সঙ্কটে দল, নেতারা বিদেশে কেন এত, প্রশ্ন সিপিএমেই
জামিনে মুক্তি পেলেও এখনও চেন্নাইয়ে ফিরতে দেরি আছে ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝির। টু-জি মামলার শুনানির জন্যই তাঁকে থাকতে হবে দিল্লিতে। কানিমোঝির জন্য চেন্নাইয়ে বিপুল অভ্যর্থনার আয়োজন করেছে ডিএমকে। কিন্তু, ৩ ডিসেম্বরের আগে সেই অভ্যর্থনা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাঁর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৬৫ দিন জেলে থাকার পরে মুক্তি পান কানিমোঝি। তিহাড়ের বাইরে তখন রীতিমতো ভিড় জমিয়েছেন প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। প্রচারমাধ্যমকে এড়িয়ে অন্য একটি দরজা দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়ে যায় ডিএমকে নেত্রীর কনভয়। কানিমোঝির মুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি অবশ্য অনেক আগেই দিয়েছিল আদালত। কানিমোঝির জামিনদার হিসেবে হাজির হন ডিএমকে সংসদীয় দলের নেতা টি আর বালু এবং সাংসদ এ কে এস বিজয়ন। সন্ধ্যায় জেল থেকে শেষ দফার প্রক্রিয়া সেরে বাড়ির পথে রওনা দেন তিনি। দিল্লির বাড়িতেও তখন ভিড় পরিজন, কর্মী-সমর্থকদের। গাড়ি থেকে নেমে প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি কানিমোঝি। সোজা চলে যান বাড়ির ভিতরে। বাইরে সমর্থকরা বাজি পোড়ান।
বৃন্দা প্রকাশ রামচন্দ্রন পিল্লাই ইয়েচুরি
বহু দিন আগে মান্না দে গেয়েছিলেন, ‘নিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে, নেই তারা আর কোনও খবরে’! সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থাও কি এখন তা-ই? প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।
দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট আপাতত গিয়েছেন বিলেতে। দলীয় সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক পর ফিরবেন তিনি। কারাটের সঙ্গে গিয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ এক কৃষিবিজ্ঞানী। সাগরপারের আমন্ত্রণ পেয়েই সে দেশে গিয়েছেন কারাট। তার আগে সম্প্রতি প্যারিস গিয়েছেন এস রামচন্দ্রন পিল্লাই। বৃন্দা কারাট গিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা। সীতারাম ইয়েচুরি তুরস্ক থেকে শুরু করে লেবানন, কেমব্রিজ-লন্ডন-ওয়াশিংটন সফর সেরে এসেছেন। এই চার জনই সিপিএমের পলিটব্যুরোর ‘শীর্ষ নেতৃত্ব’ বলে পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে ‘ঘরোয়া পলিটব্যুরো’ বলতে মূলত এঁদেরই বোঝায়।
দলের মধ্যে প্রশ্ন: সাধারণ মানুষের দুর্দশা মোচনে সিপিএম কী করতে চেয়েছে, ভোটার-জনতাকে তা বোঝানো যায়নি। যে জন্য সাম্প্রতিক সমস্ত নির্বাচনে মানুষ দলের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। এমনকী, রাজনৈতিক ভাবে দলের ‘অভিমুখ এবং কর্তব্য’ নিচু তলার কর্মী-বাহিনীর মধ্যেও ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়া যায়নি। যে জন্য কর্মীদের ‘রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবে’র কথা নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর্যালোচনা-সহ অন্যান্য দলিলে উল্লেখ করতে হচ্ছে। নতুন করে বোঝাতে হচ্ছে পার্টি ক্লাসের গুরুত্ব। এই ‘সঙ্কটসময়ে’ পলিটব্যুরোর শীর্ষ নেতাদের কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে ‘সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজমের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে বক্তৃতা করা কতটা অর্থবহ বা তার জন্য আনুষঙ্গিক খরচের ভার বহনই বা কতটা প্রয়োজনীয় পার্টি কংগ্রেসের আগে এই প্রশ্নই মাথা চাড়া দিচ্ছে সিপিএমে। শীর্ষ নেতারা মাটি থেকে অনেক উপরে অবস্থান করছেন এমন ‘ভুল বার্তা’ই নিচু তলায় যাওয়ার আশঙ্কায় দলের একাংশ। তাদের আরও বক্তব্য, আমন্ত্রিত হয়ে বিদেশ গেলে যাতায়াত এবং থাকার খরচ উদ্যোক্তারাই দেন। কিন্তু অনেক সময়েই কেউ কেউ নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে একটু বেশি সময় কাটিয়ে আসেন। যার খরচ তাঁদের নিজেদের উদ্যোগে ‘জোগাড়’ করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো দু’টি রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমের কাছে এখন সেটা প্রশ্নাতীত নয়। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, “এমন নয় যে, বিদেশ যাওয়া নিয়ে দলে কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু শুদ্ধকরণ এবং আদর্শ কর্মী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যখন কর্মীদের নতুন করে প্রশিক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময়ে সকলেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের বিষয়ে একটু সচেতন হলে ভাল হত।”
দলের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান এবং পলিটব্যুরো সদস্য ইয়েচুরি অবশ্য বলছেন, “যাঁরা বিদেশ গিয়েছেন, পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই গিয়েছেন। এবং আমন্ত্রণ পেয়ে তা রক্ষা করতে গিয়েছেন।” কমিউনিস্টরা বরাবরই আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলায় তাঁরা আস্থা রাখেন। কিন্তু দলের একাংশের মতে, এই তথ্য-বিপ্লবের যুগে ঘরে বসেই বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব। দেশে ‘সঙ্কটাপন্ন’ দলের নেতাদের বিদেশে গিয়ে বক্তৃতার কী অর্থ, সে প্রশ্ন তুলছে এই অংশ। ‘ইন্টারন্যাশনাল মিটিং অফ দ্য কমিউনিস্ট অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টিজ (আইএমসিডব্লিউপি)’ শীর্ষক সম্মেলনে আগামী ৯-১১ ডিসেম্বর আথেন্সে আমন্ত্রণ আছে সিপিএমের। এই ধরনের কর্মসূচি এ দেশে সিপিএমের কোন উপকারে আসছে, পার্টি কংগ্রেসের আগে দলের মধ্যেই সেই প্রশ্নও উঠছে। ইয়েচুরি অবশ্য রাজ্যসভার সাংসদ (এবং বামফ্রন্টের দলনেতা) হওয়ায় সংসদীয় কিছু কর্মসূচিতে তাঁকে মাঝেমধ্যে বিদেশে যেতে হয়। যে ‘সুবিধা’ বাকি পলিটব্যুরো সদস্যদের নেই। কেরলে দল ক্ষমতায় থাকাকালীন দুই পলিটব্যুরো সদস্য রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন উপসাগরীয় দেশগুলিতে পাড়ি দিতেন দলের তহবিল সংগ্রহে এমন একটা বিতর্ক আছে।
তুলনায় এই বিতর্ক থেকে মুক্ত আলিমুদ্দিন। পলিটব্যুরোয় বঙ্গ সিপিএমের প্রতিনিধি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন, বিমান বসুদের ইদানীং কেউ বিদেশে ডাকে না। তাঁরা যানও না। তাঁরা বরং ‘সঙ্কটকালে’ জেলায় জেলায় ‘আক্রমণ’ সামলানোয় বেশি মনযোগী!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.