হাঁপ ছেড়ে বাছুন
শীতকালটায় অনেকেই ঘন ঘন ভোগেন। সর্দি-কাশি লেগেই থাকে, সর্দিটা বসে যায়, কেশে-কেশেও যেন কফ বের হতে চায় না। রাতে কাশি, সাঁই সাঁই আওয়াজ। কারও কারও সেই সঙ্গে ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ। ঠান্ডা লেগে যেন এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা।
এক মিনিট, অসুখটা কিন্তু কেবল ঠান্ডা লাগা না-ও হতে পারে। রাইনাইটিস, অ্যাজমা, এই সব অসুখেও অমন সব লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষ করে কলকাতার মতো শহরে, যেখানে দূষণ খুব বেশি, সেখানে যেটাকে আমরা ‘সর্দি লাগা’ বলে ধরে নিই সেটা আসলে রাইনাইটিস নাকের ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ। আর অ্যাজমা, বা হাঁপানি, হল শ্বাসনালীর প্রদাহ। নাক থেকে ফুসফুসে যায় যে নালী, তার সমস্যা হল অ্যাজমা। শ্বাসনালী যখন সংকুচিত হয়, তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হাওয়া চলাচলকে শরীর প্রতিরোধ করতে চায়। তখন সাঁই সাঁই শব্দ বেড়ে যায়। রাইনাইটিস থাকলে বেড়ে যায় অ্যাজমা, আবার অ্যাজমা ডেকে আনে রাইনাইটিসকে। অনেকের মধ্যে দুটোই রয়েছে, তাদের কিন্তু দুটোকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, না হলে কোনওটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে না। দুটোর চিকিৎসা পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। যাঁদের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তাঁদের ‘ঠান্ডা লাগা’ আদতে হাঁপানি কি না, সে বিষয়ে আর একটু সতর্ক হতে হবে। বার বার ঠান্ডা লাগা, কাশি, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, সাঁইসাঁই আওয়াজ এ জাতীয় উপসর্গ হলে কেবল জ্বর-কাশির ওষুধ না খেয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে।
শীতকালে হাঁপানির প্রকোপ একটু বেড়ে যায়। কারণ এই সময়ে চারিদিক শুকনো বলে হাওয়ায় ধুলো থাকে বেশি, শ্বাসনালীও অনেকটা শুষ্ক থাকে। আর ধুলোর সঙ্গে মেশা ‘অ্যালার্জেন’ (যা অ্যালার্জির কারণ) কণাগুলিতে চট করে প্রতিক্রিয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে ঋতু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, ভাইরাস জ্বর। এই সব ক’টাই হাঁপানিকে বাড়ায়।
হাঁপানি কেন হয়, আজও কেউ জানে না। যা জানা গিয়েছে, তা হল হাঁপানি কী করে বেড়ে যায়, কী কী কারণ তাকে ‘ট্রিগার’ করে। তেমনই, হাঁপানি সারানো যায় না। কেবল জানা রয়েছে, কী করে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, যাতে বাড়াবাড়ি না হয়। ছেলেবেলায় এক রকম অ্যাজমা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর বয়সের পর সেরে যায়। কিন্তু পঞ্চাশ পেরনোর পর যাঁদের হাঁপানির কষ্ট শুরু হয়, তাঁদের হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখার চিকিৎসা চালাতে হবে। ব্লাড প্রেশার বা ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে যেমন নিয়মিত ওষুধ খেয়ে সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, সারানো যায় না, অ্যাজমাও ঠিক তাই।
