দু’টি খনিকে খোলামুখ করতে বাধা শ্রমিকদের
সিএল দু’টি ভূগর্ভস্থ খনিকে খোলামুখ খনিতে পরিণত করে উৎপাদন চালু করতে চাইলেও বাধা দিচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, এতে এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে পড়তে পারেন। এই টানাপোড়েনে ইসিএলের মতো রুগ্ণ সরকারি সংস্থার বিআইএফআর থেকে বেরনো নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ইসিএল সূত্রের খবর, কুনস্তরিয়া এরিয়ার নর্থ সিহারসোল ও সাতগ্রাম এরিয়ার মিঠাপুর কোলিয়ারিতে জল ঢুকে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে কয়লা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। শ্রমিক-কর্মীরাও নীচে নামতে পারছেন না। অথচ দু’টি খনিতেই প্রচুর উন্নত মানের কয়লা আছে। খননকার্য বন্ধ থাকায় তা তোলা যাচ্ছে না। ইসিএলের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতির অঙ্ক লাফিয়ে বাড়ছে। ওই কয়লা তুলতে পারলে আর্থিক সুরাহা হবে। সংস্থাকে বিআইএফআর থেকে বের করে আনার পথও মসৃণ হবে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরী সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “আমরা ওই মজুত কয়লা তুলে নিতে চাই। তাই ওই খনি দু’টিকে খোলামুখ খনিতে রূপান্তরিত করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, খনি দু’টিতে কী ভাবে জল ঢুকল? ইসিএল তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি কেন? জল বের করার পরিবর্তে কেন খোলামুখ খনি করার কথা ভাবা হচ্ছে? নীলাদ্রিবাবুর ব্যাখ্যা, এই দুই খনির আশপাশের এলাকায় প্রচুর অবৈধ খাদান আছে। চোরেরা কুয়োখাদ বানিয়ে সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ভূগর্ভস্থ কয়লা তুলছে। সেই সুড়ঙ্গগুলি ইসিএলের বৈধ খনির সঙ্গে মিশেছে। বৃষ্টির জল ওই সব কুয়োখাদ দিয়ে সুড়ঙ্গ মারফত পৌঁছে গিয়েছে বৈধ খনির ভিতরে। অবৈধ খাদানের সুড়ঙ্গপথ কার্যত মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকায় জল ঢোকা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পাম্পের সাহায্যেও জল পুরোপুরি বের করা যাচ্ছে না। সে কারণেই নিরাপত্তার কথা ভেবে শ্রমিকদের নীচে নামানো হচ্ছে না। কয়লা উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় উন্নত মানের কয়লা তুলতেই খোলামুখ খনি করার কথা ভাবা হচ্ছে।
শ্রমিক নেতাদের পাল্টা যুক্তি, খোলামুখ খনি বানাতে হলে অনেকটা এলাকা জুড়ে পুকুরের মতো খনন করতে হয়। তার জন্য আশপাশের গ্রাম ও বসতি এলাকা খালি করতে হবে। গৃহহীন হবেন অনেকে। তাঁদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না হলে বাসিন্দারা বিপদে পড়বেন। আইএনটিইউসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক প্রভাত গোস্বামী বলেন, “এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি ইসিএল। তবে শুনেছি ওরা এ রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা মানুষের স্বার্থে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করব।” সিটু অনুমোদিত খনি শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিবেক হোমচৌধুরীও বলেন, “ইসিএলের এই একতরফা সিদ্ধান্ত মানব না। এর বিরোধিতায় নামব।” ইসিএলের পাঁচটি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক তথা রাজ্যসভার সদস্য রামচন্দ্র সিংহের অভিযোগ, এই ভাবে আসলে ভূর্গস্থ খনিগুলিকে খোলামুখ করে তুলে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার ছক কষেছে ইসিএল। তাতে সঙ্কট বাড়বে। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের সর্বাত্মক বিরোধিতায় নামবেন বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
নীলাদ্রিবাবু অবশ্য দাবি করেন, শ্রমিক সংগনগুলির এই আশঙ্কা অমূলক। খোলামুখ খনি বানিয়ে কয়লা তোলা হলে আখেরে লাভই হবে। কাজোড়া এরিয়ার মাধবপুর খনিটিতেও একই সমস্যা রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা খনির উপরে নালা কাটতে দেননি। কোয়ারডি টিরাট খনিতেও একই সমস্যা। সেখানে ৮টি পাম্পের সাহায্যে জল বের করা হচ্ছে। জে কে নগর এসডিএল সেকশন, জেমাহারি খনি ও ভানোড়া ওয়েস্ট ব্লকের খনিগুলিও এই সমস্যায় ভুগছে। জমে থাকা জল পাম্পের সাহায্যে বের করা হচ্ছে। তবে মাসখানেকের মধ্যে সেগুলি চালু করা যাবে বলে কারিগরি সচিব আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.