|
কলকাতার নামাবলি |
পার্ক স্ট্রিট কেন পার্ক স্ট্রিট? বালি জমে জমে বালিগঞ্জ, সত্যিই?
আর ধর্মতলা? কোন ধর্ম? কার ধর্ম? কলকাতার নানা জায়গার
নামের রহস্য ভেদ করেছেন গৌতম বসুমল্লিক |
|
পার্ক স্ট্রিট |
পলাশির যুদ্ধের পরে কলকাতা যখন গড়ে উঠছে, সেই সময়ে চৌরঙ্গি ও তার আশপাশের এলাকা নিয়ে সাহেবপাড়া তৈরি হয়। পার্ক স্ট্রিট তৈরি হয়েছিল ১৭৬২-তে। পুরনো নাম ছিল Burying Ground Road বা ‘গোরস্তান কা রাস্তা’। কারণ, ওই রাস্তায় একাধিক কবরখানা ছিল। এখন যেখানে ‘লরেটো হাউস’ (মিডলটন রো), সেখানে ছিল এক বিশাল বাগানবাড়ি। ওই বাগানবাড়িতে থেকেছেন বাংলার গভর্নর হেনরি ভানসিটার্ট, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এলাইজা ইম্পে, বিশপ হিবার প্রমুখ। বিচারপতি ইম্পে ওই বাগানে হরিণ পুষতেন। তাই লোকমুখে জায়গাটির নাম হয় ডিয়ার পার্ক। পরে ওই থেকেই রাস্তার নাম পার্ক স্ট্রিট। এই রাস্তার উপরেই ছিল সাহেবি-নাট্যশালা সাঁ সুসি থিয়েটার। সেখানে এখন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। আর আছে এশিয়াটিক সোসাইটি। ভারতীয় প্রদর্শশালা (জাদুঘর)-র সূচনা হয়েছিল এশিয়াটিক সোসাইটির বাড়িতেই। |
|
|
হাতিবাগান |
প্রচলিত তত্ত্ব হল, নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার দ্বিতীয় বার কলকাতা আক্রমণের সময়ে (ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭) সিরাজের ‘চতুরঙ্গ’ বাহিনীতে (পদাতিক, অশ্বারোহী, কামানবাহী ও হস্তী-বাহিনী) ছিল গোটা পঞ্চাশ হাতি। তখন সার্কুলার রোড তৈরি হয়নি, ওই জায়গায় ছিল ‘মারহাট্টা ডিচ’ নামে একটি আধখোঁড়া খাল। নবাব ওই খাল পেরিয়ে শহরে ঢোকার পরে তাঁর হাতি-বাহিনীকে নাকি ওই জায়গার এক বাগানে রাখা হয়েছিল। তাই লোকমুখে পরে সেই জায়গার নাম হয় হাতিবাগান। আবার কেউ কেউ বলেন, স্থানীয় ‘হাতি’ পদবিধারী এক ধনী পরিবারের বাগান থেকে ওই নাম। তবে হাতিবাগান কিন্তু অন্য একটি কারণেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানি বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল হাতিবাগান বাজার (ডিসেম্বর ১৯৪২)। |
|
|
চিৎপুর |
লালবাজারের পূর্ব দিকে যে সরু ট্রামলাইন-পাতা রাস্তাটা চলে গেছে, সেটাই চিৎপুর রোড। খুব পুরনো রাস্তা। আদি পথটি হালিশহর থেকে শুরু হয়েছিল, শেষ চৌরঙ্গির জঙ্গলের কাছে। হ্যাঁ, চৌরঙ্গিতে তখন রীতিমত জঙ্গল। কাশীপুর এলাকায় চিৎপুর নামে একটা জায়গা ছিল । সেই থেকেই রাস্তার নাম। নামটা নাকি এসেছে ‘আদি চিত্তেশ্বরী’ নামক দুর্গামন্দির থেকে। শোনা যায়, চিতু নামে এক ডাকাত সে মন্দিরে পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে যেত। চিতু চিত্তেশ্বরী চিৎপুর। লালবাজারের পাশের রাস্তা, ডাকাতের নাম থেকে! |
|
|
বালিগঞ্জ |
সাবেক বালিগঞ্জ এলাকা ছিল কালীঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। আগে ভাগীরথী বা গঙ্গার মূল স্রোত বইত এখনকার আদিগঙ্গা দিয়ে। কিন্তু প্রচুর পলি এবং বালি জমে সেই নদীখাত আস্তে আস্তে মজে যায়। তখন ভাগীরথী তার অন্য এক শাখানদী সরস্বতীর পুরনো খাত ধরে বইতে আরম্ভ করে। সেই বালি পড়ে মজে যাওয়া আদিগঙ্গার খাতের কোনও এক জায়গায় কোনও এক সময়ে গড়ে উঠেছিল বড় এক বাজার বা গঞ্জ।
বালির উপর বসা গঞ্জ লোকমুখে হয়ে গেল ‘বালিগঞ্জ’। ওই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গ্রামটিও পরিচিত হল ওই নামে। |
|
|
ধর্মতলা |
কলকাতা বললেই ধর্মতলা। চৌরঙ্গি থেকে যে রাস্তাটি সোজা সার্কুলার রোডে গিয়ে মিশেছে তার নাম ছিল ধর্মতলা স্ট্রিট। এখনকার নাম লেনিন সরণি। নামটি এসেছে ওই এলাকার একটি ধর্ম ঠাকুরের থান থেকে। ধর্ম ঠাকুর বাংলার প্রাচীন লৌকিক দেবতা। সাবেক জানবাজার স্ট্রিটে (এখনকার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড) তালতলার কাছে ধর্ম ঠাকুরের থানটি এখনও আছে। কিন্তু এখন আর ধর্ম ঠাকুরের থান বা মন্দির বললে কেউ চিনবে না। বরং শীতলা মন্দির নামেই পরিচিত সেটি। |
|
|