অ্যাজমার ওষুধ হল স্টেরয়েড, যা ‘ইনহেলার’ দিয়ে টানতে হয়। অ্যাজমা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতেই হবে, এর কোনও ব্যতিক্রম সম্ভব নয়।
অনেকেই ‘স্টেরয়েড’ কথাটাকে ভয় পান, ইনহেলার এড়িয়ে যেতে চান, নিয়মিত ব্যবহার করতে চান না। অনেক রোগী বলেন, ‘আমার ইনহেলার ডিপেনডেন্স এসে যাবে, ইনহেলার ছাড়া বাঁচতে পারব না।’ কেউ বলেন, ‘স্টেরয়েডের অনেক সাইড এফেক্টস।’ এগুলো সবই ভুল ধারণা। ইনহেলার জিনিসটা এমন ভাবে তৈরি, যে স্টেরয়েড ফুসফুসের ভিতরেই থাকে, তা থেকে রক্তে মেশে না। খুব হাই ডোজ-এ দিলেও তার প্রায় সবটাই থেকে যায় ফুসফুসের ভিতরে। ব্যথা কমাতে যে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তা রক্তে মিশে যায়। তা থেকে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। ইনহেলার দিয়ে স্টেরয়েড টানলে তার কোনওটারই প্রশ্ন ওঠে না। ‘ডিপেন্ডেন্স’-এর ধারণাটাও ভুল। অ্যাজমা হয়ে থাকলে ইনহেলার-নির্ভরতাই ঠিক, ইনহেলার ব্যবহার না করার চিন্তাটাই ভুল চিন্তা। যাঁরা বলেন, ‘ইনহেলার ধরলে ছাড়তে পারব না,’ তাঁদের বুঝতে হবে যে তাঁদের ইনহেলার ছাড়ার কথা নয়।
বরং বোঝা দরকার, দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাজমার চিকিৎসা যদি ঠিক মতো না হয়ে থাকে, তা হলে কী হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘ঠান্ডা লেগেছে’ বলে অ্যান্টিবায়োটিকস খেয়ে তখনকার মতো সমস্যা কমিয়েছেন, কিংবা নানা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সত্ত্বেও ইনহেলার নিয়মিত নেননি। এমন ভাবে হয়তো ১০-১২ বছর অ্যাজমার ঠিক চিকিৎসা হয়নি। এই সব ক্ষেত্রে প্রদাহ প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে যায়, শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়, তাকে আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকলে বার বার অ্যাসথালিন জাতীয় ‘এস ও এস’ ইনহেলার নিতে হবে না, রাতে কাশতে কাশতে ঘুম ভাঙবে না, বারবার ঠান্ডা লাগাও কমে যাবে। প্রাণায়াম, মর্নিং ওয়াক, ব্যায়াম করলে অবশ্যই ভাল, কিন্তু তা ইনহেলারের জায়গা নিতে পারে না।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের টিপস
•• ঠান্ডা লাগাবেন না। স্নান করা চাই ঈষদুষ্ণ জলে। এত বেশি গরম জামা পরবেন না, যাতে ভিতরে ঘাম হয়। বরং একটার উপর একটা হালকা গরম জামা পরুন, প্রয়োজন বুঝে খুলে ফেলবেন বা পরে ফেলবেন।
•• তাপমাত্রার হেরফের চলবে না। যদি গরমকালে এয়ারকন্ডিশনড গাড়িতে চড়েন তা হলে গাড়ি থেকে নামারপাঁচ মিনিট আগে এ সি বন্ধ করে দেবেন। ঠান্ডা থেকে গরম দ্রুত বদল হলে সমস্যা শুরু হতে পারে।
••স্মোকিং বন্ধ। সিগারেট খেলে অ্যাজমা হয় কি না জানা নেই, কিন্তু অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের চিকিৎসা কাজ করে না সিগারেট খেলে। পুরোপুরি বন্ধ করা চাই।
•• বন্ধ বিটা ব্লকার। ওই জাতীয় সব ওষুধই বন্ধ, এমনকী চোখের ড্রপেও চলবে না।
••ওষুধ চালিয়ে চান ইনহেলার নেওয়া বন্ধ করবেন না। গর্ভবতী হলে অনেক মেয়ে তা বন্ধ করে দেন। এটা ভুল। ইনহেলার নিলে সন্তানের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং না নিলে, রক্তে অক্সিজেন কম হতে পারে। তাতে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.