাঁতাল হাতির উইয়ে খোয়া হাওদা, দাশরথীর খোঁজ, উদয়ভানুর চরিত্রের মতো রচনা। আত্মজীবনী আধালিখা দস্তাবেজে নিজেকে খোলা পাতার মতো মেলে ধরেছিলেন মামণি।
শৈশব থেকেই তীব্র অনুভূতিসম্পন্ন মামণির নিত্যসঙ্গী ছিল মানসিক অবসাদ। বহুবার আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। সূখী বিবাহিত জীবনও ক্ষণস্থায়ী ছিল। বিয়ের ১৮ মাসের মাথায় ইঞ্জিনিয়র স্বামী মাধবন রয়সম আয়েঙ্গার শ্রীনগরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। সেই আঘাতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন মামণি। অসমে ফিরে গোয়ালপাড়া সৈনিক স্কুলে পড়ানোর কাজে যোগ দিলেও অবসাদের কবল থেকে মামণির মুক্তি আনে বৃন্দাবন। সেখানে দীর্ঘদিন কাটিয়ে সমাজ, ধর্ম, জীবন-দর্শনে অনেকটা পরিবর্তিত পরিণত মামণি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া বিভাগের ভার নেন। আত্মসঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য ফের আশ্রয় নেন কলমের। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মামণি যাকে বলতেন, ‘বাঁচার তাগিদেই লেখা।” |
|
|
|
|
|