মাওবাদীদের ডাকা দু’দিনের বন্ধের বিরোধিতা করে বলরামপুরে মিছিল করল তৃণমূল। আজ, শনিবার থেকে মাওবাদীরা বন্ধের ডাক দিয়েছে। শুক্রবার বলরামপুর সদরের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করে বাসিন্দাদের কাছে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানালেন। সেই বলরামপুর, যেখানে চলতি মাসে তিন জন তৃণমূল কর্মীকে মাওবাদীরা খুন করেছে।
এ দিন বিকেলে তৃণমূলের শ’দুয়েক কর্মী-সমর্থক বলরামপুরের বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে চকবাজার, স্টেশন রোড, মসজিদ রোড, পুরুলিয়া-জামসেদপুর জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল করেন। মিছিলে ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, তৃণমূল নেতা তথা জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অঘোর হেমব্রম, তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি প্রমুখ। |
সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “আতঙ্কের পরিবেশ কাটাতেই আমরা আজ মিছিল করলাম। এর আগেও ওদের ডাকা বন্ধের বিরোধিতায় মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়ে সাড়া পেয়েছি। এ বারও তাঁদের কাছে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানিয়েছি।” মিছিলের শেষে চকবাজার মোড়ে বন্ধের বিরোধিতা করে একটি পথসভাও করে তৃণমূল। তৃণমূল নেতাদের দাবি, “মাওবাদীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার কিছু যুবককে ওরা ভুল বুঝিয়ে দলে ভিড়িয়েছিল। তাঁরা ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছেন। এলাকার মানুষের সাহায্যেই মাওবাদীদের আমরা এলাকা ছাড়া করব।”
মাওবাদীদের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ বলে পরিচিত আদিবাসী মূলবাসী কমিটি ছেড়ে অনেকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। আদিবাসী মূলবাসী কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অঘোর হেমব্রম অনুগামীদের নিয়ে গড়ে তোলেন জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি। মাও স্কোয়াডে যাওয়া এলাকার ছেলেদের তাঁরা ফিরে আসার জন্য প্রচারও চালান। কিন্তু, নভেম্বরের গোড়া থেকে ফের বলরামপুরে রক্ত ঝরে। গত ৩ নভেম্বর ঘাটবেড়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী জিতু সিংহকে খুন করে মাওবাদীরা পোস্টার দিয়ে গিয়েছিল। ঘাটবেড়ায় সভা করে তৃণমূল মাওবাদীদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়ার পরে ১৪ নভেম্বর রাতে খুনটাঁড় গ্রামে তৃণমূল কর্মী রাজেন সিংহ সর্দারের বাবা অজিত সিংহ সর্দার ও ভাই বাকু সিংহ সর্দারকে খুন করা হয়। ওই রাতেই যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে দুই মাও স্কোয়াড সদস্য নিহত হন। জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেন, দুর্যোধন রাজোয়াড়, আকরি সহিস ও রবি মাণ্ডির মতো মাওবাদী নেতা-নেত্রী থেকে স্কোয়াড সদস্যেরা ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছেন। বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেনজি’র।
এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক থাকল কি না, তা জানা যাবে শনিবার। |