|
|
|
|
|
দৈত্যের নাম যে ডায়েট!! |
ওজন ও ভোজনের গভীর সম্পর্ক, সবাই জানে। কিন্তু ডায়েট কন্ট্রোল-এর কথা শুনলেই
গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। আর তখনই খুঁজে নিই ডায়েট এড়ানোর বাহানা। ফিরিস্তি ও খণ্ডন। |
পকেট যে একেবারে খাঁ খাঁ |
আসলে ডায়েট করার বা হেলথ সেন্টারে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছাই আপনার নেই। ‘এ শহরে ৩,০০০ টাকার জিম যেমন আছে, মাসে ১০০-১৫০ টাকার হেলথ ক্লাবও অঢেল। সাধ্য মতো একটা বেছে নিলেই হল। আর বাড়িতে হাজার হাজার টাকার সরঞ্জাম কিনে মাল্টিজিম না বানালে ওজন ঝরবে না, কে বলেছে? ডাম্বেলের বদলি হতেই পারে দু’লিটারের জলের বোতল, ভারী টুলের ওপর ছোট টুল রেখে একটা ঘরোয়া স্টেপবক্স বানিয়ে ফেলাই যায়।’ বলছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়। আর হেলথ ফুড মানেই প্যাকেট করা দামী খাবার নয়। এক বাক্স চকলেট বা মশলাদার চিপসের প্যাকেটের থেকে সবুজ একটা আপেল কিন্তু অনেক স্বাস্থ্যকর, এবং সস্তা। বিদেশে তো এখন কিছু জাঙ্ক ফুডের ওপর ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ বসানো হচ্ছে। অর্থাৎ, যত অস্বাস্থ্যকর বার্গার আর হট ডগ, তার দামও তত বেশি। আর এখন শরীরচর্চার খরচ বাঁচাতে গিয়ে পরে যদি একটা বড় অসুখ হয়? তখন চিকিৎসা বাবদ খরচটা ডায়েটিংয়ের থেকে কিন্তু অনেক বেশি পড়বে।
|
টাইম-এর চাপে চ্যাপ্টা |
ব্যস্ত জীবনে জিমের জন্য ঘণ্টা খানেক বের করা, হয়তো খুব শক্ত। সে ক্ষেত্রে কাজের ফাঁকেই ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। লাঞ্চব্রেকে সিঁড়ি দিয়ে বার কয়েক ওঠা-নামা করুন। বাড়ি ফেরার সময় কিছুটা রাস্তা অন্তত হেঁটে ফিরুন। আর আজ ভীষণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে, এই অজুহাতে প্রচুর জাঙ্ক ফুড খেয়ে নেবেন না। এতে আপনারই এনার্জি ঝিমিয়ে আসবে, কাজে উৎসাহ পাবেন না, ঘুম পাবে। মুচমুচে কিছু খাওয়ার বদলে ডায়েট মেপে ফল বা স্যালাড খান। দেখবেন অনেক চনমনে, সতেজ আছেন। মাথাও অনেক পরিষ্কার কাজ করবে। খাওয়ার সময়টুকুও বাঁচবে।
|
বংশগত ঝঞ্ঝাট |
পেটের চর্বি খুব সহজেই ঝরিয়ে ফেলা যায়, কিন্তু শরীরের নিম্নাংশে যে চর্বি জমে, তা যেতে সময় নেয়। ওটাই হল গাইনয়েড বা জেনেটিক ফ্যাট। ডায়েট ও শরীরচর্চার রুটিন মানলে, ওই চর্বিও ঝরবে। তবে একটু বেশি সময় লাগবে। এই মাঝের সময়টুকু ধৈর্য হারালেই মুশকিল। তখনই মনে হবে, দূর, আমার তো ডায়েট করে কোনও লাভই হয় না। তা হলে আর আমি এত কষ্ট করব কেন? এই বাধাটা সম্পূর্ণ মানসিক। তাই দীর্ঘমেয়াদি ডায়েটে থাকার সময় নিজের মনকে বোঝাতেই হবে, ‘সুস্থ থাকতে ওজন ঝরানো আমার একান্ত প্রয়োজন। তাই পৃথিবী রসাতলে গেলেও আমি ডায়েট-চার্ট মানবই।’ এই বিশ্বাসটুকুর ওপর জোরেই অনেকেই দেড় বছরে দশ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে ফেলেছেন। |
|
আমারটা একটু স্লো আঁচে আছে |
