যে লাটাগুড়ির হাত ধরে ডুয়ার্সে পর্যটনের সূত্রপাত হয়েছিল, সেটাই এ বার বাতিল করতে চলেছেন উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বক্সা ও লাগোয়া এলাকার পর্যটনে নতুন মডেলে কাজের পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। নয়া ওই মডেলে ডুয়ার্সের পরিবেশ, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্রকে ধরে রেখে পর্যটন বিকাশের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল জানান, যে পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে তা পরিবেশ বান্ধব তো বটেই, বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে। কারণ, গাইড থেকে শুরু করে ছোট দোকানদারদেরও তাতে সামিল করার কাজ শুরু হয়েছে। সংগঠনের সহ-সম্পাদক সৌমিত্র কুণ্ডু, দীপক গুপ্তার কথায়, “পরিবেশ না বাঁচলে ডুয়ার্সের পর্যটন বাঁচবে না। তা মাথায় রেখেই কাজে নামা হয়েছে। আশা করি, নয়া মডেলে পর্যটকেরাও স্বস্তি পাবেন।” পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে লাটাগুড়িকে কেন্দ্র করে ডুয়ার্সে প্রথম পর্যটন গড়ে তোলা হলেও এখন পরিবেশ প্রেমী বেশির ভাগ পর্যটকই লাটাগুড়িকে এড়িয়ে চলেন। কেননা, গরুমারা অভয়ারণ্য লাগোয়া এই এলাকায় পরিবেশ ছাড়া অন্য সমস্ত বিষয়ই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে বহু পর্যটকের অভিযোগ। এক সময়ে লাটাগুড়িতে জাতীয় সড়কের দু’পাশে ছিল ঘন জঙ্গল। এই এলাকায় পর্যটনকে উৎসাহ দেওয়ার পরে এখন সবুজ খুঁজে পাওয়াই কঠিন। সবচেয়ে বড় দৃষ্টিকটূ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহুরে মডেলের নানা কংক্রিটের রিসর্ট। গোটা এলাকায় রিসর্টের ভিড়ে ভেঙে পড়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। রাস্তার দু’ধারে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান। যেখানে খোলামেলা ভাবে বিক্রি হচ্ছে মদ। বেশ কিছু রিসর্টে দেহব্যবসা চলছে বলেও অভিযোগ পৌঁছেছে পুলিশের কাছে। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই পর্যটন কেন্দ্রটি নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকেও নানা আপত্তি তোলা হয়েছে। ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও অনেকেই মনে করেন, লাটাগুড়ি মডেলে হাঁটলে ডুয়ার্সের পর্যটনকে রক্ষ করা যাবে না। সেই জন্য বক্সা ও লাগোয়া এলাকায় পরিবেশ বান্ধব পর্যটন গড়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। নয়া মডেলে পুরো ডুয়ার্সকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিচার করে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পূর্ব ডুয়ার্স ভাবে পড়েছে বক্সা ও লাগোয়া এলাকা। মধ্য ডুয়ার্সে পড়েছে মাদারিহাট, টোটোপাড়া, কোদালবস্তি ও লাগোয়া এলাকা। পশ্চিম ডুয়ার্সে পড়েছে লাটাগুড়ি, রামসাই ও ধূপঝোরার মতো এলাকা। ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন আপাতত পূর্ব ডুয়ার্সের জয়ন্তী, সান্তালাবাড়ি, রায়মাটাং, বক্সা দূর্গ, আদমা বস্তির মতো এলাকায় পর্যটন গনে তুলতে পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনায় রিসর্ট নয়, হোম স্টে কিংবা ভিলেজ ট্যুরিজমকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। পর্যটকেরা যে এই এলাকার জঙ্গল উপভোগ করতেই আসেন সে কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানোর কাজ চলছে। তাতে জঙ্গলে গাছ কাটা বন্ধ হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, এখন ওই এলাকায় পর্যটন ব্যবসা চলছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। নয়া মডেলে সেগুলিকে একসূত্রে বাঁধা হবে। প্রতিটি এলাকার নিজস্ব পরিচিত গড়ে তোলা হবে যাতে পর্যটকদের কাছে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব পরিচিতি তুলে ধরা যায়। |