পুস্তক পরিচয় ২...
খুঁড়ে এনেছেন বিস্মৃত বিতর্কের ইতিবৃত্ত
বাঙালির প্রত্নচর্চার আদি পর্বে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ ও বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি কী ভাবে বিতর্কে জড়িয়েছিল তার ইতিবৃত্ত খুঁড়ে এনেছেন প্রবীর মুখোপাধ্যায়। তাঁর ‘বেসরকারি উদ্যোগে বাংলায় প্রথম প্রত্ন-অনুসন্ধান এবং একটি বিতর্ক’ এবং এই সময়-এ (সম্পা: অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) অবশ্যপাঠ্য। বাঁকুড়ার ঢোকড়া শিল্পের বিবর্তন নিয়ে অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটিও উল্লেখ্য। দীর্ঘ ক্রোড়পত্র সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। অশোক উপাধ্যায়ের ‘চিত্তরঞ্জন দাশ: সাময়িকপত্রে প্রকাশিত রচনাপঞ্জি’ মূল্যবান।
সুচিত্রা মিত্রের জীবন ও তথ্যপঞ্জি, গানের তালিকা, তাঁর করা রবীন্দ্রগানের স্বরলিপি নিয়ে হান্ড্রেড মাইলস-এর (ঐশিক দাশগুপ্ত) ‘উৎসব সংখ্যা’টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বয়ান, স্মরণীয় ছবি ছাড়াও আছে সংগীতশিল্পীদের রচনা। পূর্বা দাম লিখেছেন সুচিত্রার কাছে তাঁর শিক্ষণের কথা: ‘প্রতিটি শব্দ প্রতিটি স্বরের ব্যবহার এমনভাবে দেখাতেন, গোটা একটা গান যেন ছবির মতোই মনে গেঁথে যেত।’
‘একটু একটু করে পিছনে হাঁটুন, দেখবেন, চেষ্টা করতে হচ্ছে না, ধীরে ধীরে সব মনে পড়ছে লোকজন, ঘরবাড়ি, গাছপালা, আকার, বর্ণ, গন্ধ, শব্দ, মনখারাপ, মনভোলা, সব সব মনে পড়ছে।’ মণীন্দ্র গুপ্তের আশ্চর্য গদ্য, তাঁর ‘আত্মজীবনী লেখার সংকট’ উলুখড়-এ (সম্পা: অরণি বসু)। সংখ্যাটি সম্পর্কে সম্পাদক জানাচ্ছেন “এবারের বিষয় ‘স্মৃতি’। আমরা বলছি, ‘আত্মকথা/ আত্মজনকথা’।” বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট জনের নতুন-পুরনো লেখার নির্বাচনের ভিতর দিয়ে এই ‘স্মৃতি’ বিষয়টির কাছে পাঠককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।
বাঙলার মুখ-এ (সম্পা: প্রদীপকুমার চক্রবর্তী) বিশেষ রচনাটি অবশ্যপাঠ্য অশোক উপাধ্যায় সঙ্কলিত ‘চিত্তরঞ্জন দাশের অগ্রন্থিত কবিতা ও অন্য রচনা’। লোকসংস্কৃতি ও বিভিন্ন জেলা বিষয়ক মননশীল রচনা। ‘বিবর্ণ রামধনু’ বিভাগে পঞ্চানন ঘোষালের ‘ডায়ারি সাহিত্য’।
দেবযান-এর সম্পাদক রাজদীপ চন্দ্র শর্মা পত্রিকার প্রারম্ভেই জানিয়েছেন: ‘‘আমরা অবশ্যই আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করি, আস্থা রাখি মানবধর্মে। মুক্ত চিন্তা ও স্বচ্ছ মননে আস্থা আমাদের পুরোমাত্রায়। ‘দেবযান’ নামাঙ্কিত এই সাময়িক পত্র তাই মৃত্যুর পূর্বেই মননশীল, জিজ্ঞাসু মানুষের অনন্ত আত্মজিজ্ঞাসা নিবৃত্তির এক পথ হিসেবে দ্যাখা দেবে এই আশা রাখি।”
কবিতীর্থ-এ (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) তিনটি ক্রোড়পত্রের প্রথমটি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, তাতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো-র ‘প্লাতা নদীর ধারে’র অনুবাদ করেছেন রমাপ্রসাদ দে। ‘তবে তো রবীন্দ্রনাথ আশা আছে, তুমি আছো কলকাতা থেকে দূরে গ্রামে/ যেখানে সমস্যা আর সমাধান পাশাপাশি শুয়ে থাকে প্রকৃতি রয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিনয় মজুমদারের কবিতা, আর তাঁকে নিয়ে দ্বিতীয় ক্রোড়পত্রটি। ১৯৬২-তে প্রকাশিত ‘ফিরে এসো, চাকা’র স্বর্ণজয়ন্তী বর্ষে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন শ্রীধর মুখোপাধ্যায়। তৃতীয় ক্রোড়পত্রটি ওরহান পামুক-কে নিয়ে।