একই পরিমাণ খাবার খেয়েও এক জনের শরীরে মেদ জমছে, আর অন্য জন আগের মতোই ছিপছিপে। এই বৈষম্যের কারণ, প্রথম জনের বিপাকের হার কম, অন্য জনের ভীষণ বেশি। বিপাকের হার কম বলে আমি মুটিয়ে যাচ্ছি, এই ভেবে বসে থাকলে চলবে না। ঠিক ডায়েট প্ল্যান, শরীরচর্চার মাধ্যমে বিপাকের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যাদের বিএমআই বা বিপাকের হার কম, তাঁরা বিরতি দিয়ে শরীরচর্চা করুন। এতে ক্যালোরি তাড়াতাড়ি পুড়বেই। ডায়েটিশিয়ান হেনা নাফিসের পরামর্শ, ‘দিনে দু’বার খেলেই বরং মোটা হয়ে যাবেন। সারা দিনে অল্প অল্প করে, অন্তত ছ’সাত বার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতেও মেটাবলিজম বেশ বাড়ে।’
|
দুঃখে খাওয়াটাই মুখ্য |
|
ডিপ্রেশন-এ ভুগলে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘চকলেট, আইসক্রিম হল মুড এলিভেটর, হাই-ক্যালোরি ফুড। এ দিকে ডিপ্রেশনের সময় মেটাবলিজম কম হয়, ওজনও বাড়ে তাড়াতাড়ি। তাই মন খারাপ হলেই একটু সজাগ থাকুন। ভাল থাকার অন্য উপায়ও তো আছে। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, সিনেমা দেখুন। আর হাতের কাছে চিপস বা ভাজাভুজি একেবারেই রাখবেন না’ মন ভাল করতে শরীরচর্চাও দারুণ কাজে দেয়। কুড়ি মিনিট ঘাম ঝরালেই এন্ডরফিন নামের ফিল গুড হরমোনটি বেরোয়। তখন শারীরবৃত্তীয় নিয়মেই আপনার অবসাদ কেটে যাবে, আবার হাসি-খুশি-চনমনে হয়ে উঠবেন।
|
আনন্দের ফুডপাথ |
পুজোর সময়, উৎসবে-পার্বণে, মনটা কোনও কারণে খুশি-খুশি হলেও সেটা উদ্যাপন করতে, খাওয়াটা বেশি হয়ে যায়। আর এ ধরণের চর্ব্য-চোষ্য, মানে রোল, চাউমিন, বিরিয়ানি ইত্যাদি প্রসেসড ফুড থেকে জমা ক্যালোরি যেতে অনেক সময় নেয়। দরকার একটু সংযম। ভাল আছেন বলেই গপাগপ খেয়ে মোটা হতে যাবেন কেন? পার্টিতে যাওয়ার আগে অল্প করে কিছু খেয়ে যান। রেস্তরাঁয় গিয়ে স্যুপ, স্যালাড, মোমো জাতীয় হালকা খাবার অর্ডার দিন। আর প্রচুর জল খান। তা হলেই বাড়তি মেদ জমবে না।
|
২৪ ঘন্টা চেটেপুটে |
ডায়েট করা মানে না খেয়ে থাকা নয়। বরং, শরীর ও ওজন অনুযায়ী, ক্যালোরি মেপে, ঠিক খাবারটা খাওয়া। তাতে পছন্দের খাবার হয়তো রোজ পাবেন না। ‘কিন্তু অল্প-স্বল্প ছাড় তো দেওয়াই যায়। ধরুন, এক দিন ডিনারটা একটু ভারী হয়ে গেল, সে ক্ষেত্রে পরের দিন দুপুরের খাবারটা একটু হালকা খান। এই সাম্যটুকু বজায় রাখলেই হল। তাই বলে সকাল-বিকেল ভাজাভুজি খেলে মুশকিল।’ বলছেন ডায়েটেশিয়ান সুনন্দা ঘোষ। |
|
আয়নায় হাড়গিলেটা কে রে? |
শরীরে অল্প মেদ থাকলে সুন্দর দেখায়, আর ডায়েট করলেই হাড়গিলে রোগা দেখাবে এটা মোটেও কোনও পোক্ত অজুহাত নয়। ক্র্যাশ ডায়েটিং করলে হয়তো অনেক সময় অসুস্থ দেখায়। কিন্তু প্রয়োজন বুঝে ডায়েট বা শরীরচর্চা করলে আপনার শরীর ভাঙবে না, বরং সুস্থ থাকবেন। যাঁরা আপনাকে নাদুস-নুদুস দেখে অভ্যস্ত তাঁরা প্রথমে অবাক হবেন, কিন্তু আপনার নতুন ছিমছাম চেহারা কয়েক দিন থাকলে তাঁরাও ইতিবাচক কথাই বলবেন।
|
কাল সকাল থেকে ঠিক দেখ |
ডায়েটিং প্ল্যানকে নিউ ইয়ার রেজোলিউশন বলে জমিয়ে রাখবেন না। কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই নতুন বছরটা কোনও দিনই আসে না। সে ক্ষেত্রে নিজেকে মোটিভেট করার দায়িত্বটা আপনাকেই নিতে হবে। এক দল বন্ধুর সঙ্গে ডায়েটিং শুরু করুন। এতে অনেক উৎসাহ পাবেন। আজ খেয়ে নিই, কাল থেকে ডায়েট করব, এই আলসেমি ছেড়ে এক্ষুণি ডায়েটিং শুরু করুন। |
|
|
|
|
|