|
|
|
|
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত রাজারহাট |
পূর্ণেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পূর্ণেন্দু বসুর বিরুদ্ধে তাঁর কাছেই অভিযোগ জমা পড়ল। অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকেও। অভিযোগকারী তৃণমূলেরই একাংশ। অভিযোগের বিষয়রাজারহাটে সিন্ডিকেট-ব্যবসার জেরে খুন এবং অন্যান্য সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু সে ব্যাপারে ‘নিষ্ক্রিয়’! মুকুলবাবু বিষয়টি নিয়ে পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন। পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।
|
পূর্ণেন্দু বসু |
পাশাপাশি, মঙ্গলবার পূর্ণেন্দুবাবু এবং তাঁর অনুগামীদের নামে জেলা তৃণমূলের কাছেও দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই অভিযোগ জানিয়েছেন রাজারহাটের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। পাল্টা অভিযোগ উঠেছে রাজারহাট টাউন তৃণমূলের সভাপতি জয়ন্ত দেবনাথের বিরুদ্ধেও। এ দিন মধ্যমগ্রামে জেলার তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠকে ওই অভিযোগগুলি নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা নেতৃত্ব সাফ জানান, কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য নিয়েও সমালোচনা হয়। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ পরে বলেন, “দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে কেষ্টপুর ও রাজারহাটের ঘটনা নিয়ে ৩ ডিসেম্বর জেলা অফিসে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু, রাজারহাট টাউন তৃণমূলের সভাপতি জয়ন্ত দেবনাথ, এলাকার তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার-সহ জেলা নেতৃত্বও থাকবেন। সেখানেই এই পরিস্থিতির শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।”
তৃণমূল নেতা স্বপন মণ্ডল রবিবার কেষ্টপুরে খুন হওয়ার পরে রাজারহাটের কোটি কোটি টাকার সিন্ডিকেট-ব্যবসার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের পর থেকে রাজারহাট-কেষ্টপুর ও সংলগ্ন এলাকায় প্রোমোটারি, সিন্ডিকেট-ব্যবসা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য পক্ষ। পূর্ণেন্দু-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, ভোটের সময় থেকেই কেষ্টপুরের লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন একটি বিশাল অনুষ্ঠান বাড়ির একটি তলা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। যার ভাড়া দৈনিক কয়েক হাজার টাকা। অভিযোগ, এখনও সেই বাড়ি থেকেই তৃণমূলের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আরও অভিযোগ, ওই বাড়িতেই কয়েক দিন আগে পূর্ণেন্দুবাবুর কাছে গিয়েছিলেন স্বপনবাবু। সঙ্গে ছিলেন রণজিৎ রায় নামে আর এক তৃণমূল কর্মী। স্বপনবাবুর খুনের সময় যিনি গুলিবিদ্ধ হন। পূর্ণেন্দুবাবুর কাছে যাওয়ার পর স্বপনবাবুকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। সোমবার স্বপনবাবুর দেহ নিয়ে মিছিলের সময় এই অভিযোগে ক্ষোভও দেখান তৃণমূল কর্মীরা। প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যাঁকে দলের ‘সক্রিয় কর্মী’ বলছেন, সেই স্বপনবাবু খুন হওয়ার পরে পূর্ণেন্দুবাবু একবারও ওই এলাকায় গেলেন না কেন? বস্তুত, ওই ঘটনার পর পূর্ণেন্দুবাবু বলেছিলেন, “যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর অতীতটাও খতিয়ে দেখা উচিত!” দাসপাড়া এলাকায় পুকুর ভরাট, রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় অবৈধ বাড়ি নির্মাণ-সহ একাধিক ঘটনা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য এ দিন এ সব বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ‘দাবি’, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় তিনি কিছুই করেন না। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুখ’ হিসেবেই তিনি এলাকায় কাজ করেন। সেখানে নিচু তলা থেকে উপর তলা পর্যন্ত কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা চলছে। আগেও হত, এখনও হচ্ছে। শুধু মানুষগুলি বদলে গিয়েছে। এ সবই মুখ্যমন্ত্রী জানেন। এমনকী, খুনের ঘটনা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিশের রিপোর্ট জমা পড়েছে।
পূর্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে আরও জানা গিয়েছে, স্থানীয় বিষয় বলেই তিনি স্বপনবাবু খুন হওয়ার পরে ঘটনাস্থলে যাননি। এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতেও তিনি চান না। তাঁকে নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেও কিছু বলতে চান না। পূর্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ ওই মহলের দাবি, কাজই তাঁর ‘অস্ত্র’। সেটাই তিনি করে যাচ্ছেন।
জয়ন্ত-গোষ্ঠীর নামেও উঠেছে পাল্টা অভিযোগ। তার মধ্যে রয়েছে, কেষ্টপুর খালের পাশে সেচ দফতরের জমিতে স্থানীয় ক্লাবের হয়ে বস্তি ভাড়া দেওয়া, সিন্ডিকেট-ব্যবসা, কেষ্টপুর মোড়ে ভিআইপি রোডের পাশে অবৈধ দোকান বসানো। জয়ন্ত-গোষ্ঠীর একাংশের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে তোলাবাজি-সহ নানা ধরনের সমাজবিরোধী কাজকর্মের অভিযোগও রয়েছে। তবে এ সব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়ন্তবাবুর প্রতিক্রিয়া, “প্রশাসনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। স্বপনের খুনিরা গ্রেফতার হলেই সবটা জানা যাবে।” |
|
|
|
|
|