শুভশ্রী-র (সম্পা: পুলককুমার সরকার) বিষয় ‘অভিনব সৃষ্টি: বাংলা কথাসাহিত্যে’। ‘বাঁক নেওয়া উপন্যাসের কথা’ প্রসঙ্গে বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্যের মত: ‘ব্যতিক্রমী লেখকের থেকে তাঁদের ব্যতিক্রমী রচনাগুলিরই গুরুত্ব পাওয়া উচিত।’ জগদীশচন্দ্র গুপ্তের ‘অসাধু সিদ্ধার্থ’ থেকে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘হারবার্ট’, এ ধরনের উপন্যাসের আলোচনা ঠাঁই পেয়েছে।
অন্য প্রমা-য় (কল্যাণ মজুমদার) শ্যামলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে ‘ডেকামেরন’-এর ‘ভূমিকা’র অনুবাদ, বোক্কাচ্চ ও ‘ডেকামেরন’ সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন লেখক। এষা দে-র ‘প্রেমের তীর্থযাত্রী শাহজাদা আহমদ’ বা শিশির ঘোষের ‘বাঙালীর শীর্ষারোহণ: এভারেস্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ভিন্ন স্বাদের লেখা।
‘কোনো লেখককে সাম্প্রদায়িক বলার আগে আমরা একটা কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই কোনো প্রকৃত লেখক যখন সাহিত্য রচনা করেন তখন তিনি সাম্প্রদায়িক থাকেন না। তিনি তখন হিন্দু নন, মুসলমান নন, খ্রিস্টান নন। সৃষ্টির সময় তিনি একজন মুক্তমনের মানুষ।’ রমানাথ রায় লিখেছেন তাঁর স্বচ্ছ ও নিজস্ব গদ্যে ‘শরৎচন্দ্র কি সাম্প্রদায়িক’ রচনায়। পুরবৈয়াঁ (সম্পা: বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য পূর্বাণী ঘোষ) ভিন্ন ভাবনায় ঋদ্ধ। যেমন হিরণ মিত্রের ‘সানডে পেইন্টার’। জাহিরুল হাসান ‘স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা’ রচনায় লিখেছেন ‘আমরা কি স্কুলে এরকম ব্যবস্থা করতে পারি না যে এক ধর্মের শিশু অন্য ধর্মের পাঠ গ্রহণ করবে, মুসলমান ছাত্র যদি সংস্কৃত পড়ে তা হলে হিন্দু ছাত্র পড়বে আরবি অথবা ফারসি।’
‘একুশ শতকের প্রথম দশকটি শেষ হতে চলল। দেশকালে পরিবর্তন এসেছে, গল্প কি অপরিবর্তিত থাকতে পারে!’ অলোক রায়ের সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণ এবং মুশায়েরা-র ‘গল্প ও গল্পকার বিশেষ সংখ্যা’য়। বিশিষ্ট কিছু গল্পকারের রচনা নিয়ে এই আলোচনা-সংখ্যাটিতে মীরাতুন নাহার লিখেছেন সেলিনা হোসেন-এর গল্প নিয়ে: ‘জগৎ সংসারে মার খাওয়া মানুষের সঙ্গে তাঁর একাত্মতার উন্মোচন পাঠকের নিঃসাড় হয়ে থাকা চেতনায় চাবুকের আঘাত হানে, যেন নির্বিকার নির্লিপ্ততায়।’
এবং অন্যকথা-য় (প্রধান সম্পাদক: বিশ্বজিৎ ঘোষ জলধি হালদার) পরিবেশ, খাদ্য, নিরাপত্তা, জল, মণিপুরের আন্দোলন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে একগুচ্ছ নিবন্ধ। যেমন ‘জলের নীরস কথা’য় কল্যাণ রুদ্র মাধব বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন ‘স্বাধীনতার ছয় দশক পরেও কলকাতার এক ব্যাপক অংশ সহ রাজ্যের অন্য অনেক শহরে না আছে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী না আছে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা।’ সুবিমল মিশ্র বাদল সরকারকে নিয়ে বিশেষ পর্যালোচনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.